চারটি বিভাগে মশা জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা। ২১ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিভাগ থেকে এ জরিপ শুরু হবে। মশার প্রজাতি শনাক্ত ও দেশব্যাপী মশা নিয়ন্ত্রণে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য এ জরিপ করা হচ্ছে।
গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত ডেঙ্গু বিষয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তহমিনা এ তথ্য দেন। তবে সারা দেশে জরিপ করার মতো অর্থ ও জনবল তাঁদের নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।
চারটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে মশা জরিপ পরিচালনা করবেন রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার কীটতত্ত্ববিদ ও কীট–কারিগরেরা। সানিয়া তহমিনা বলেন, আটটি দল মশা জরিপ করবে। মাইক্রোপ্ল্যান বা জেলার স্থানীয় পর্যায়ে কোথায় কোথায় জরিপ করা হবে, তা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। ২১ সেপ্টেম্বর জরিপকারী দলগুলো মাঠপর্যায়ে যাবে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বরিশাল বিভাগে প্রথম জরিপের আওতাভুক্ত জেলাগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এরপর জরিপ হবে খুলনা বিভাগের যশোর, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলায়। এরপর হবে চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি জেলায়। শেষে ঢাকা বিভাগে জরিপ হবে। রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা মূলত ঢাকা শহরে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে ও পরে এবং বর্ষা মৌসুমে মোট তিনটি জরিপ করে। তবে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়া জুলাই মাসে ঢাকা শহরে ত্বরিত জরিপ করেছিল রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা।
এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মশার বিষয়টি আলোচনায় আসে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানীরা এক বছর আগে জানিয়েছিলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ছিটাচ্ছে, তা মশা মারতে কার্যকর নয়। একাধারে বহুদিন ব্যবহারের কারণে মশা ওই ওষুধ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অর্জন করেছে।
বিজ্ঞানীরা বিষয়টি গত বছর সরকারি কর্মকর্তাদের জানালেও গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পায় এ বছর। প্রথম বিতর্কের সূত্রপাত হয় মশা নিধনে অকার্যকর ওষুধের ব্যবহার নিয়ে। তারপর জানা যায়, মশার ওষুধ কেনাকাটায় অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে। এরপর মশার নতুন ওষুধ কেনা নিয়ে নানা উদ্যোগের কথা শোনা যেতে থাকে।
এসব বিতর্কের সময় হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। ৭ আগস্ট এক দিনে ২ হাজার ৪২৮ জন রোগী ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। পবিত্র ঈদুল আজহার কাছাকাছি সময় বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। একসময় ৬৪ জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এরপর জানা যায়, স্থানীয়ভাবে এডিস মশা এ রোগ ছড়াচ্ছে।
প্রায় এক মাস ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কবিরুল বাশার ও কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর চৌধুরী দেশব্যাপী মশার পরিস্থিতি জানার জন্য জরিপের উদ্যোগ নিতে বলে আসছেন। মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন, ‘এবারের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, মশা শুধু ঢাকা শহরের সমস্যা না, সারা দেশের। সারা দেশের পরিস্থিতি জানতে হবে। এর জন্য দেশব্যাপী জরিপ জরুরি।’
কয়েকটি জেলায় স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বরিশাল, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরে মশার লার্ভা পরীক্ষা করেছে। পরীক্ষা শেষে ১১ সেপ্টেম্বর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, বরিশাল ও কুষ্টিয়ায় এডিস অ্যালবোপিকটাস প্রজাতির এবং মেহেরপুরে এডিস ইজিপটাই ও এডিস অ্যালবোপিকটাস প্রজাতির মশা পাওয়া গেছে।
তবে গতকালের সংবাদ ব্রিফিং থেকে সাংবাদিকেরা জেনেছেন আইইডিসিআরের এই মশা জরিপের তথ্য নেই রোগনিয়ন্ত্রণ শাখায়। দুই কার্যালয়ের দূরত্ব মাত্র কয়েক গজ।
সাংবাদিকেরা জানতে চান, সারা দেশে কেন জরিপ হবে না। এর উত্তরে সানিয়া তহমিনা বলেন, অর্থ ও লোকবলের অভাব আছে।
তবে জরিপে জনবল তেমন কোনো সমস্যা নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, তবে ৬৪ জেলায় জরিপ হওয়া দরকার। জরিপের ব্যাপারে জনবল দিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুত আছে। আমরা অতীতেও সহায়তা করেছি।’
NB:This post is collected https://www.prothomalo.com
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা