খুলনার জিআরপি (রেলওয়ে) থানায় তিন সন্তানের জননীকে (৩৫) গণধর্ষণের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ দুপুরে পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে। বাকি দুই সদস্যরা হলেন কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ.ম. কামাল হোসেইন ও দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বাহারুল ইসলাম।
এদিকে, ধর্ষণের শিকার ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সোমবার দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ওই নারীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, ‘খুলনা রেলওয়ে থানা হাজতে রেখে ৬/৭ জন পুলিশ তাকে ধর্ষণ ও মারপিট করে- মর্মে খুলনার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দরখাস্ত করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং তাকে ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার সঠিক তথ্য উদঘাটনের লক্ষে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ঘটনাটি সরেজমিন অনুসন্ধানপূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ৭ দিনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের গাইনী চিকিৎসকরা পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। তার বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তবে রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভুক্তভোগীর বড় বোন অভিযোগ করে বলেন, তার বোন অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার যশোরে ডাক্তার দেখাতে যায়। শুক্রবার ট্রেনযোগে খুলনায় ফেরার পথে ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাকে মোবাইল চুরির অভিযোগে থানায় নিয়ে যায়। গভীর রাতে জিআরপি পুলিশের ওসি ওসমান গনি পাঠানসহ ৫ পুলিশ সদস্য থানার মধ্যে তাকে ধর্ষণসহ মারধর করে। তাকে দীর্ঘক্ষণ বিবস্ত্র অবস্থায় হাজতে রাখা হয়। পরদিন শনিবার ৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ মাদক মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করে। আদালতে তার জামিন শুনানীকালে জিআরপি থানায় পুলিশের গণধর্ষণের বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরে তার বোন। এরপর আদালত তার ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর বড় ভাই (মো. সেলিম) বলেন, বোনের গ্রেফতারের খবর পেয়ে জিআরপি থানায় গেলে ওসি ওসমান গনি পাঠান দেড় লাখ টাকা দিলে বোনকে ছেড়ে দেবে বলে জানায়। গরিব মানুষ। এত টাকা দেবে কোত্থেকে প্রশ্ন সেলিমের। তিনি বলেন, পরের দিন ভোরে থানায় গিয়ে দেখি বোনের চেহারা বিধ্বস্ত। বোন ঠিকমত দাঁড়াতেও পারছিলো না। আরেক নিকটাত্মীয় জানান, ধর্ষণের পর তাকে বেধড়ক মারপিটও করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২ আগষ্ট ঘটনার রাতে খুলনা রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠান, এসআই গৌতম কুমার পাল, এসআই নাজমুল হাসান, কনস্টেবল মিজান, হারুন, মফিজ, আব্দুল কুদ্দুস, আলাউদ্দিন, কাজলসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ওসি ওসমান গনি পাঠান ও এসআই গৌতমসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও মারপিটের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
অভিযোগ অস্বীকার করে জিআরপি থানার ওসি ওসমান গনি পাঠান বলেন, গ্রেফতারকৃত নারী একজন মাদক ব্যবসায়ী। সে মাদক মামলা থেকে বাঁচতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ করেছে।
NB:This post is copied from Bd-pratidin
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা