মসজিদ নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের দায়ে নৌপরিবহন সচিব আবদুস সামাদ, তেজগাঁওয়ের মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট বালক কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুর রাজ্জাক ও সময় টিভির বার্তাপ্রধান তুষার আবদুল্লাহকে তিনটি পৃথক লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। “বিশ্ববার্তা” নামক নিউজ পোর্টালের সম্পাদক মুহাম্মদ আরিফুর রহমানের পক্ষে রবিবার ( ৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট শেখ ওমর শরীফ রেজিস্টার্ড ডাকযোগে লিগ্যাল নোটিশ তিনটি পাঠান।
লিগ্যাল নোটিশসমূহে বলা হয়, গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর মতিঝিলের বিআইডাব্লিউটিএ ভবনে ঢাকার চারপাশের নদীতীরে থাকা ৭৭টি মসজিদ-মাদ্রাসা, ১৪টি স্কুল-কলেজ ও ১৩টি মন্দির কর্তৃপক্ষের সাথে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে নৌপরিবহন সচিব আবদুস সামাদ বলেছিলেন, অসৎ চিন্তা থেকে এই স্থাপনাগুলো করা হয়েছে। এটা আল্লাহর বন্দেগির জন্য না। এখানে বাড়িঘর রক্ষার জন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হয়েছে।
সেই বৈঠকে “ইসলামী চিন্তাবিদ” হিসেবে উপস্থিত মাওলানা আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন, নদীগুলোর সমস্ত জায়গায় অনুমতি না নিয়ে একেবারে কলিজার মধ্যে পিলার দিয়ে যে সমস্ত ধর্মীয় স্থাপনা তৈরি হইছে, সেগুলো সরিয়ে দেয়া ১৬ আনা শুদ্ধ।
ওই বৈঠক নিয়ে করা সময় টিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে মসজিদসমূহকে “অবৈধ” হিসেবে উল্লেখ করে মন্তব্য করা হয়, ঢাকার চারপাশের নদী দখল করতে অবৈধ দখলদাররা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। [সময় টিভি অনলাইনের সেই প্রতিবেদনের লিংক: www.archive.is/J9axa]
নৌপরিবহন সচিব আবদুস সামাদকে দেয়া লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সাথে বৈধভাবে ওয়াকফকৃত জমিতে নির্মিত মসজিদের কোনো সম্পর্ক নেই। নৌপরিবহন সচিব সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ও অসম্মানজনকভাবে নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সাথে মসজিদের প্রসঙ্গটি জড়িয়ে বলেছেন “অসৎ চিন্তা থেকে এই স্থাপনাগুলো করা হয়েছে”! অথচ বাংলাদেশে ওয়াকফকৃত সম্পত্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন আছে এবং মসজিদসমূহ বাংলাদেশে প্রচলিত আইনের আওতায়ই নির্মিত হয়। মসজিদ স্থাপনের আইনসম্মত বিষয়ের সাথে অবৈধভাবে জমি দখলকে সম্পর্কিত করে নৌপরিবহন সচিব কোটি কোটি মুসলিমের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন।
তেজগাঁওয়ের মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট বালক কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুর রাজ্জাককে দেয়া লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, তাকে সেই সভায় একজন আলেম হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তার দায়িত্ব ছিল মসজিদসমূহ অপসারণ/ভেঙে ফেলার বিষয়ে ইসলামের সঠিক অবস্থানটি তুলে ধরা। অথচ তিনি সেই সভায় মসজিদ ধ্বংস করার বৈধতা দিয়ে এসেছেন – যা ইসলামী মতামতের সম্পূর্ণ বিপরীত।
মাওলানাকে দেয়া নোটিশে দারুল উলুম দেওবন্দের অফিশিয়াল ফতোয়া উদ্ধৃত করে বলা হয়, “কোনো স্থানে একবার মসজিদ নির্মিত হয়ে গেলে তা চিরকাল মসজিদ হিসেবেই থেকে যাবে। সুতরাং রাস্তা সম্প্রসারণ করার জন্য মসজিদটি ভেঙে ফেলা কিংবা বা অন্যত্র স্থানান্তর করা জায়েজ নয়।” [দারুল উলুম দেওবন্দের সেই ফতোয়ার লিংক: www.archive.is/CkaR9]
সময় টিভির বার্তাপ্রধান তুষার আবদুল্লাহকে দেয়া লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, সময় টিভির উচিত ছিল কেবল সভার সংবাদ তুলে ধরা। কিন্তু সময় টিভি তাদের প্রতিবেদনে নিজস্ব মতামত দিয়ে বলে যে, সেই মসজিদগুলো অবৈধ স্থাপনা এবং মসজিদগুলো অবৈধ নদীদখলের ঢাল!
বৈধভাবে ওয়াকফকৃত জমিতে স্থাপিত পবিত্র মসজিদসমূহকে “অবৈধ নদীদখলের ঢাল” হিসেবে উল্লেখ করে সময় টিভি কোটি কোটি মুসলিমের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে।
নোটিশদাতা বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করাটা বাংলাদশে প্রচলিত দণ্ডবিধির ২৯৫(ক) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ডিজিটাল মাধ্যমে এমন ধর্মীয় অবমাননামূলক তথ্য সম্প্রচার করাটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৮ ধারার অধীনে অপরাধ।
নোটিশে বলা হয়, নোটিশ পাওয়ার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশগ্রহীতাগণ সুস্পষ্ট বিবৃতি দিয়ে মসজিদ বিষয়ক মন্তব্যসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় নোটিশদাতা আইনের আশ্রয় নেবেন বলে নোটিশসমূহে বলা হয়েছে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা