ধান-চালের দাম বাড়াতে সরকারের নেওয়া এক গুচ্ছ উদ্যোগ এখনো কাজে আসেনি। শুরুতে দর সামান্য বাড়লেও তা স্থায়ী হয়নি। বরং গত এক সপ্তাহে ধান-চালের দাম আরও কমে গেছে।
উৎপাদন খরচের প্রায় অর্ধেক দামে ধান বিক্রি হওয়ায় সমালোচনার মুখে সরকার নানা পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছিল। ব্যবসায়ীরাও সরকারকে চিঠি দিয়ে বলেছিল, সিদ্ধ চাল রপ্তানির অনুমতি দিলে তারা বিপুল পরিমাণে চাল রপ্তানি করবে। এতে চালকল মালিকেরা বাজার থেকে ধান কেনা বাড়িয়ে দেবে। এতে ধানের দাম বাড়বে। কিন্তু তা হয়নি।
তাহলে কৃষকের লোকসান কমাতে ধান-চালের দাম বাড়াতে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, এই প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, আমরা ধানের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পরিমাণ বাড়িয়েছি, তা দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে। তাহলে দাম বাড়তে পারে।
কৃষি ও খাদ্য নীতিবিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা এবং অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ ছিল, সরকারকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করতে হবে, ধান সংগ্রহের পরিমাণও বাড়াতে হবে। সরকারও ধান সংগ্রহের পরিমাণ এক লাখ টন থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টনে নির্ধারণ করে। কিন্তু এসব উদ্যোগও কাজে আসেনি।
কেন কাজে আসেনি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ধান-চালের দাম কেন কম তা সঠিকভাবে অনুসন্ধানের জন্য চারটি তথ্য জানা দরকার। যেমন, চালকলের মালিকদের কাছে কী পরিমাণে চাল আছে ও তাঁদের মজুত ক্ষমতা কত, ফড়িয়া বা রাখি মালের ব্যবসায়ীদের কাছে ধানের মজুত কী পরিমাণ, কৃষকের কাছে সংগ্রহ করা চালের পরিমাণ কত এবং ব্যবসায়ীরা কী পরিমাণে চাল মজুত করেছেন। এরপর জানতে হবে, দেশে চালের চাহিদা কত, কোন কোন দেশে এই চালের চাহিদা আছে ও তা রপ্তানি সম্ভব কি না। এসব প্রশ্নের কোনোটির উত্তরই সরকারের কাছে নেই বলে নিজের সন্দেহ আছে বলে জানালেন তিনি।
এদিকে, গত ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু করে ৬৫ দিনে সরকার ৭৯ হাজার ৫০০ টন ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে। অর্থাৎ সাড়ে ৩ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রার ২৩ শতাংশ ধান সংগ্রহ হয়েছে। অন্যদিকে ১১ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার টন বা প্রায় ৬১ শতাংশ। সরকার চালকলের মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে চাল আর ধান সংগ্রহ করছে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে।
চাল রপ্তানি না হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার চাল রপ্তানির জন্য কোনো নীতিমালা তৈরি করেনি। আর চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ যে প্রণোদনা দেওয়া হয় তা দিয়ে রপ্তানি করে পোষাচ্ছে না। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম। তাই সরকার যদি তা ৩০ শতাংশ করে তাহলে রপ্তানি করা যাবে।
দেশের প্রধান চারটি ধান-চালের বাজার এলাকা থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া, রংপুর, নওগাঁ ও বগুড়া জেলার বিভিন্ন হাটে ধানের দাম গত এক সপ্তাহে প্রতি মণে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সরু ও মোটা চালের দাম অপরিবর্তিত আছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ধান-চালের দাম বাড়ানো নিয়ে শুধু বক্তৃতা দিয়ে আর হঠাৎ হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। দেশে আদৌ রপ্তানিযোগ্য চাল আছে কি না সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, নাকি চালকলের মালিক ও ব্যবসায়ীরা কৌশলে ধান কেনা বন্ধ করে দাম কমাচ্ছে আর সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। আর দেশের ধান-চালের সামগ্রিক চিত্র বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভুল সিদ্ধান্ত নিলে ধানের দাম বাড়বে না, বরং কমবে।
NB:This post is copied from prothomalo.com
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা