অনলাইন ডেস্ক
পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির জীবনেই এমন একটা দিন থাকে -যে দিনের আলোতে ও আনন্দে জাতি জেগে ওঠে ও সম্মুখে চলার পথ দেখতে পায়। বাঙ্গালি জাতির জীবনে নববর্ষ তেমনি একটি দিন। ষড়ঋতুর লীলানিকেতন এই বাংলাদেশ। ঋতুগুলো এখানে মঞ্চের কুশীলবের মতো গমনাগমন করে। ঋতু পরিক্রমায় একদিন শেষ হয়ে যায় বছর। পুষ্প ঝরানো পথে, বিদায় নেয় বসন্ত। আসে পহেলা বৈশাখ। শুরু হয় নববর্ষ। নববর্ষ একটি আনন্দজোয়ার। যে জোয়ারে ডুবে যায় ঝরা পালকের বালুচরভগ্ন, শুল্ক, জীর্ণ ফেলে আসা পথ। শুরু হয় নতুন জীবন। জাতীয় জীবনে আসে উৎসবের মেলা। এই উৎসবে ভেসে যায় প্রাতিস্বিক জীবন- সূচনা হয় সমষ্টিক জীবনের। ব্যক্তিগত আনন্দ দেয়াল টপকে সকলের আনন্দ রূপে দেখা দেয়। সবার সাথে ব্যক্তির যোগ হয় প্রীতিময় ও গীতিময়। নববর্ষ উদযাপন শুধুত আমাদের দেশের সীমায় সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই উৎসব উদযাপিত হয়। দেশে দেশে নানা জাতি নানাভাবে নববর্ষ উদযাপন করে থাকে। খ্রিস্টান জাতি নববর্ষ উদযাপন করে পয়লা জানুয়ারিতে। আমাদের অভিজাত সম্প্রদায়ের মানস শরীরে এই দিনটি দারুণ প্রভাব ফেলে। ইরানিগণ নববর্ষ উদযাপন করে থাকে। তাঁদের নববর্ষের নাম ‘নওরোজ’। ‘তেত’ হচ্ছে ভিয়েতনামিদের নববর্ষের নাম। ইহুদিদের মধ্যেও নববর্ষ উদযাপন করতে দেখা যায়। ইহুদিগণের নববর্ষ হচ্ছে ‘রাশ হাসানা’। যে দেশে যে নামেই নামকরণ করা হোক না কেন- নববর্ষের মর্মবাণী জাতীয় জাগরণ- এক নির্মল আনন্দ উৎসব। নববর্ষের সোনালী সকালে বাঙ্গালির জীবনেও নেমে আসে এক অনাবিল আনন্দ ধারা- এক মিলনকামী চেতনা। পুরোনো দিনের যত ক্লান্তি অবসাদ- পুরোনো পাতার মতো যায় ঝরে। এই দিন থেকে বিশলয়ের মতো- সদ্য ফোটা ফুলে মতো নতুন জীবনের শুরু হয়। আমরা ভুলে যাই শত্রুতা- পরষ্পর বিরোধিতা-রণ-রক্ত-হিংসা। নতুন দিনের মহাসগরের জোয়ার ডুবিয়ে দেয় আমাদের পুরোনো দিনের হতাশায় মরুভূমি- এনে দেয় আমাদের দ্বারে এক নতুন দিনে সওগাত। কবির কন্ঠে গান জেগে ওঠে- হে নতুন তোমারই হোক জয়- পুরোনো দিনের যত জঞ্জাল পুড়ে হোক সব ক্ষয়। যত পাপ-তাপ বিরোধিত আর হিংসার কারবার, এ নববর্ষে মুছে যাক সব সব হোক একাকার। নতুন দিনের মিলনের সুর বাজুক জগৎময়- হে নতুন, তোমারই হোক জয়। নববর্ষ বাঙ্গালিকে উপহার দেয় এক অনুষ্ঠানের ডালি। নতুন করে ঘর-দোর সাজানোর সাড়া পড়ে যায়। অনেকেই সাজেন নতুন পোশাকে। পথে পথে চলে শুভ ও মঙ্গল বিনিময়ের পালা। ব্যবসায়ী ও দোকানীদের জন্য এক প্রস্তুতির তাগিদ দেয়। এই দিনে খোলা হতো নতুন খাতা যার নাম হালখাতা। শুরু হয় লোক মিলনের মেলা। মিষ্টি বিতরণ। কিন্তু এবার হবে না হালখাতা অনুষ্ঠানে সমাগত অভ্যাগত জানানো হবে না।আন্তরিক প্রীতি ও হৃাদিক শুভেচ্ছা। সম্বৎসর পর ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে এই দিনে নতুন সম্পর্কের যে সূচনা হতো সেটিও থমকে গেছে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে। গ্রামীন মেলা বা আড়ং কে ঘিরে তৃণমূলের কুমোর – কামার-জেলে কৃষক- ময়রা – ঘোষ পসরা সাজিয়ে বসতো নানা বর্ণের ও নানা স্বাদের মিষ্টি, রঙ – বেরঙের খেলনা, হাড়ি- পাতিল,ডাবধান- ঢ্যাপের খই এমনকি বিবিধ মশলা। প্রদর্শিত হতো লোক নৃত্য, শারীরিক কসরত এবং জমে উঠতো লোক গীতির আসর। ঢাকার বিভিন্ন স্হানে এই দিনটি পালিত হতো বিশেষত বাংলা একাডেমির বৈশাখী মেলা ও রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। এবার আর কেউ পা মারাবে না!নববর্ষকে কেন্দ্র প্রচার মাধ্যম গুলো মুখর হয়ে উঠলেও নববর্ষ উপলক্ষে বেতার- টিভি কিংবা জাতীয় দৈনিকে চোখে পড়ার মতো আয়োজন!থাকবেনা ব্যাক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক শুভেচ্ছা কার্ড! থাকবে প্রযুক্তি নির্ভর এসএমএস-আইএমও-ম্যাসেন্জার – হোয়াটসঅ্যাপ -টুইটার -ইন্সটাগ্রাম এমনকি মেইলেও।এই দিনে বিভিন্ন আনন্দোৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে আমাদের সামাজিক যোগাযোগ নবায়ন ঘটত। এবার আর সেই সুযোগ হবে না।তবে, এই দিনে ঘরে থেকে পরস্পরের জন্য আশির্বাদ করতে পারি সুদিন আসবেই। আবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শক্তি সৃষ্টি হবে।এই দিনে আমরা আবেগ অনুভূতি ত্যাগ করে বৃহৎ ও মহৎ হওয়ার সুযোগ পাই।অতএব নববর্ষ আমাদের জীবনে এক সিঁড়ি উওোরনের আনন্দধারা।নববর্ষের চেতনা হচ্ছে সকলেই যাতে ভবিষ্যতে আনন্দে যুক্ত হতে পারি সেই লক্ষে এই ক্রান্তিকালে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দিনের নবোদিত সূর্যকে অবারিত প্রকৃতিকেও চেনা – মানুষকে আলোকিত আগামীতে বড় আপনার বলে বোধ হয়।মানব স্বীকৃতির মহানব্রতে অভিষিক্ত করে এই নববর্ষ কে স্বাগতম।
ডা. উজ্জ্বল কুমার রায়
প্রধান সম্পাদক দৈনিক গড়ব বাংলাদেশ
Like & Share our Facebook Page
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা