নারী আন্দোলনের অগ্রযাত্রা নারী-পুরুষের সমতার বিশ্বকে প্রতিষ্ঠা করবে। এরজন্য প্রথম দায়িত্ব হবে নারীর অগ্রযাত্রার যতটুকু অর্জন হয়েছে সেটি আগে সযত্নে রক্ষা করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে দেশকে মুক্ত হবে।
বুধবার (৪ মার্চ) সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন উপলক্ষ্যে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একথা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্লাটফরম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘নারী ও কন্যার প্রতি ধর্ষণ সহ সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধ কর’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবার নারী দিবস পালিত হচ্ছে।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর অধিকার হলো মানবের অধিকার। যুগ যুগ ধরে চলমান নারী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় নারীর অধিকারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। সমতা প্রতিষ্ঠার সফলতা নির্ভর করছে নারী আন্দোলন কতটা শক্তিশালী তার উপর। আশা করি সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হতে হবে, আইনের প্রয়োগ যথাযথ না হলে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা যাবে না। ধর্ষণের আইন এবং বাল্যবিবাহের আইন পরিবর্তন করতে হবে। ইউনিফর্ম ফ্যামলি কোড বাস্তবায়িত হলে সকল অসমতা দূর হয়ে নারীর স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা প্রতিষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করে বলেন সিডও সনদ, বেইজিং ঘোষণার ১২ টি ইস্যূ, এসডিজি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল উদ্দেশ্য হলো সমতা প্রতিষ্ঠা করা। নারীরা যতটুকু অর্জন করেছে আজ পর্যন্ত সেটিকে পিছনে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র সবসময় চলছে। যতদিন নারীমুক্তির চেতনা প্রতিষ্ঠিত হবে না ততদিন নারীর মুক্তি হবে না। নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্ত হবে না।
দীপ্ত ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক জাকিয়া কে হাসান বলেন ৮ই মার্চ আমাদের জন্য অইেশ গুরুত্বপূর্ণ। বেইজিং এর ২৫ ঊয়ওে এখনো নারীর প্রতি নির্যাতন এর কথা আলাদাভাবে বলতে হচ্ছে এটি উদ্বেগজনক। সংঘটিত হওয়ার মূল কারণ যদি এখনো উদঘাটিত না হয়, সমতার দর্শন যদি প্রতিষ্ঠিত না হয় তবে টেকসই উন্নয়ন হবে না।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, প্রতিটি নারীর জন্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন সকল নাগরিকের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ই্উনিফর্ম ফ্যামিলি কোড প্রণয়ন করা। সকল আইনকে যুগোপযোগী করা, সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব ৫০ শতাংশ নিশ্চিত করা সকল নারীর প্রতিনিধিত্বের জন্য। অন্যায়ের প্রতিবাদে নারীদের সোচ্চার হতে হবে। ধর্মের নামে, গোষ্ঠীর নামে সৃষ্ট বিভাজন থেকে মুক্ত হতে হবে।
এ্যাকশন এইড এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ নিধি রহমান বলেন, আমরা তরুন নারীবাদীরা সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি। নারীর অধিকার তাকে নারী নয় মানুষ হিসেবে ছিনিয়ে নিতে হবে।আমাদের সমাজে প্রতিবাদী নারীদের সভ্য হিসেবে গণ্য করে না।
উইমেন ফর উইমেন এর সভাপতি নীলুফার বানু বলেন, অন্যে কি ভাবছে সেটি বাদ দিয়ে যতদিন নিজের ভাল কিভাবে হবে সেটি কেউ উপলব্ধি করতে না পারবে ততদিন সঠিক উন্নয়ন হবে না। তারজন্য পড়তে হবে জানতে হবে আইন সম্পর্কে। মেয়েদের যোগ্যতা আছে কিন্তু মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। বৈষম্য দূর করতে এরজন্য পাঠ্যসূচী পরিবর্তন করতে হবে, নারী খেলোয়াড়দের বৈতন বৈষম্য উল্লেখ করে বলেন এই বৈষম্য দূর করতে হবে। সকল মেয়েদের জুডো কারাতে শিখতে হবে আত্মবিশ্বাসী হতে।
গার্লস নট ব্রাইড এর প্রতিনিধি তাসনুভা জামান বলেন নারী নির্যাতনের সাথে বাল্যবিবাহের একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে ৫০ শতাংশ কন্যার বয়স ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বাল্যবিবাহ সহিংসতা প্রতিরাধে কোন সমাধান নয়।
ইয়থ প্ল্যাটফরম ফর ট্রান্সফরমিং ম্যাসকুলিনিটি এর প্রতিনিধি তানজিমুল ইসলাম বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারীর প্রতি বৈষম্যমূলকমনোভাবের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি দূর করতে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিবে।
ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর অর্গানাইজিং সেক্রেটারি নায়েম মোল্লা বলেন, প্রতিটি নারী স্বাধীনভাবে তার সকল সিদ্ধান্ত নিবে। সমতার পৃথিবীর জন্য লড়াই করতে হবে।
প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি মর্জিনা আহমেদ বলেন, সকল নারীরা যাতে স্বাধীনভাবে নিরাপত্তা নিয়ে চলতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হতে হবে।
আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক এর চঞ্চনা চাকমা বলেন, বাংলাদেশে অন্যান্য নারীসহ আদিবাসী নারীদের প্রতি নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে। এটি উদ্বেগজনক। সমাবেশ থেকে দাবি জানাই প্রকৃত ধর্ষণকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ঘোষণা পাঠ করেন ওয়াই ডাব্লিউ সি এ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মনীষা সরকার। তিনি বলেন স্বাধীনতার ৪৮ বছরে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক খাতের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে প্রত্যাশিত নারী-পুরুষ সমতায় পৌঁছাতে তাদের আরো অনেকদূর অগ্রসর হতে হবে। কেউই রবে না পিছে’ এসডিজির এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী নারীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং নির্যাতন ও ক্ষতিকর চর্চা থেকে তাদের মুক্ত করার জন্য অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ সরকারেরও জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ব্র্যাক এর প্রতিনিধি মুনমুন খান।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা