নামটি পড়েই যে শব্দটা মাথায় এসেছিল, তা হচ্ছে নীলাঞ্জনা। কিন্তু সে কল্পনায় বাঁধ দিতে হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে। একে তো সারার (উপনাম) চোখের রং বর্ণনা করা হয়নি কোঠাও। দ্বিতীয় ‘দ্য ব্লু গার্ল’এর বাংলা নীলাঞ্জনা নয়। আর নীলাঞ্জনা শব্দটা বাঙালি মনে যে কারণে গেঁথে আছে, সংবাদটা তার ঠিক উল্টো অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। ক্ষোভ, ক্রোধ, বিস্ময়—যে অনুভূতিই বেছে নিন না কেন, সেটা দিয়ে সারার মৃত্যুর খবরটা মেনে নেওয়া যায় না।
সংবাদটা পড়েই থমকে যেতে হবে সবাইকে। এই আধুনিক যুগে এমন কিছু চিন্তা করাটাই কঠিন। ইরানে এক নারী ফুটবল ভক্ত আত্মহত্যা করেছেন। কারণ, তাঁকে একটি নির্দিষ্ট অপরাধে ছয় মাসের জন্য জেলে যেতে হবে। তাঁর ‘অপরাধ’, মেয়ে হয়েও ফুটবল স্টেডিয়ামে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে জেলে ঢোকানোর জন্য সরাসরি এ অভিযোগ তোলা হয়নি। নীল মেয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘সঠিকভাবে হিজাব পরেননি।’
সারাকে ইরানে ‘দ্য ব্লু গার্ল’ ডাকা হচ্ছে। কারণ তাঁর প্রিয় দল ছিল তেহরানের এস্তেঘলাল ফুটবল ক্লাব। এ ক্লাবের নীল রঙ্গের সঙ্গে মিল রেখেই এই ফুটবল ভক্তকে ডাকা হচ্ছে নীল মেয়ে বলে। ২৯ বছর বয়সী সারা যে তাঁর জীবনটাই দিয়ে দিলেন এস্তেঘলাল ক্লাবের জন্য। গত ১২ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল আইন ক্লাবের সঙ্গে ম্যাচ ছিল এস্তেঘলালের। মহাদেশিয় পর্যায়ের এ খেলা দেখার জন্য আজাদি স্টেডিয়ামে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সরকার নিযুক্ত মরালিটি (নৈতিকতা) পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়।
সারার বোনের দাবি পুলিশ সারাকে কারচাক জেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তারপর জামিনে বের হন সারা। পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়ে বাইপোলার রোগী সারার অবস্থার অবনতি হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাঁর জব্দ মোবাইল নিতে গিয়ে সারা জানতে পারেন, শাস্তি এখনো শেষ হয়নি। আবার ছয় মাসের জন্য জেলে যেতে হবে তাঁকে। এ কথা শুনে ক্ষুব্ধ সারা কোর্ট হাউসের সামনে গায়ে তেল ঢেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন। ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া সারাকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি। আজ ইরানের ফুটবল ভক্ত, সমর্থকদের কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছেন চিরতরে।
১৯৮১ সাল থেকেই ইরান ফুটবল ও অন্য স্টেডিয়ামে মেয়েদের ঢোকা নিষিদ্ধ করেছে। ২০১৮ বিশ্বকাপে এ কারণেই ইরানের কিছু নারী সমর্থকদের উপস্থিতি বেশ আলোড়ন তুলেছিল। সারার এ ঘটনায় ইরানের এ অবস্থায় ফিফার আইন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আবার। কারণ, ফিফার আইন অনুযায়ী নারীদের প্রতি যে কোনো ধরনের বৈষম্য নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইরান জাতীয় দলের অধিনায়ক মাসুদ শোজায়েইও তাঁর দেশের এই অলিখিত আইন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইনস্টাগ্রামের পোস্টে, ‘মেয়েদের জন্য পুরোনো সব নিয়মে আমরা বিস্মিত। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জেনে চমকে যাবে যে আমাদের সময়ে নারীরা খেলা দেখতে যেতে পারত না। এসব বিধিনিষেধের জন্ম হয়েছিল পচা ও জঘন্য সব পুরোনো দিনের চিন্তা থেকে। এবং আগামী প্রজন্মের কাছ এসব দুর্বোধ্য।’
গত জুনে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ানি ইনফান্তিনো ইরানি ফেডারেশনকে সতর্ক করেছিলেন এ বিষয়ে। বলা হয়েছিল, মেয়েদের স্টেডিয়ামে প্রবেশাধিকার না দিলে শাস্তি পাবে তারা। কিন্তু আগস্টেও এক সংবাদকর্মীসহ চার নারীকে স্টেডিয়ামে প্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ফিফার চাপাচাপিতে ইরান বলেছে আজাদি স্টেডিয়ামে ইরানের পরের ম্যাচে নারী দর্শক ঢুকতে পারবেন। যদি সেটা খেলোয়াড়দের পরিবারেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ফলে সমস্যার সমাধান এখনো মিলছে না।
ফিফা ইরানকে অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছে নারীদের ফুটবল মাঠে প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত করার জন্য। না হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই নিষিদ্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর আগেই যে ভয়ংকর এক দুর্ঘটনা ঘটে গেল। সূত্র: রেডিও ফর্দা, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
NB:This post is copied from prothomalo.com
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা