আজ উড়তে যাচ্ছে ভারতের চন্দ্রযান। সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়া ভারতের প্রথম চন্দ্রযানে হবে এই চন্দ্রাভিযান। চাঁদের অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে এ অভিযান চালানো হবে। এটাই হবে চাঁদে ভারতের প্রথম পা। দুই ‘রকেট মানবী’র কারিশমায় এই অভিযান অন্য মাত্রা পেয়েছে। প্রথমজন হলেন এম ভনিতা। ইসরোর এই প্রোজেক্টের ডিরেক্টর তিনি। আরেক নারী রিতু কড়িঢাল, দ্বিতীয় চন্দ্রযানের মিশন ডিরেক্টর। এই বিষয়টিকে ভারতে নারী শক্তির সর্বোচ্চ উত্থানের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।
রবিবার নির্ধারিত ভারতীয় সময় রাত ২টা ৫১ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতিশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে ভারতের মাটি ছেড়ে উড়ে যাবে দ্বিতীয় চন্দ্রযান ‘ফ্যাট বয়’। এর ভেতরে থাকবে অরবিটর, বিক্রম ল্যান্ডার ও প্রজ্ঞান রোভার। উড়ার ১৬ মিনিটের মাথায় পৃথিবীর নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছাবে ফ্যাট বয়। পৃথিবীর কক্ষপথে চন্দ্রযানকে বুস্ট করে দিয়ে বিচ্ছিন্ন হবে এটা। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের কক্ষপথ থেকে ধীরে ধীরে সবচেয়ে দূরের কক্ষপথে পৌঁছে তা চাঁদের কক্ষপথে ট্রানজিট হবে। সেখান থেকে উল্টো গতিতে ঘুরে চাঁদের মাটির কাছে পৌঁছে চার দিনের মাথায় তার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে নেমে বিচ্ছিন্ন হবে অরবিটর। এক বছর ধরে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলবে তার গবেষণা।
অন্যদিকে, ল্যান্ডার আলতো করে লাফিয়ে পড়বে চাঁদের বুকে। চার ঘণ্টা পর তার গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসবে ছয় চাকার রোভার। ল্যান্ডার ও রোভারের গায়ে আঁকা রয়েছে ভারতের জাতীয় পতাকা। রোভার চাকায় আঁকা রয়েছে অশোক চক্র। জাতীয় প্রযুক্তির সবচেয়ে সেরা নিশানা বহন করবে এটি। ইসরোর গবেষকদের কথায়, সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত এটি। পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছানোর এই সময়কাল ৫২ দিন। যা গবেষকদের কথায়, এখনও পর্যন্ত ভারতীয় প্রযুক্তিতে অন্যতম জটিল প্রক্রিয়া অবলম্বন করে এভাবে কোনও অভিযান হয়নি। বলা ভালো, সাহস দেখাতে পারেনি ভারত। সেই কারণে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মেক ইন্ডিয়া’স্লোগানের জয়জয়কার।
একটা সময় যখন ল্যান্ডার ও অরবিটর বানায় ভারত। রোভার বানাবে রাশিয়া। তাদের একটি অভিযান ব্যর্থ হওয়াতেই সম্পূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় ভারত। তৈরি হয় ৩. ৮ টন ওজনের সম্পূর্ণ চন্দ্রযান। জয়জয়কার অন্যদিক থেকেও। মনে রাখতে হবে প্রথমেই বলা আছে নারী শক্তির উত্থানের কথা। তার নিদর্শনের দিকে যদি আমরা তাকাই, সবার আগে মনে রাখতে হবে মঙ্গল অভিযানের কথা। যার পোশাকি নাম মার্স অরবিটর মিশন। সংক্ষেপে ‘মম’। ২০১৪-র যে অভিযানের এমন নাম থেকেই ইসরোর উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলের কক্ষপথে এমন বিশেষ নামের একটি অরবিটর পাঠিয়েই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ইসরো কোন পথে এগোচ্ছে। ভারতের মহাজাগতিক গবেষণা সংস্থা সে সময় একটি ছবি প্রকাশ করেছিল। ভনিতা আর রিতু পরস্পরকে জড়িয়ে উল্লাস করছেন। হাততালিতে ফেটে পড়ছে ইসরোর কন্ট্রোল রুম। চাঁদ নিয়ে নতুন গবেষণা থেকে নতুন খোঁজ হোক, বা তার মহাজাগতিক অবস্থিতির রহস্যের সন্ধান, সবটাই যে এই দুই ‘রকেট মানবী’র হাতে যেতে চলেছে সেটা পরিষ্কার হয়ে যায় আরও কিছুদিন পর।
২০১৭-১৮তেই একপ্রকার চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল ভারতে চাঁদ নিয়ে গবেষণা কোন পথে যেতে চলেছে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের হাত থেকে কনিষ্ঠতম কৃতী বিজ্ঞানীর পুরস্কার নেওয়ার সময়েই বোধহয় নিজের ভাগ্য নিজে নির্ধারণ করে নিয়েছিলেন রিতু। প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ভনিতাও সেরা বিজ্ঞানীর পুরস্কার পেয়েছেন। সেই দুই সেরার হাতেই এবার দায়িত্ব পড়েছে এই অভিযান নিয়ন্ত্রণের। এখানেই বোধহয় বিক্রম সারাভাইয়েরও সাফল্য। যাঁর হাতে তৈরি হয়ে আজ এই জায়গায় এসেছে ইসরো। তাঁর দেয়া নামেই এবার তাই নাম রাখা হয়েছে ল্যান্ডারের। ইসরোর কথায়, চাঁদে নামার পর আরও একটি জটিল প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে এই অভিযানের। অরবিটর যেখানে এক বছর ধরে চাঁদের ম্যাপিং করে তার বৈশিষ্ট্য বোঝার চেষ্টা করবে, সেখানে ল্যান্ডার ও রোভারের আয়ু মাত্র ১৪ দিন, যা এক চন্দ্রদিনের সমান।
বিড়লা নভোসেন্টারের কর্মকর্তা তথা বিশিষ্ট মহাকাশ গবেষক দেবীপ্রসাদ দুয়ারির বলেন, ভারতের প্রথম চাঁদের অভিযানই সেখানে পানির প্রমাণ দিয়েছিল। দ্বিতীয় অভিযান সেখানে পানির অনুসন্ধান যেমন করবেই, তেমনই করবে চাঁদের পৃষ্ঠের একাধিক পরীক্ষা। সেখানে বায়ুমণ্ডল কেমন, চাঁদে কম্পন হয় কি না, সেখানে কী কী খনিজ রয়েছে সবই দেখা হবে।
তিনি বলছেন, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটানা সূর্যকিরণ পড়েনি। ফলে চাঁদের গভীর গর্ভের অন্ধকারে সম্ভবত কোনও রাসায়নিক পরিবর্তনও হয়নি। সেই কারণেই সৃষ্টির আদি রহস্যের অনেক দিক উন্মোচিত হতে পারে।
NB:This post is copied from kalerkantho
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা