নিষ্ঠুর পদ্মা কেড়ে নিয়েছে চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বরের বিস্তীর্ণ জনপদ। গত দুই দিনের ভাঙনে দুটি স্কুল, একটি মাদরাসা এবং ইউনিয়ন পরিষদসহ আশপাশের এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। গৃহহীন হয়েছেন ২৫০টি পরিবার। শেষ আশ্রয় হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অনেকেই।
বুধবার বিকেলে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী ব্যাপারি জানান, দুপুরের পর থেকেই ঢালিকান্দি এলাকায় অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ও পাশের বাজার পদ্মার ভাঙনের মুখে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় পাশের গোয়ালনগরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান আরো জানান, ৩৮ বর্গকিলোমিটারের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে পদ্মা নদীবেষ্টিত। পূর্ব দিকের মেঘনায় তীব্র স্রোত থাকলেও আপাতত নদীপাড় কিছুটা শান্ত। তবে এখন পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকের পদ্মা নদী গ্রাস করেছে রাজরাজেশ্বরকে। এতে বিলীন হয়ে গেছে এই ইউনিয়নের মান্দের বাজার, দেওয়ান বাজার, বন্দুকশী বাজারসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ জনপদ। এমন পরিস্থিতিতে ৩০ হাজার চরবাসীর এই ইউনিয়ন মূল আয়তনের অর্ধেকে এসে ঠেকেছে।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরের একমাত্র মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও মোজাফফরিয়া দাখিল মাদরাসা এবং ডিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনসহ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের এলাকাও এখন আর অবশিষ্ট নেই। ফলে গত দুই দিনে পদ্মার এমন ভয়াল ভাঙনের পর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাশের লক্ষ্মীরচর ও বাঁশগাড়ি এলাকায় অস্থায়ীভাবে স্থাপন করার প্রস্তুতি চলছে।
ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিক উল্লাহ সরকার জানান, এই নিয়ে গত কয়েক বছরে ১০ বার বিদ্যালয়টি ভাঙনের শিকার হলো। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তিনি। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের শিক্ষাজীবনও। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল আজিজ ফারুক জানান, সরকারের এমপিওভুক্ত না হওয়ায় নিজেরাই অর্থ দিয়ে বিদ্যালয়টি চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আকুতি জানিয়ে তিনি বলেন, নদীতে ভাসমান বোট নির্মাণ করে সেখানে বিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজে আসবে।
এদিকে, পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে রাজরাজেশ্বরের ২৫০টি পরিবার এখন অন্যত্র মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের অনেকেই পাশের অন্য কোনো চরে কিংবা চাঁদপুর শহরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
অন্যদিকে, পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনের খবর পেয়ে রাজরাজেশ্বরে যান চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শওকত ওসমান। বুধবার বিকেলে দ্রুতগামী স্পিডবোট নিয়ে জেলা শহর থেকে উত্তাল মেঘনা ও পদ্মা পাড়ি দিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা পর সেখানে পৌঁছান তিনি। মূলত ভাঙনের ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিন দেখে তার একটি তালিকা তৈরি করতে যান তিনি। এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের কর্মকর্তারাও তার সঙ্গে ছিলেন।
NB:This post is copied from kalerkantho.com
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা