অনলাইন ডেস্ক
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, গরমের কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম। তাই ঘাটতি হচ্ছে। মূলত জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে রাজধানীর বাইরে প্রতিটি এলাকাতেই লোডশেডিং হচ্ছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, জ্বালানি সংকটের কারণে ৩ হাজার ৪৫১ মেগাওয়াট উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২ হাজার ৯১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। অর্থাৎ, সক্ষমতার চাইতে মোট ৬ হাজার ৩৬৯ মেগাওয়াট কম উৎপাদন হচ্ছে।
পিজিসিবির তথ্যমতে, গত শনিবার দুপুর ১২টায় সারা দেশে ১ হাজার ১২২ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। ওই সময় উৎপাদন হয় ১২ হাজার ৫৮৬ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে দৈনিক গড়ে উৎপাদন হচ্ছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। তবে এই উৎপাদন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় হয়ে থাকে।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার কালবেলাকে বলেন, গরমের কারণে চাহিদা বেড়েছে। জ্বালানি সংকটে আমরা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। আদানি থেকে আরও বেশি বিদ্যুৎ আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনের দিনগুলো লোডশেডিং মুক্ত রাখা সম্ভব হবে না। জ্বালানি কেনার মতো ডলার না থাকায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা নেই সরকারের। এমনকি স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি ফের শুরু হলেও সংকটের সমাধান হবে না। পাশাপাশি বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদকরা বিদ্যুতের বিল পাচ্ছেন না। তাই তারাও উৎপাদন করছে না। এ ছাড়া সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সংকট সমাধানের পথে হাঁটছে; কিন্তু এতে সমাধান আসবে না।
জুলাইয়ে ১৫ হাজার ৭০০, আগস্টে ১৫ হাজার ৬০০, সেপ্টেম্বরে ১৫ হাজার ৫৮০, অক্টোবরে ১৫ হাজার, নভেম্বরে ১৩ হাজার ৮০০ এবং ডিসেম্বরে ১২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট চাহিদা নির্ধারণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
জানা গেছে, ডলার সংকটে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রয়োজনীয় তেল ও গ্যাস আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। এরই মধ্যে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির বিপরীতে বিল পরিশোধ করতে না পারায় দুটি কোম্পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। পেট্রোবাংলা জানায়, এলএনজি আমদানির বিপরীতে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে আরও সমস্যা তৈরি হবে। নতুন করে ১০টি এলএনজি কার্গো আমদানি করতে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে।
একই অবস্থা বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিস্থিতির। বেসরকারি খাতে মোট ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এগুলোর প্রায় সবই ফার্নেস অয়েলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র। বর্তমানে বেসরকারি খাতে আড়াইহাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রয়োজন ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল। এই পরিমাণ তেল কিনতে বছরে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। সেখানে বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও কম পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে পিডিবির কাছে ৬ মাসের বিল বকেয়া আছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের। বকেয়ার পরিমাণ ২২৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন টাকা। এমন চলতে থাকলে সামনে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপান আরও কমে যাবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন কালবেলাকে বলেন, সরকার মূলত সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাওয়ার আশায় ছিল। মার্চের মধ্যে এ বিদ্যুৎ আসবে বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। জ্বালানি কেনার বিষয়টিও এখনো পরিষ্কার হয়নি। এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং থাকবেই।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা