অনলাইন ডেস্ক : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস চিকিৎসায় চিকিৎসকদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই বলে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এফডিএসআর)।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) এফডিএসআরের একটি সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন সংগঠনের উপদেষ্টা ডা. আব্দুন নূর তুষার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৯০ হাজার চিকিৎসক কমপক্ষে প্রত্যেকদিন রোগী দেখেন। তাদের জন্য প্রতিদিন একটি করে ইকুইপমেন্ট দরকার। আগামী তিন মাস যদি দরকার হয় তাহলে ৫১ লাখ পিপিই (পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট) দরকার।
‘কিন্তু এটার কোনো হিসাব আছে? কোনও হিসাব নেই। এগুলো যদি আমরা হিসাব না করি, তাহলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাজ কি? আজকে আমাদের কাজ কি? আমরা লেখাপড়া করেছি কী কারণে?’
জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, আমাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র যদি আমাদের চাকরি দিয়ে থাকে, রাষ্ট্র যদি আমাদের বলতে পারে বায়োমেট্রিক দিতে হবে, রাষ্ট্র যদি আমাদের নানান ধরনের তদারকি করতে পারে, রাষ্ট্র যদি আমাদের সমালোচনা করতে পারে তাহলে রাষ্ট্রের এটাও দায়িত্ব আছে চিকিৎসকদের জন্য কাজের পরিবেশ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং একটা জবাব দিতেই হবে, কেন দেবে না।
সম্প্রতি ঢাকা মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে কানাডা ফেরত এক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে ডা. তুষার আরও বলেন, একজন রোগী কানাডা থেকে এসেছে সেজন্য তাকে দেখতে যায়নি একজন চিকিৎসক। এটা সেই চিকিৎসকের দোষ না, এটা যেকোনো মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। আমি (একজন চিকিৎসক হিসেবে) যদি নিরাপত্তায় না থাকি, আপনি বলেন তো লাঠি, বন্দুক, ঢাল বা কোনো তলোয়ার ছাড়া একজন নিরাপত্তারক্ষীকে তার বাড়ি পাহারা দিতে দিবে সে?’
এই চিকিৎসকের ভাষ্য, চোর ধরার ইকুইপমেন্ট ছাড়া যদি তাকে আপনি চোর ধরতে পাঠান, দেবে? একটা লাঠি হলেও দিতে হয় একজন দাড়োয়ানের হাতে।
তিনি বলেন, আজকে অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধ করতে পাঠান তো আর্মিকে, একটা হেলমেট ছাড়া যাবে কেউ যুদ্ধক্ষেত্রে? তাহলে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী এভাবে কীভাবে চিকিৎসা করবে? আমাদের ডাক্তাররা তো চিকিৎসা দিচ্ছেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে চারজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে; করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন এই সন্দেহে।
তুষার বলেন, যদি প্রত্যেক ১৩ জন ১৪ জন রোগী ধরা পড়ার বিনিময়ে চারজন করে ডাক্তার কোয়ারেন্টিনে যেতে হয় তাহলে হিসাব করেন ৯০ হাজার চিকিৎসককে কোয়ারেন্টিন হতে কয় মাস লাগে।’
‘এটা ডাক্তারদের উদ্বেগের বিষয়, কারণ ডাক্তারদের পরিবার-পরিজন আছে। ডাক্তারদের ছেলেমেয়ে আছে। তারাও কারো পিতা, কারো মাতা। একজন নার্সও কারো মা, একটা ওয়ার্ড বয়ও কারো মা কারো বাবা, একটা ক্লিনারও কারো মা কারো বাবা। সে তো হাসপাতালে মৃত্যুর জন্য যায় না, হাসপাতালে সে জীবন বাঁচাতে যায়।’
এফডিএসআরের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি জানিয়ে এই উপদেষ্টা বলেন, চিকিৎসকদের পিপিই দেয়া না হলে, কোনো চিকিৎসক এভাবে চিকিৎসা করতে বাধ্য নয়। আপনি কাউকে এভাবে বাধ্য করতে পারেন না। এটা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, আমরা তো অন্যায় কিছু চাই নাই, আমরা তো আমাদের জন্য জামা-জুতা গয়না কিনতে বলি নাই। আমরা চিকিৎসা করার ইকুইপমেন্ট চেয়েছি এবং এটা দিতে হবে, এটার দায়িত্ব কাউকে না কাউকে নিতে হবে। আর দায়িত্ব নিতে না পারলে সেটাও বলতে হবে উনারা নিতে পারবেন না।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তুষার বলেন, আজকে আপনাদের ধাক্কাধাক্কি করে সংবাদ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আপনাদের প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব নিতে হবে। আপনাদের ইকুইপমেন্ট সাপ্লাই দিতে হবে। কারণ কারো পক্ষে ব্যক্তিগত খরচে ইকুইপমেন্ট কিনে চিকিৎসা করা সম্ভব না।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা