গণপরিবহনে নারী ও কন্যা শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর শাখার আন্দোলন উপ-পরিষদের উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর শাখার মাহাতাবুন নেসা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুস। ঢাকা মহানগর শাখার আন্দোলন সম্পাদক জুয়েলা জেবুননেসা খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী।
অতিথিবৃন্দের আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক , কলামিষ্ট, গবেষক, প্রাবন্ধিক, লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ (ঢা:বি)অধ্যাপক ড. এ. আই. মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাব এর সভাপতি দৈনিক যুগান্তর এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ, শিক্ষা ও কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞানী (ঢা:বি:) ড. মেহজাবীন হক, যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক, ডাইরেক্টর অব ইনফোর্সমেন্ট (বিআরটিএ) মাসুদুর রহমান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক’র সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মোখলেসুর রহমান, রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নির্বাহী সম্পাদক সাইদুর রহমান। সভা সঞ্চালনা করেন মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু ধর।
আলোচনায় সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বাংলাদেশে সব আইন কানুন আছে। কোন কােন স্থানে কোন বিশেষ অপরাধ প্রবণতাটা বাড়ে। এখন বাংলাদেশে বাসে ধর্ষণ এবং হয়রানিটা বেড়েছে। এটা প্রতিরোধে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে যদি সরকার না থাকে, এটার যদি কমিটমেন্ট না থাকে, যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে। তাহলে বাসে নারীদের হয়রানিগুলোর সমাধান হবেনা।
তিনি বলেন, গণ পরিবহনের হয়রানি নিয়ে সকলেই আমরা উদ্বেগের মধ্যে আছি। এই মাসের শেষ সপ্তাহে এই বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মিটিং আছে। সেখানে কি হবে সেটা আমি আপনাদের আবার জানাব।
দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, এখন যেমন নারীর আয় বেড়েছে তেমনি নারী নিগ্রহ বেড়েছে। এই ধরণের পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো তা কেউ বলতে পারেনা। সেই পরিস্থিতি বদলানোর জন্য সবার কি করণীয়, সেটা নির্ধারণ করার সময় এসেছে। এককভাবে কোন একটি যায়গা থেকে আমরা যদি শতভাগ শুদ্ধ হই তাতে কিন্তু কোন লাভ হবে না।
তিনি বলেন, দেশে কয়জন নারী গাড়িচালক রয়েছে? কয়েকলক্ষ নারী গাড়ি চালক আছে। কিন্তু মাত্র আড়াই হাজার নারীর লাইসেন্স রয়েছে। যারা গাড়ি চালাতে পারে। নারীবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের জন্য আমাদের অনেক কিছু করার আছে। সেটা দেশীয় আইনের প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক আইনের প্রেক্ষাপটে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র বাণিজ্যিক চিন্তা না, হৃদয় থেকে আবেগ থেকে, প্রয়োজন থেকে আমাদের চিন্তাটা করতে হবে। যে আন্দোলনটা একসময় শুরু হয়েছিল ৭০ এর দশক থেকে। স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্য দিয়ে শানিত হয়েছে। সেই আন্দোলন আমরা কেন জানি ঝিমিয়ে পড়েছি। শুধু মহিলা আন্দােলনের কথা বলি না। শিক্ষা আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন। পেশাজীবীদের আন্দোলন। শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনগুলো আজকে কোথায়? একজন আদমজীর আন্দোলন সারাদেশকে কাঁপিয়ে দিতে পারত। সেই আন্দোলন কি এখন বাংলাদেশে আছে? সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্ররা কাঁপিয়ে তুলত। আকাশ সংস্কৃতি আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। আমরা ছেলেমেয়েদের থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি। আমরা মনে হয় এই বিষয়ে মনোনিবেশ করা দরকার। আমি বলছি না যে, যারা গাড়িতে ইভটিজিং করা যাবেনা। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইজন্য আমি একটা কথা আগে বলেছি, এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছাটা অনেক বেশি প্রয়োজন। প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা প্রয়োজন। আমাদের নিজেদের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার শিক্ষাটা বড় বেশি প্রয়োজন। রাজনৈতিক সদিচ্ছাটা আমাদের অনেক কিছু করে তার প্রমাণ তো আমরা সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কয়েকটি ঘটনায় আমরা পেয়েছি। রাষ্ট্র যখন সম্পৃক্ত হয়েছে তখন কিন্তু ধর্ষক পার পায়নি। ধর্ষক গ্রেফতার হয়েছে। রাষ্ট্র যখন সম্পৃক্ত হয়েছে তখন বিচার ত্বরান্বিত হয়েছে। রাষ্ট্র যখন সম্পৃক্ত হয়েছে তখন আমরা দেখেছি চার্জশীট একমাস দুই মাসের মধ্যে দেয়া হয়েছে। তাহলে সেই যায়গাটাই আমাদের যেতে হবে। সেক্ষেত্রে আমি একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমাদের যা করার আমরা সব করব। বাংলাদেশের গণমাধ্যম সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনার আন্দোলনে আছে। এবং সবসময় নারী অধিকার আন্দোলনের পক্ষে আছে। এতে কোন ব্যত্যয় কখনো ঘটে নাই।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা