গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনের সময় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের একটি সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের ৩৪ জন নেতাকে ‘নিয়মবহির্ভূতভাবে’ ভর্তির সুযোগ দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে কোটা আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে ‘অনিয়ম ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে আমরা’ শিরোনামে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে সংগঠনটি। মানববন্ধনে তিন দফা দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
দাবিগুলো হলো, পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি হওয়া ছাত্রলীগের ৩৪ জন নেতাকে অছাত্র ঘোষণা; পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি হওয়া আট ডাকসু নেতার পদ শূন্য ঘোষণা করে ওই পদগুলোতে উপনির্বাচন দেওয়া এবং অবৈধ ভর্তিতে সহায়তাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের পদত্যাগ।
মানববন্ধনে সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা না বলে ভিসি ও ডিনরা সবসময় ছাত্রলীগের প্রতিনিধিত্ব করেন। ছাত্রলীগ যদি কোনো ধরনের অনিয়ম এবং দুর্নীতি করে তবুও তাদের বিচার হয় না। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ভিসি ছাত্রলীগ নামের যে বাস রয়েছে, সেই বাসের হেলপার হয়ে কাজ করছে। বরং অন্যায় করলে তাদের পার করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে।
দাবি না মানলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়ে সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, ‘দুঃখের বিষয় আমরা এমন একজন ভিসি পেয়েছি, যিনি চিরকুটের মাধ্যমে অন্যায় ভর্তিতে সহায়তা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা এতটা খারাপ হয়ে গেছে।’
মানববন্ধনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লার সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুগ্ম-সম্পাদক মশিউর রহমান, সোহরাব হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
রোকেয়া হল প্রাধ্যক্ষ ও হল সংসদের ভিপি-জিএসের পদত্যাগ দাবি : এদিকে, দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসির সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের নিয়োগ বাণিজ্য ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে অবৈধ ভর্তির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন বামপন্থি কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী। এতে তারা রোকেয়া হলে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িতদের শাস্তি ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে উপাচার্য ও হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম। এতে রোকেয়া হলের নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত হল সংসদের ভিপি ইশরাত জাহান তন্বী ও জিএস সায়মা আক্তার প্রমি এবং পরীক্ষা ছাড়া অবৈধ উপায়ে ভর্তি হয়ে ডাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিত আট নেতার পদত্যাগের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সালমান ফরাজী, রোকেয়া হলের ছাত্রী শ্রবণা শফিক দীপ্তি প্রমুখ। এদিকে ঢাবিতে পরীক্ষা ছাড়াই ছাত্র ভর্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। উত্থাপিত অভিযোগের ফলে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আস্থার সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে উল্লেখ করে এর মোকাবিলার জন্য সৎসাহসের সঙ্গে অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকে ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অভিযোগ সঠিক হলে তা হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করা যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপরিহার্য, অন্যদিকে নিয়মনীতি অনুসরণ করে ভর্তি প্রত্যাশী সব শিক্ষার্থীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করাও তেমন কর্তৃপক্ষের গুরু দায়িত্ব। রাজনৈতিক বিবেচনায় বা অন্য কোনো সাময়িক সুবিধা অন্বেষী স্বার্থান্বেষী চক্রান্তের কাছে জিম্মি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের আত্মঘাতী অবস্থান প্রতিরোধের আহ্বান জানায় টিআইবি।
জড়িতদের শাস্তি দাবি ছাত্রদলের : ঢাবিতে পরীক্ষা ছাড়াই চিরকুটের মাধ্যমে ৩৪ ছাত্রলীগ নেতাকে ভর্তির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু হয়ে শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, উপাচার্য নিজের পদ টিকিয়ে রাখতে সিন্ডিকেটের ভোটের ফলাফল নিয়ে কারচুপি করেন। যিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতারণা করেন, তিনি ভিসি হতে পারেন না। তিনি শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ডাকসুকে ছাত্রলীগের ডাকসু বানানোর জন্য অবৈধভাবে চিরকুটের মাধ্যমে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে ভর্তির সুযোগ দিয়েছেন। আমরা অবিলম্বে তার এবং ডিনের পদত্যাগ দাবি করছি।
এ সময় ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের (জিএস) পদপ্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকসহ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
NB:This post is collected from bd-pratidin.com
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা