অনলাইন ডেস্ক
এই কূটনৈতিক যুদ্ধের জেরে চিনে থাকা মার্কিন নাগরিকদের খুব সাবধানে থাকতে পরামর্শ দিল ট্রাম্প প্রশাসন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং দক্ষিণ চিন সাগরের সমুদ্রসীমা নিয়ে চিন–মার্কিন বিবাদ দিনকে দিন অন্য মাত্রা নিচ্ছে।
লাদাখে ভারত-চিন সংঘাতের ঘটনা চিন-মার্কিন সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ ভারত আমেরিকার ঘোষিত সামরিক জোটসঙ্গী।
গত কয়েক মাস ধরেই করোনা ভাইরাস, বাণিজ্য যুদ্ধ, হংকং, দক্ষিণ চিন সাগর ইস্যুতে চিন–মার্কিন সংঘাত ক্রমশ যুদ্ধের উসকানি দিয়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা চিনের কমিউনিস্ট পার্টির তিন কর্মকর্তার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করল।
ফলে এঁরা আমেরিকা ও আমেরিকার মিত্র দেশগুলিতে পা রাখতে পারবেন না। যাতায়াতও করতে পারবেন না। পালটা জবাবি পদক্ষেপ করল চিনও।
চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চানিয়াং বলেছেন, আমরা আমেরিকাকে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি। চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এবং চিনের স্বার্থের ক্ষতি হতে পারে এমন মন্তব্য ও কাজ থেকে তাদের বিরত থাকতে বলেছি।
কিন্তু আমেরিকা আমাদের অনুরোধ না রাখায় কয়েকজন মার্কিন কূটনীতিক – এর উপরে চিনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল। এদের মধ্যে রয়েছেন দুই রিপাবলিক সেনেটর মার্কো রুবিও এবং টেড ক্রাজ।
এঁরা দু’জনেই চিনের কড়া সমালোচক। তিব্বত, উইঘুর, জিনজিয়াং, হংকং ইস্যুতে এঁরা দু’জন দুনিয়াজুড়ে চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছিলেন। তাই চিন ও হংকংয়ে এঁদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করল বেজিং ।
এই অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসন চিনে থাকা মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তাঁরা যেন সাবধানে থাকেন। কারণ চিনের পুলিশ তাঁদের যে কোনও সময়ে বিনা কারণে গ্রেপ্তার বা হেনস্থা করতে পারে।
গুপ্তচরবৃত্তির মিথ্যে অভিযোগে মার্কিন নাগরিকদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাঁরা কনস্যুলার অ্যাকসেস পাবেন না। তাঁদের বেজিংয়ের মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করতে দেওয়া হবে না।
মার্কিন নাগরিকরা পাবেন না কূটনৈতিক রক্ষাকবচ। চিন ও হংকংয়ে থাকা মার্কিন নাগরিকদের জীবনও বিপন্ন করতে পারে চিনের প্রশাসন। তাই মার্কিন নাগরিকরা যেন চিন ও হংকংয়ে খুব সাবধানে চলাফেরা করেন।
দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের সমস্ত দাবি উড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকা। সংঘাত আরও বাড়িয়ে মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেও সোমবার সাফ জানান, দক্ষিণ চিন সাগরে নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করতে গিয়ে চিন অন্য কয়েকটি দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করছে। বেজিং অবশ্য পালটা তোপ দেগে বলেছে , আমেরিকার বয়ান ‘একবরেই অযৌক্তিক’।
হংকং নিয়ে চিনের সঙ্গে সংঘাতের আবহে পম্পেও বলেন, “দক্ষিণ চিন সাগরকে নিজের সাম্রাজ্য হিসেবে চিনকে ব্যবহার করতে দেবে না বিশ্ব। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিত্রদেশগুলির পাশে আছে আমেরিকা।
আন্তর্জাতিক আইন মেনে যে কোনও মূল্যে তাদের অধিকার ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে আমরা বদ্ধপরিকর।” এদিন পম্পেও আর জানান বিতর্কিত জলসীমায় নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে গিয়ে অন্য বেশ কয়েকটি দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করছে চিন। এটা কখনওই মেনে নেওয়া হবে না।
এদিকে, আমেরিকার বয়ানে পালটা তোপ দেগেছে চিন। কমিউনিস্ট দেশটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, “দক্ষিণ চিন সাগরে শান্তিস্থাপনের অজুহাতে আমেরিকা আদতে পেশিশক্তি প্রদর্শন করছে। করে চলেছে।
এতে দক্ষিণ চিন সাগর এলাকায় নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। তা ওই এলাকার দেশগুলির মধ্যে বিরোধকে আরও উস্কে দিচ্ছে।”
সম্প্রতি, চিন সাগরে বিতর্কিত জলসীমায় সামরিক মহড়া করে চিনের নৌসেনা । তারই জবাবে দু’টি ‘ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ’ পাঠিয়েছে আমেরিকা।
একটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে থাকে সাবমেরিন, ফ্রিগেট, ডেস্ট্রয়ারে মতো বেশ কয়েকটি রণতরী। এগুলোকে মিলিয়ে বলা হয় ‘স্ট্রাইক গ্রুপ।
যেহেতু মার্কিন রণতরীগুলি আণবিক শক্তি চালিত তাই তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য সাগরে থাকতে সক্ষম। পাশাপাশি, F-18 যুদ্ধবিমানের সঙ্গে ‘USS Nimitz’ ও ‘USS Ronald Reagan’-এ রযেছে বিধ্বংসী মিসাইল সম্ভার।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ চিন সাগরের প্রায় ৯০ শতাংশ নিজেদের বলে দাবি করে চিন। ফলে ইতিমধ্যেই জাপান, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স-সহ একাধিক দেশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে বেজিং।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এই সাগর দিয়েই প্রতিবছর ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হয়। ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে এই রুটটি অত্যন্ত লাভজনক। এছাড়াও, এশিয়া মহাদেশে মার্কিন প্রভাব খর্ব করতে হলে সবার আগে দক্ষিণ চিন সাগরে মার্কিন নৌবহরকে কাবু করতে হবে, তা ভালই জানে চিন। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলেছে আমেরিকা।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা