অনলাইন ডেস্ক
তাসনুর বেগম। চেহারায় বয়সের ছাপ পড়লেও স্বীকার করেন এখনো ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেননি সংসার। ইতোমধ্যে সন্তান-সন্ততি আর নাতি-নাতনির ১০ জনের পরিবার। থাকেন নদীর জলে ভাসমান ছোট্ট নৌকায়। বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাট লঞ্চঘাটের ঠিক বিপরীতে জেগে ওঠা চরে লগি ফেলে নৌকায় বসবাস তাদের। জীবনের শুরু থেকে এখানেই রয়েছেন। কম করে হলেও ৩৫ বছর।
উত্তাল কালাবদর নদীর সঙ্গে দারুণ সখ্যতা তাসনুরের পরিবারের। কিন্তু এই দশজনের একজনেরও বাংলা বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় নেই। এমনকি সংখ্যা গুনতেও পারেন না তাদের কেউ। তাসনুরের পরিবারের সর্বোচ্চ যিনি শিক্ষিত তিনি কুড়ি (২০) পর্যন্ত গুনতে পারেন।
তাসনুর বলেন, ‘ভাইগো বাংলা কইতে পারি। অক্ষর কেমন জানি না। কোন অক্ষরের মানে কী হেইসব আমাগো কেউ শিখায় নাই।’
স্থানীয় ট্রলার মাঝি সুমন পহলান বলেন, লাহারহাটের মান্তা গোষ্ঠীর কেউ লেখাপড়া জানে না। ওরা নদীতে মাছ ধরে লাহারহাটে এনে বিক্রি করে। বিক্রি শেষে ক্রেতা যে টাকা দেন তা নিয়ে স্থানীয় দোকানদারদের দিয়ে গুনে নেয়। অনেক দিন আমাকেও দিয়েছে গুনে দিতে।
কেবল তাসনুরের পরিবার নয়, লাহারহাটের কালাবদর নদীতে বসবাস করা ৪০টি পরিবারের দুই শতাধিক মানুষ বাংলা বর্ণমালা সর্ম্পকে ধারণা রাখেন না।
একইভাবে বাবুগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ ফেরিঘাট, বানারীপাড়া, উজিরপুর, বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর তীরে এবং ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থানকারী হাজারের বেশি বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা কেউই বাংলা বর্ণমালা চেনেন না।
নলছিটি জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থানকারী দলের সর্দার রেজাউল করিম বলেন, বেদে সম্প্রদায় মূলত যাযাবর। আমাদের নিজস্ব কোনো ঘরবাড়ি নেই। এখন অনেকে অবশ্য বিভিন্ন এলাকায় ভোটার হয়ে কোথাও কোথাও ঘরবাড়ি গড়ে তুলেছেন। ঘরবাড়ি গড়লেও আমাদের মধ্যে এক শতাংশ লোকও শিক্ষিত পাবেন না। শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা পুরুষেরা দিন হলে বিভিন্ন বাজারে যাই, সাপ খেলা দেখাই। গাওয়ালের (গ্রামে) পুকুরে স্বর্ণ খুঁজি। অনেকে বনের গাছের গুণাগুণ প্রচার করে ওষুধ বিক্রি করে। আমাদের সম্প্রদায়ের নারীরা গ্রামে গ্রামে হেঁটে সিংগা লাগায়, টোটকা চিকিৎসা দেয়।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা