ফজলুল বারী : কোভিড-নাইনটিন তথা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেখানে মানুষ জমা হবার সম্ভাবনা সেটিকেই ঝুঁকিপূর্ন বিবেচনায় নিয়ে এমন সবকিছু বন্ধের ঘোষনা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এর মানদন্ড হিসাবে বলা হয়েছে সোশ্যাল ডিসটেন্স। এটিকে হেলদি ডিসটেন্সও বলা হয়েছে। আপনি এক জায়গায় জমা হতে পারবেন। এসবের কোন কোন ক্ষেত্রে দূরত্ব থাকতে হবে দেড় বর্গ মিটার। কোন কোন ক্ষেত্রে ৪ বর্গ মিটার দূরত্ব থাকতে হবে। এ কথা বলে চার্চও বন্ধ করেছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু মসজিদ বন্ধের কথা বলেনি। চার্চ বন্ধ মানে মসজিদও বন্ধ থাকবে। কারন এই দূরত্ব রেখে মসজিদে জামাতে নামাজ হয়না। শেষকৃত্যের ব্যাপারে বলা হয়েছে সেখানেও সোশ্যাল ডিসটেন্স বজায় রাখতে হবে। কোভিড-নাইনটিন তথা করোনা ভাইরাসে অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা রবিবার পর্যন্ত ১৩৫০ ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রশান্তপাড়ের দেশটার নানাকিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
করোনা ভীতিতে অস্ট্রেলিয়ায় আগেই সমুদ্র সৈকত-খেলার মাঠসহ নানাকিছু আগেই বন্ধ হয়েছে। এখন বন্ধ হলো বার-ক্লাব-নাইট ক্লাব, ক্যাফে-রেষ্টুরেন্ট-সিনেমা হল-ক্যাসিনো-জিম সহ নানাকিছু। রেষ্টুরেন্ট থেকে টেইকওয়ে খাবার নেয়া যাবে। কিন্তু সেখানে বসে খাওয়ার সুযোগ থাকবেনা। নতুন ঘোষনার কারনে সিডনির লাকেম্বার বাঙালি হাব এলাকার যে সব বাংলাদেশি রেষ্টুরেন্ট আছে এর বেশিরভাগ বন্ধ হয়ে যাবে। কারন এসব রেষ্টুরেন্টে বাংলাদেশিরা দল বেঁধে আড্ডা মারতে মারতে খেতে ভালোবাসেন। টেইকওয়ে নেবার খদ্দের এগুলোর কম। ম্যাকডোনাল্ডের মতো খাবার দোকানগুলো আগেই সেখানে বসে খাওয়া বন্ধ করেছে। এখন সে সব দোকানে শুধু ড্রাইভ থ্রু এবং ডেলিভারি সার্ভিস চালু আছে। আপনি গাড়িতে বা বাড়িতে বসে অর্ডার দেবেন, গাড়িতে বসেই পেমেন্ট দিয়ে খাবার নিয়ে আসবেন অথবা ডেলিভারি সার্ভিসের মাধ্যমে খাবার নেবেন বাসায় অথবা আপনার কর্মস্থলে। এককথায় যেখানেই সামাজিক সমাবেশ হতে পারে সেটাই বন্ধ করা হয়েছে।
সোমবার দুপুর থেকে অস্ট্রেলিয়ার এসব বন্ধ কড়াকড়িভাবে শুরু হবে। তবে এখনই স্কুল বন্ধ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিশন বলেছেন, এখন স্কুল বন্ধ করতে গেলে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বাবা-মা’র সঙ্গে শপিংমল মল নানা জায়গায় চলে যেতে পারে, যা হবে বেশি ঝুঁকিপূর্ন। চলতি টার্ম শেষে স্কুল হলিডে উপলক্ষে স্কুল বন্ধ হবে। কিন্তু হলিডের পর আবার খুলবে স্কুল। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ার স্কুলগুলো প্রতি দশ সপ্তাহ পরপর দু’সপ্তাহের জন্যে বন্ধ থাকে।
এরমাঝে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে দুয়ার বন্ধ করেছে চারপাশে সাগর বিচ্ছিন্ন এই দেশ। এখন শুধু অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরাই এখানে আসতে পারেন। কিন্তু দেশটির বিভিন্ন রাজ্যও এখন পরষ্পরের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করছে। তাসমানিয়া তাদের সীমান্ত বন্ধ করেছে আগেই। দক্ষিন ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় মঙ্গলবার বিকেল ৪ টার পর সন্তোষজনক কারন ছাড়া কেউ আর ঢুকতে পারবেননা। