রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর পরিচালক প্রফেসর ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা যারা বিদেশে ভ্রমণ করছেন তাদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
সোমবার (২ মার্চ) নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, বিমানের ভেতরে স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা ফরম (Health Declaration Form) ও যাত্রীর অবস্থান নির্ণয় ফরম (Passenger Locator Form) পূরণ করে তা ইমিগ্রেশন ডেস্কে জমা দেবেন। যাবার সময় নীল রংএর স্বাস্থ্য বার্তা কার্ড (Health Alert Notice) নিয়ে যাবেন। সবাইকে থার্মাল স্ক্যানার তোরণ দিয়ে যেতে হবে, বা হাতে ধরা ডিজিটাল থার্মোমিটার দ্বারা তাপমাত্রা মাপাতে হবে।কেউ যদি অসুস্থ থাকেন বা লক্ষণ (জ্বর, শুকনো কাশি, দুর্বলতা ইত্যাদি) থাকে তাহলে স্বাস্থ্য সহায়তা ডেস্কে তা জানাতে হবে। কোনো কিছু জানতে হলে আইইডিসিআর-এ অবস্থিত কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন বা ই-মেইল করে জেনে নিতে হবে।
তিনি চীন, সিঙ্গাপুর, দঃ কোরিয়া, জাপান, ইরান, ইতালি ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের টানা ১৪ দিন নিজ বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় যাবার পথে গাড়ীতে মাস্ক পরবেন। সম্ভব হলে গণ পরিবহনের ব্যবহার না করে নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করুন এবং পরিবহনের জানালা খোলা রাখুন। অবশ্যই বাড়ীতেই থাকুন। জনসমাগমে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকতে মাস্ক ব্যবহার করুন। নিয়মিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ দুই হাত ধুয়ে নিন। অপরিস্কার হাতে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করবেন না। শারীরিক অসুস্থতা (জ¦র, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) দেখা দিলে আইইডিসিআর এর হটলাইনে (০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১) ফোন করবেন।
তিনি করোনা ভাইরাসের বিশ্ব পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)’র প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিশ্বে সর্বমোট সনাক্ত করা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৭১৩৭ (গত ২৪ ঘন্টায় নতুন রোগী ১৭৩৯)। মোট সনাক্ত করা রোগীর মধ্যে চীনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭৯৯৬৮ জন। আক্রান্ত রোগীর মধ্যে মোট মৃতের সংখ্যা ২৮৮৭ জন। চীনে কয়েক দিন ধরে আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও গত দু’দিনে অল্প কিছু বেড়েছে। তবে গত ২৪ ঘন্টায় চীনের বাইরের দেশগুলোতে নতুন রোগীর সংখ্যা হয়েছে চীনের চাইতে বেশী, প্রায় দ্বিগুণ। নতুন ৫টি দেশে কোভিড-১৯ সনাক্ত হয়েছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৫৯টি দেশ ও একটি আন্তর্জাতিক জাহাজের মধ্যে চীন সহ ২১টি দেশে ও জাপানের বন্দরে থাকা জাহাজে মানুষ থেকে মানুষে কোভিড-১৯ ছড়াচ্ছে। অন্য দেশগুলোতে শুধু বাইরের দেশ থেকে আসা আক্রান্ত রোগী রয়েছে, তাদের থেকে সেই দেশেঅন্য কোনো ব্যক্তি এখনো আক্রান্ত হননি।
সিঙ্গাপুর পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানান, সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সিঙ্গাপুরে এ যাবৎ ১০৬ জন কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত হয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫ জনের পরিস্থিতি স্থিতিশীল, আশঙ্কাজনক রয়েছেন ৭ জন এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৭৪ জন। সিঙ্গাপুরে মোট ৩ জন বাংলাদেশের নাগরিক কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ১ জন আইসিইউ-তে আছেন এবং তাঁর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২ জন বাংলাদেশের নাগরিক সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। বাংলাদেশে সিঙ্গাপুরের দূতাবাস থেকেও আমাদেরকে সিঙ্গাপুর পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে।
তিনি জানান, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত ছাড়া অন্যান্য কোন দেশে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রবাসী বাংলাদেশী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হন নি। দিল্লীতে উহান থেকে আগত ২৩ জন বাংলাদেশী নাগরিক দিল্লী শহর থেকে ৪০ মাইল দূরে একটি কোয়ারেন্টিনে আছেন। এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরা ৪,১৪,৮২১ জনের স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু কারো মধ্যে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা