নাসিমা সোমা
নাগরিক জীবনে ছুটে চলা হাঁপিয়ে ওঠা নগরবাসী আকুল হয়ে থাকে প্রকৃতি স্পর্শের জন্য ৷ অবসরে হারিয়ে যেতে চায় সবুজ শ্যামলিমায় ৷ এমন প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য নেপালের চিতওয়ান একটি উপযুক্ত জায়গা ৷ কাঠমাণ্ডু থেকে ১৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত চিতওয়ানকে নেপালের তৃতীয় আকষর্ণীয় পর্যটক গন্তব্য বলা হয়ে থাকে ৷
পর্যটকেরা বিমান এবং সড়ক পথে কাঠমাণ্ডু থেকে চিতওয়ান যেতে পারেন ৷ তবে সড়ক পথে যাওয়ার মজা আলাদা ৷ পথে যেতে যেতে রাস্তার দুপাশে পাথর ও ঝর্ণার সৌন্দর্য আপনাকে জাগতিক চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে ৷ যাবার পথে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে রেস্টুরেন্ট যেখানে আপনি অনায়াসে সকালের নাস্তা কিংবা দুপুরের খাবার সেরে নিতে পারবেন। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক ৷ এটি নেপালের প্রথম জাতীয় উদ্যান ৷
চিতওয়ানের জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের প্রবেশাধিকার রয়েছে ৷ হাতীর পিঠে চড়ে পর্যটকরা পুরো জঙ্গল ঘুরে দেখতে পারেন ৷ খুব কাছ থেকে গন্ডার, হরিণ, বনগরু, ময়ূর, কুমির, বানর, সাপ ও বিভিন্ন প্রকার প্রাণী দেখা যায় ৷ তবে জঙ্গলের প্রবেশের ক্ষেত্রে পর্যটকদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় ৷ যেমনঃ সাদা, লাল ও হলুদ রংয়ের পোষাক পরিধান করা যাবে না, অতিরিক্ত শব্দ করা যাবেনা ৷
জঙ্গলের সীমানার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু মন্দির যেমনঃ বিক্রমবাবা, নামী তাল, তামুর তাল ৷ ইচ্ছে করলে কেউ কেউ মন্দির দর্শনও করতে পারে ৷ এছাড়া থারু ও মাঝি নৃ-গোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও বিশেষ থারু নৃত্য উপভোগ করতে পারবেন ৷
চিতওয়ান জাতীয় উদ্যানের একটি নিরাপদ ও সংরক্ষিত আদ্র অঞ্চল হচ্ছে “বিশ হাজারী তাল” বা “বিশ হাজারী লেক”৷ পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য জায়গাটি চমৎকার ৷ শীতকালে সাইবেরিয়া থেকে প্রচুর অতিথি পাখি আসে এই লেকে ৷ এই অঞ্চলটি ভারতপুর জেলা সদরের খুব কাছাকাছি ৷ যারা স্বল্প সময় নিয়ে চিতওয়ান বেড়াতে আসেন তাদের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা ৷
চিতওয়ানের ঐতিহ্যবাহী নৌকাতে করে ঘুরতে পারেন বুড়িরাপ্টি নদীতে ৷ এই নদীটি গঙ্গার সাথে সংযুক্ত ৷ নৌকাগুলো অনেক লম্বা এবং সরু ৷ নৌকার মাঝামাঝি সবাইকে এক লাইনে বসতে হয় ৷ নৌ ভ্রমণের সময় নদীর স্বচ্ছ জলধারা ও দুপাশের সৌন্দর্য্য ও প্রাণীকূল আপনাকে ভরিয়ে দিবে মুগ্ধতায় ৷ নদীর দুপাশে দেখতে পাবেন কুমীর, গড়িয়াল, ময়ূর, হরিণ ও নানা প্রজাতির পাখি ৷
চিতওয়ানের আরেকটি নতুন পর্যটন গন্তব্য হলো চিরাইচুলি পর্বত ৷ ৯৪৬ মিটার উচ্চতার এই পর্বত এলাকা সূর্যোদয় দেখার একটি আদর্শ জায়গা ৷ তবে সূর্যোদয় দেখতে হলে আপনাকে হাত্তিব্যাঙ নামক স্থানে রাত্রিযাপন করতে হবে ৷ সেখান থেকে ১ ঘন্টা হাঁটার পথ পেরিয়ে আপনি উপভোগ করতে পারবেন সুন্দর, উন্মুক্ত পাহাড়ি পরিসর ৷
চিতওয়ানের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান রামকুমার আরিয়াল বলেন “জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগোষ্ঠী আমাদের যথেষ্ঠ সহায়তা করে এবং এখান থেকে অর্জিত অর্থের শতকরা ৫০ ভাগ আমরা তাদের দিয়ে থাকি।”
জলবায়ু পরিবর্তন প্রাণিকূলের উপর কোন প্রভাব ফেলে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন প্রাণীকূলের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে ৷ কোন অঞ্চলের আবহাওয়া যদি ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে বা নীচে ঘন ঘন উঠা নামা করলে তাহলে সেখানে প্রাণীদের মধ্যে মেয়ে বাচ্চা জন্মানোর সংখ্যা বেড়ে যায় ৷”
চিতওয়ানের সৌরাহাতে খুব সুন্দর সুন্দর হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে ৷ হোটেলের আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবে নিশ্চিত ৷ এমনিতেই নেপালীরা শান্ত, ভদ্র ও বিনয়ী জাতি ৷ তাই অতিথি আপ্যায়নে তাদের রয়েছে মুন্সিয়ানা যা অনুকরণীয় ৷ ঠােঁটের কোণে লেগে থাকা হাসি দিয়ে প্রথমেই তারা আপনাকে স্বাগত জানাবে দেশটিতে।
সেখানকার খাবারে রয়েছে বৈচিত্র্য। ঐতিহ্যবাহী নেপালী খাবারের পাশাপাশি রয়েছে ভারতীয় ও কন্টিনেন্টাল খাবার ৷
# সম্পাদক, লাল সবুজের কথা ডটকম।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা