শিক্ষক দিবস এমন একটা দিন যা ছাত্রাবস্থা শেষ হয়ে গেলেও মুছে যায় না। বাবা মায়ের পর সন্তান যাঁদের কাছে সব থেকে বেশি সময় কাটায় তাঁরাই শিক্ষক। তাই এই দিনটা সেই মানুষদের জন্য যারা আমাদের গড়ে তুলেছেন। শুধু বইয়ের শিক্ষায় নয় জীবনের পাঠে দীক্ষিত করেছেন। ভারতে ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন উপলক্ষ্যেই ৫ সেপ্টেম্বর পালিত হয় শিক্ষক দিবস। ১৮৮৮ সালের এই দিনেই জন্মগ্রহণ করেন ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি রাধাকৃষ্ণন। তাঁর জন্মের দিনটিকেই শিক্ষকদের সম্মান জানানোর জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে।
১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর সকল শিক্ষককে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ বারের বিশ্ব শিক্ষক দিবস এমন এক সময় দেশে পালিত হয়েছে যখন দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পৃথক বেতন কাঠামোসহ কয়েকটি দাবিতে গত প্রায় চার মাস ধরে আন্দোলন করছেন। শিক্ষকেরা আন্দোলন ও কর্মবিরতি করছেন ও লড়ছেন নিজেদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধির দাবি দাওয়া নিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। সম্মানীয় শিক্ষকগণ নিজেদের মর্যাদার জন্য আন্দোলন করছেন এটা আসলেই দুঃখজনক।
যা হোক, বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আমার সাম্প্রতিক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেদের দাবি দাওয়া বা আন্দোলনের বিষয় নিয়ে নয়। মূলত দেশের আপামর সকল শিক্ষকদের নিয়ে, যারা শিক্ষা দিয়ে জ্ঞান দিয়ে বুদ্ধি দিয়ে আমাদের ভবিষ্যতের প্রজন্মদের তিল তিল করে গড়ে তুলছেন। সেই সব শিক্ষকদের নিয়ে যারা শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রম দিচ্ছেন পাঠ দিচ্ছেন পথ দেখাচ্ছেন যাতে করে ছাত্ররা আগামীদিনে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে মানুষের মতো মানুষ হয়ে। আমরা শিক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় বলে ভেবে থাকি, আমরা বলি শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর তাই যদি হয় তাহলে সে শিক্ষার মেরুদণ্ড ঠিক করে রাখছেন কে? আমার তো মনে হয় ঠিক করে রাখছে আমাদের নিচের স্তরের শিক্ষালয়গুলো ও সেখানকার শিক্ষকেরা। আমাদের পাঠশালা, মাদ্রাসা-মক্তব, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেরা জাতির মেরুদণ্ডকে শক্ত করে সোজা করে রাখার নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় তাহলে ওই সব শিক্ষকেরা যারা জাতির মেরুদণ্ডকে সোজা করে দাঁড় করে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আমাদের সমাজে তাদের অবস্থান কি? আমরা তাদের কোথায় স্থান দিচ্ছি? কীভাবে মূল্যায়ন করছি? শিক্ষক হিসেবে মর্যাদা সম্মান বেতন ভাতা কী সঠিক ভাবে দিতে পারছি? শিক্ষকতা একটা মহান পেশা। অনেকে আগ্রহ করে শিক্ষকতার এই মহান পেশাকে বেছে নেন। বাংলাদেশের মতো জনবহুল একটা দেশে বেশির ভাগ পরিবারের কেউ না কেউ বা আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কেউ হয়তো এই পেশায় রয়েছেন। কিন্তু আজকাল কী হচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরিতে নিয়োগে অনিয়ম হচ্ছে, বাণিজ্য হচ্ছে।
এখন প্রায়শ দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া যাচ্ছে পরীক্ষার আগে। কিন্তু এই সব কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের অধিকাংশই শিক্ষক নন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা বিভাগকে সে বিষয়টি তলিয়ে দেখা দরকার যে এসব কর্মকাণ্ডে কারা জড়িত। আমরা হয়তো একদিন এ অবস্থা থেকে উত্তরণ পাব। দেশের শিক্ষকদেরই এই সব দুর্নীতি ও খারাপ কাজকে প্রতিহত করতে হবে তাদের নিজেদের স্বার্থে। সকলের প্রচেষ্টায় অবশ্যই একদিন আমরা সফলকাম হব। আগে তো এ রকম প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটতো না। এখন কেন ঘটছে কারা করছে তা সহজেই আমাদের গুরুজনেরা আমাদের শিক্ষকেরা বের করতে পারবেন বলে বিশ্বাস।
সেই সঙ্গে এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষকদের এই হোক অঙ্গীকার যে, আমরা সকলে মিলে একটা সময়োপযোগী ও মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়তে চাই। এত প্রতিকূলতার মধ্য থেকেও যে সব শিক্ষাগুরুদের অনুপ্রেরণায় ও আশীর্বাদে আমরা যারা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি বা আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সেই সব গুরুজনদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা।
শিক্ষক শিক্ষিকার জন্য:
হে প্রিয় শিক্ষক কি দিয়ে করব আপনাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি! আমি আপনাতে আমার ভালবাসা দিয়েছি জলাঞ্জলি।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা