অবশেষে ডাবল সেঞ্চুরির মুখ দেখল পেঁয়াজ।
কয়েক সপ্তাহ ধরে পিয়াজের বাজারে অস্থিরতা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার পিয়াজের দাম কেজি প্রতি ২০০ টাকা গিয়ে ঠেকেছে।
রাজধানীসহ সারা দেশে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেও রাজধানীর কোনো কোনো বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ১৮০ টাকা। দুপুর না গড়াতেই ২০০ টাকা থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হয় দেশি পেঁয়াজ।
কবে নাগাদ পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হবে এ কথার স্পষ্ট উত্তর নেই কোথাও।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
১৪টি মনিটরিং টিম সর্বদা কাজ করছে নিত্যপণ্যের বাজারে। অকারণে মজুদকৃত পেঁয়াজের দাম বেশি নেওয়া হলে শাস্তি পেতে হবে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এত কিছুর পরেও পেঁয়াজের বাজার অস্থিরতা বিরাজ করছে।
বাসের যাত্রী থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে পেঁয়াজ নিয়ে সমালোচনার ঝড়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের বড় চালানটি দেশে আসলেই দাম পড়ে যাবে। কারণ ওই সময় ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ আসবে দেশে। আমদানিকৃত এই পেঁয়াজ কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, পেঁয়াজের সঙ্কট দূর করতে মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক, থাইল্যান্ড এবং চীন থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে নিয়মিত পেঁয়াজ আসছে।
সম্প্রতি মিসর ও তুরস্ক থেকে আরও ৫ হাজার টন পেঁয়াজ দেশে আনা হয়। তবে মিসর থেকে আমদানিকৃত ৬০ হাজার টনের বড় চালান এখনও দেশে এসে পৌঁছায়নি। পেঁয়াজের এই সঙ্কট সামনে রেখেই অসাধু ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। অপেক্ষাকৃত খারাপ মানের ছোট পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা দরে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে থেকে ১৭০-১৮০ টাকা দরে।
রাজধানী জুড়ে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কথা বলে। বুলবুলের আঘাতে সাময়িক যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হলেও এখন পরিস্থিতি ভালো। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা হচ্ছে।
দাম বাড়ার কারণে পরিবার প্রতি পেঁয়াজের ব্যবহার কমে গেছে। স্বল্প আয়ের মানুষ বিশেষ করে রিকশাচালক, ভ্যানচালক ও দিনমজুরেরা শাক-সবজির মতো তরকারি পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করছে।
মাছ ও মাংস রান্না হলে সামান্য পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে। পেঁয়াজ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত গৃহিণীরা। কারণ তারা রান্না করার সময় পর্যাপ্ত পেঁয়াজ পাচ্ছেন না।
এদিকে দেশ জুড়ে পেঁয়াজের দাম লাগামহীন হওয়ায় দেশব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় বইছে।
রামপুরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ২০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানালেন ক্রেতারা। আমিন রহমান নামে এক ক্রেতা জানান, বেলা ১টার দিকে ২২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন তিনি।
এদিকে গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থিরতা বিরাজ করছে। পেঁয়াজের বড় উৎস ভারত ২৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে রফতানি বন্ধ ঘোষণা করলে দেশে দাম বাড়তে থাকে।
দেড় মাসের ব্যবধানে জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজে প্রায় ৩-৪ গুণ দাম বেড়ে গেছে। এখন প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশে বছরে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।
বিপরীতে উৎপাদন হয় ১৮-১৯ লাখ টন। ঘাটতি পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করে পূরণ করা হয়। কিন্তু গত বছর ভারী বৃষ্টিপাত ও অসময়ে বৃষ্টিপাতে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে।
এ বছর ঘাটতির পরিমাণ আরও বেশি। এ ছাড়া ভারতেও এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।
শুধু রাজধানীর বাজার নয়, দেশজুড়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।
পাবনার ঈশ্বরদীতে পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা ছিড়িয়ে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরিশালে পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা হয়েছে। পেঁয়াজের পাইকারি মোকাম পাবনায় গতকাল খুচরায় ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা