অনলাইন ডেস্ক
এর আগের ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও সিত্রাংয়ের ক্ষয়ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি পটুয়াখালীর উপকূলের মানুষ। এরই মধ্যে ফসলই জমির মাঠখালী করতে শুরু করেছে কৃষক। যাতে করে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়। ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে কারণ দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই শত শত গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ৬২ কিলোমিটার দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে পটুয়াখালীর উপকূল।পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, পটুয়াখালী জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেরিবাধঁ রয়েছে ১৩৩৫ কিলোমিটার এর মধ্যে পটুয়াখালী সার্কেলের অধীনে ৮২২ কিলোমিটার এবং কলাপাড়া সার্কেলের অধীনে রয়েছে ৫১৩ কিলোমিটার। এছাড়াও পোল্ডার রয়েছে ৩৬টি এর মধ্যে পটুয়াখালী সার্কেলে ১৯টি এবং কলাপাড়া সার্কেলে ১৭টি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ এলাকা মির্জাগঞ্জ উপজেলা। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে এরমধ্যে মোটামুটি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ১০ কিলোমিটার। আবার অতি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রয়েছে ১৮ কিলোমিটার এর মধ্যে পটুয়াখালী সার্কেলে ১০ কিলোমিটার এবং কলাপাড়া সার্কেলে ৮ কিলোমিটার এবং আংশিক ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রয়েছে ৩৪ কিলোমিটার এর মধ্যে পটুয়াখালী সার্কেলে ১৯ কিলোমিটার এবং কলাপাড়া সার্কেলে ১৫ কিলোমিটার।সরেজমিনে দেখা গেছে, কলাপাড়া উপজেলা, রাঙ্গাবালী উপজেলা, চর কাজল, মির্জাগঞ্জ, সন্ধ্যাকালীকাপুর পিপরাখালী, ভিগাখালী, চিংগুরা গ্রাম বেড়িবাঁধ এলাকাগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হুমকির মুখে পড়েছে, জরুরিভাবে কিছু জায়গায় বেড়িবাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। পাইলিং ছাড়া বেড়িবাঁধ দেওয়ায় প্রতিবছর ভাঙছে রাস্তাঘাট। বন্যার পূর্বাভাস শুনে ফসলের জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছে কৃষক। নদীর পাড়ের ঘর সরিয়ে নিচ্ছে ভাঙন এলাকার মানুষজন। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে। মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের পিঁপড়াখালী গ্রামের বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দা হারুন সিকদার বলেন, ৩২ বছরের জীবনে ৩০ বারই দোকান পরিবর্তন করেছি। সরকার বেড়িবাঁধ দেয় আর ভেঙে যায় আমাদের সরে যেতে হয়। আমার নিজের দেখা ৫টি গ্রাম চলে গেছে নদীতে। বন্যার পানিতে আমরা প্রতিবছরই ভাসী।পিপরাখালী গ্রামের ৭০ বছরের আনোয়ারা বেগম বলেন, ঘর উঠাই আর ঘর ভাঙে, উঠাই আর ভাঙে। আমাদের সঙ্গে যে পাঁচটা ঘর আছে তা এখন পর্যন্ত তিনবার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন আর নিজেদের জায়গা জমি নেই অন্য মানুষের জায়গায় থাকি।মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের মিলন মিয়া বলেন, এই নদীতে আমার বাবা ও মায়ের কবর নিয়ে গেছে তাদের কোথায় কবর দিয়েছি সেই জায়গাটা পর্যন্ত এখন বলতে পারি না। প্রতিবছর এখানের ভাঙনে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। সরকার যদি সিমেন্টের ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ করে দেয় তাহলে এই বেড়িবাঁধ টেকসই হয়।মির্জাগন্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো নাসির হাওলাদার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কোন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি তবে তাদের যদি দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় তাহলে সাথে সাথে আমরা পূর্ব প্রস্তুতি শুরু করব। তবে আমার এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ বেরিবাধ রয়েছে যেখান থেকে মুহূর্তেই পানি ঢুকে গ্রামে প্লাবিত করতে পারে তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে কিছু জায়াগায় বেড়িবাঁধ মেরামত করতেছে। আর প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড়ে আমার এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বিশেষ করে ফসলি জমি সব নষ্ট হয়ে যায়।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, পটুয়াখালী জেলা একটি উপকূলীয় এলাকা এখানে অন্য সব জেলার চেয়ে বেড়িবাঁধ সব চেয়ে বেশি। এখানে ৩৬টি পোল্ডার ও ১৩৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এখানে যেহেতু সংখ্যা বেশি লেন্থ ও বেশি কাজের ঝুঁকি ও বেশি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকনির্দেশনা রয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখা আসার আগেই সকল বেড়িবাঁধগুলো সংরক্ষণ করা হবে। ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, পটুয়াখালী জেলা একটি উপকূলীয় ও দুর্যোগ প্রবণ এলাকা প্রতিবছরই এলাকায় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় এলাকায় সংগঠিত হয়। এজন্যই আমাদের প্রতিবছরই বেশ কিছু প্রস্তুতি থাকে। এবারও আমাদের ৭০৩টিরও বেশি ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রয়েছে। তাছাড়া আমাদের এই জেলাতে ৫১টি মুজিব কেল্লার বরাদ্দ আছে। ইতিমধ্যে ২৬টি মুজিব কেল্লা উদ্বোধন হয়ে গেছে বাকিগুলো কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, যদি সিগন্যাল আসে তাহলে আমরা এই জেলার ২ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর সঙ্গে গবাদি পশুকেও আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া যাবে।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা