তাসকিনা ইয়াসমিন
আমি একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। একারণে আমি স্কুল, কলেজে, গার্মেন্টস এ যাবার সুযােগ পাই। সেখানে আমি ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতার বিষয়টি ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা মেয়েদের সঙ্গে কাজ করি। আমাদের যদি আরও বেশি সুযোগ থাকত তাহলে ক্যানসার সচেতনতা নিয়ে আরও বেশি প্রচার করতে পারতাম। সরকার এই দিকে তাকায় না। আমরা নিজেরা যদি হাতে হাত লাগাই, তাহলে ক্যানসার প্রতিরোধে বহুদুর এগিয়ে যাব।
ক্যানসার নিয়ে কাজ করছে এমন অনেক সংগঠন আছে, যেটা আসলে আমি আগে জানতাম না। ২০০৩ সালে যখন আমার ক্যানসার হয়েছিল তখন থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি ক্যানসার নিয়ে কাজ করব। তার আগে আমি ক্যানসারকে খুব ভয় পেতাম। ক্যানসার নিয়ে কোন লেখা দেখলেও আমি পড়তে চাইতাম না। এতটাই ভয় পেতাম।
আমি নিজেই যখন ক্যানসারে ভুগলাম তখন সিদ্ধান্ত নিলাম মানুষকে সচেতন করব। কারণ, তখন আমি জানতাম না যে ক্যানসার হলে মানুষ বেঁচে থাকে। এটাই আমি জানতাম না। যখন আমার ক্যানসার হলো তখন আমি আস্তে আস্তে দেখতে পেলাম ক্যানসার রোগী অনেক বছর বাঁচে। আলহামদুলিল্লাহ আমি নিজে এখন ১৮ বছর যাবৎ বেঁচে আছি।
সুতরাং এটা গণমাধ্যম অনেকবার প্রচার করেছে। তাই আমার মনে হয় এটা গণমাধ্যমের অনেক বড় একটা ভূমিকা। যে ক্যানসার রোগীরা বেঁচে আছে। মরে যাচ্ছেনা। কারণ, আমার পরিবার মহাসমুদ্রের মধ্যে পড়ে গেল। যখন আমার ক্যানসারটা ধরা পড়ল। এখন চিকিৎসা অনেক উন্নত হয়েছে। আশাবাদী, এই কথাটাই মানুষকে প্রচার করা দরকার।
আর ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতন থাকতে তো হবেই। নিজেকে ভালবাসতে হবে। এই ভালবাসার কথাটাই আমরা সবাইকে বলে বেড়াই, যে আগে নিজেকে ভালবাসেন। নিজেকে ভালবাসলেই সচেতন হবো। নিজেকে এক্সপ্রেস করার চেষ্টা করব। ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ১৫-২০ মিনিট যেন একেবারেই নিজের জন্য দেয়। এটা সবাইকে বলার চেষ্টা করি। এখণ ক্যানসার যে হারে বাড়ছে!
আমার কাছে মনে হয়, ২০০৩ সালে যখন আমার ক্যানসার হয়েছিল আমি বোধহয় এত ক্যানসার রোগী দেখিনি। কিন্তু এখন যেটা দেখছি শিশুরাও ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য যখন আমাদের কাছে দরখাস্ত আসে আমরা কাকে রেখে কাকে সহায়তা করব তা ভেবে পাই না। আমরা এই শিশুদের দেখে কাঁদি। শিশুদের কারো মাথায়, কারো গলায়, কারো হাতটা কেটে ফেলেছে। জীবনটাই শুরু হলো না সেই জীবনটা এই রকম। চিকিৎসকদের কাছে এগুলো কিছুই না। কিন্তু আমাদের কাছে এগুলো অনেক কষ্ট দেয়।
ক্যানসার ধরা পড়ার পর প্রথমদিকে, আমি বাসায় এসে কাঁদতাম। আমর রাতে ঘুম হতো না। তাই, আমার মনে হয় ক্যানসার প্রতিরোধের বিষয়টা বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। প্রচার করতে হবে যে, ক্যানসার থেকে কিভাবে সুস্থ থাকা যায়। সবাই যদি যোদ্ধার মতো ছড়িয়ে পড়ি তাহলে আমার মনে হয়, বাংলাদেশ থেকে আমরা ক্যানসার দূর করতে সক্ষম হবো।
# তাহমিনা গাফফার, ক্যানসার সারভাইভার, চেয়ারপারসন, অপরাজিতা সোসাইটি এগেইনেস্ট ক্যানসার ।
# তাসকিনা ইয়াসমিন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, লাল সবুজের কথা ডটকম।