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় প্রিমিয়ার এই কঠিন সিদ্ধান্তের কারন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, আমরা একটি যুদ্ধের মধ্যে আছি। রবিবারের ঘোষনার পর সুপার মার্কেট, ব্যাংক, পেট্রোল স্টেশন, ফার্মেসি, কনভেনিয়েন্স স্টোর, ফ্রেইট এন্ড লজিটিক্স, ফুড ডেলিভারির মতো জরুরি সেবা সার্ভিস শুধু খোলা থাকবে। করোনা আতঙ্কের কারনে প্যানিং বায়িং’এর অস্ট্রেলিয়ায় সুপার মার্কেটগুলোতে প্রতিদিন বিস্তর ভিড় ও খাবার-টয়লেট টিস্যু সহ নানাকিছু রেক খালি হয়ে যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার এসব লকডাউনের সিদ্ধান্তের আগে এখানে সরকার যা করেছে তা যে কোন গনতন্ত্র প্রিয় মানুষের ভালো লাগবে। জরুরি এসব সিদ্ধান্ত নেবার আগে সরকার বৈঠক করেছে বিরোধীদলের সঙ্গে। বিরোধী দলের নেতা এন্থনি আলবানি বলেছেন করোনা যুদ্ধ সামাল দিতে তারা সরকারকে সমর্থন করবে। সাধারনত প্রতি মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক হয়। জরুরি সিদ্ধান্তমালা চূড়ান্ত করতে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক এগিয়ে এনে রবিবার সন্ধ্যায় করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়া সরকার জরুরি কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরমাঝে গুরুত্বপূর্ন হলো বেকার ভাতা দ্বিগুন করা। সাধারন একজন অস্ট্রেলিয়ান বেকার নাগরিক প্রতি দু’সপ্তাহ পরপর সরকার থেকে সাড়ে পাঁচশ ডলারের মতো ভাতা পান। এই ভাতার পরিমানকে খুবই সামান্য বলে বিরোধীদল সমালোচনা করে আসছিল।
সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকার বেকার ভাতার পরিমান দ্বিগুন করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে আগামী ছয় মাস। অর্থাৎ এই ছয় মাস বেকার অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকরা সরকার থেকে প্রতি দুই সপ্তাহে এগারশ ডলারের বেশি ভাতা সরকার থেকে পাবেন। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের বেকারত্বের সময়ে নিউস্টার্ট এলাউন্স নামের বেকারভাতা দেয়া হয়। ওই বেকারভাতা দেবার সময়টায় তাদেরকে নতুন চাকরি পেতে সহায়তা করে সরকার নিযুক্ত জব এজেন্সি। এছাড়া পেনশনার, শারীরিক প্রতিবন্ধী, নিম্ন আয়ের যে সব অভিভাবক শিশু অথবা স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের লালন পালন করেন তাদেরকে নিয়মিত ভাতার সঙ্গে স্টিমুলেস ভাতা হিসাবে ৩১ মার্চ নাগাদ অতিরিক্ত ৭৫০ ডলার দেয়া হবে।
করোনা পরিস্থিতির কারনে এরমাঝে বিস্তর লোক কাজ হারিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। আরও অনেক লোক কাজ হারাবেন। এই মুহুর্তে বেকারভাতা দ্বিগুন করার সিদ্ধান্তটি ছিল গুরুত্বপূর্ন। বাংলাদেশ সহ যে সব দেশের ছাত্রছাত্রীরা এদেশের রেষ্টুরেন্ট সহ নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন পড়াশুনা করেন তাদের জন্যে কঠিন একটি সময় সামনে। তাদের অনেকেই এরমাঝে কাজ হারিয়েছেন। আরও অনেকে কাজ হারাবেন সামনে। সৃষ্ট পরিস্থিতির কারনে ছোট ব্যবসায়ী যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাদের ব্যবসা চালু রাখতে কর্মচারীদের বেতন দিতে নানান প্রনোদনা ভাতার ঘোষনা দিয়েছে সরকার। সব সহায়তা চিন্তায় আগামী ৬ মাসকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি কতদিনে স্বাভাবিক হবে তা এখনই কেউ নিশ্চিত বলতে পারছেনা।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা