দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে গঠিত হল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)’র নির্বাচন কমিশন। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান চৌধুরীকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনোনীত করা হয়েছে বলে বুধবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।উপাচার্য বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরো দুজন সহকারী নির্বাচন কমিশনার বাছাই করে জাকসুর পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাকসু নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর বিষয়। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ জাকসুর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চাই।’এদিকে জাকসু নির্বাচন নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যোগ্য এবং অভিজ্ঞ একজন শিক্ষকের হাতে নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এখন জাকসু নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সকল ছাত্র সংগঠনের সাথে জাকসু নিয়ে আমরা নিয়মিত আলোচনা করছি। সকলের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ও সম্পর্ক পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো।’ তবে এখনো পর্যন্ত জাকসু নির্বাচনের ইতিবাচক পরিবেশ পাননি বলে অভিযোগ করেছে শাখা ছাত্রদল। ক্যাম্পাসে নিরাপদে রাজনীতি করা নিয়ে সংশয়ে আছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মো সোহেল রানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেটি নিশ্চিত হয়নি। তার উপরে আমাদের সাথে আলোচনা না করেই একজন সরকার দলীয় সমর্থক শিক্ষকের হাতে নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ যেভাবে অস্ত্রের মহড়া দেয়, মিষ্টির দোকানে সামান্য গায়ে ধাক্কা লাগার কারণে প্রকাশ্যে গোলাগুলি করে সেখানে আমরা কিভাবে নিশ্চিন্ত মনে জাকসু নির্বাচনে অংশ নিবো?’ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাকসুর জন্য ক্যাম্পাস পুরোপুরি প্রস্তুত না হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসন আমাদেরকে যে রূপ আশ্বাস দিয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। ছাত্রদলসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো যেন নির্বিঘ্নে ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসন আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নির্বাচনের আগে সবগুলো হলে তল্লাশি চালিয়ে ছাত্রলীগের কাছে থাকা অস্ত্র উদ্ধার এবং হলগুলোকে অবৈধ ছাত্র মুক্ত করার দাবি জানিয়েছি।’ কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জাবি শাখার মুখপাত্র খান মুনতাসির আরমান বলেন, ‘ক্যাম্পাস এখনো জাকসু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয়। কমিশনকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষ করে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সহাবস্থান নেই। আবাসিক হলগুলোর প্রশাসন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি। হলগুলোতে প্রশাসন বলতে কিছু নেই। পুরোটাই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। ছাত্রলীগের অনেক অছাত্র (যাদের পড়াশুনা শেষ) নেতাকর্মী এখনো হলগুলোতে অবস্থান করছে। যাদের অনেকেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত।’ এছাড়াও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি সরকারদলীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ক্যাম্পাসের আওয়ামী ঘরানার একজন প্রভাবশালী নেতাও তিনি। এত দীর্ঘ সময় পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাকসু নির্বাচন একজন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ শিক্ষকের অধীনে না হয়ে দলীয় শিক্ষকের অধীনে হওয়া অবশ্যই সমালোচনা হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’ NB:This post is copied from bd-pratidin