অনলাইন ডেস্ক
অথচ ম্যাচের শুরুটা ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। ৩য় শিরোপার লক্ষ্যে আর্জেন্টিনার মত মাঠে নেমেছিলো ফ্রান্সও। কিন্তু প্রথমার্ধটা ছিলো কেবলই আর্জেন্টিনার। বল দখল থেকে নিয়ে শুরু করে গোল মুখে আক্রমন সবই করেছে মেসি-আলভারেজরা। তারই ধারাবাহিকতায় ২১ মিনিটে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। স্পট কিক থেকে আসরে নিজের ৬ষ্ঠ গোল করেন লিও।
ফুটবলে এক গোলের ভরসা নেই। সেই চিন্তা থেকেই ব্যবধান বাড়াতে একের পর এক আক্রমনে স্কালোনির শিষ্যরা। ৩৬ মিনিটে প্রতিপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পাল্টা আক্রমণে ব্যবধান ২-০ করেন ডি মারিয়া। মেসির টোকা থেকে ফ্রান্সের ফাঁকা রক্ষণে বল থ্রু করেন আলভারেজ। সেই থ্রু ধরে ডি বক্সে ঢুকে পরেন ম্যাকঅ্যালিস্টার। গোলরক্ষককে একা পেয়েও পোস্টে শট নেননি এই ডিফেন্ডার। গোল নিশ্চিত করতে বল বাড়িয়ে দেন ডি মারিয়ার দিকে, যাতে কোন ভুল করেননি ৪র্থ বারের মত বিশ্বকাপ খেলা এই ফরোয়ার্ড।
বিরতির পর আক্রমনে ধার বাড়ানো বদলে ফরাসিদের খুজে পাওয়াটাই দুষ্কর হয়ে ওঠে ।
৫০ মিনিটে প্রথম কর্নার ফরাসিদের। এর আগে গোলের চেষ্টা তো দূরে থাকা। আর্জেন্টিনার রক্ষণে কোনো আক্রমণই করতে পারেনি বিশ্ব আসরের গেলো বারের চ্যাম্পিয়নরা।
৬০ মিনিটে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে মেসি শট পোস্টে রাখতে পারলে হয়তো সেখানেও শেষ হয়ে যায় ফ্রান্সের শিরোপা ধরে রাখার আশা।
৯০ মিনিটের খেলায় ৭৯ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনার পোস্টে কোনো শটই নিতে পারেনি ফ্রান্স। কিন্তু ৮০ মিনিট থেকে নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্র।
৭৯ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর কোলো মোয়ানিকে ফাউল করে বসেন ওটামেন্ডি। গোটা ম্যাচে যেখানে পোস্টেই শট নিতে পারছিল না ফ্রান্স। সেখানে স্পট কিক থেকে ফরাসিদের ম্যাচে ফেরান কিলিয়ান এমবাপ্পে।
কিন্তু মাত্র ৯৭ সেকেন্ডে পাল্টে যায় ম্যাচের গোটা চিত্র। গোল খেয়ে যেনো হারিয়ে যায় আর্জেন্টিনার রক্ষণ। থুরামের ক্রস থেকে কোলো মোয়ানির চিপে ফাঁকায় দাঁড়ানো এমবাপ্পে যেনো খুঁজে বের করে। গোটা ম্যাচে যে নিজের ছাড়া হয়ে ছিলেন, সেই এমবাপ্পে তাসের ঘরের মতো দুমড়ে মুচড়ে দেন আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন। তার সাইড ভলি জালে জায়গা করে নিলে ম্যাচে সমতা ফেরে ২-২ গোলে। একই সাথে ৭ গোল করে মেসিকে পেছনে ফেলে শীর্ষ গোলদাতার জায়গা দখল করে নেন এই ফ্রেঞ্চম্যান।
অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে মেসির শট লরিস হাত না ছোঁয়ালে হয়তো অতিরিক্ত সময়ে গড়াতো না ম্যাচ।
অতিরিক্ত সময়েও যে নাটকীয়তা অপেক্ষা করছে তা কে বুঝেছিলো। ১০৮ মিনিটে লাওতারো মার্টিনেজ বল ঢুকে পড়েন বক্সে। তার করা ক্রস পান মেসি। গোল লাইনের ভেতর থেকে বল ফেরানোর চেষ্টা করেন ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার। কিন্তু প্রযুক্তি ধরিয়ে দেয় গোল।
১৯৮৬ সালে জার্মানিকে হারিয়ে যেবার শিরোপা নেয় আর্জেন্টিনা। সেবারও দুই গোলের লিড নিয়েও হারিয়েছিলো ম্যারাডোনার দল। শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে সেবার ম্যাচ জিতে শিরোপা নিশ্চিত করেছিলো তারা।
মেসির এই গোলের পর মনে হচ্ছিলো ফিরে আসছে ১৯৮৬’র বিশ্বকাপ। তবে মাঠে যে রয়েছেন আরেক সুপারস্টার। ১১৮ মিনিটে এমবাপ্পের শট আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডারের হাত লাগলে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। স্পট কিক থেকে ১৯৬৬ সালের পর বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে দলকে আবারও ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। একই সাথে ৮ গোল করে নিশ্চিত করে ফেলেন এবারের আসরের গোল্ডেন বুটটি।
শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে এমবাপ্পে প্রথম শটে দলকে এগিয়ে নিলেও পরের দুই শটে হতাশ করেন কোম্যান আর শুয়ামেনি। দারুন শুট ঠেকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন গোল্ডেন গ্লাভস জয়ী এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি, দিবালা, পারেদেস আর মন্তিয়েল বল জালে জড়ালে ৪-২ গোলে স্বপ্নের বিশ্বকাপ হাতে তোলে আর্জেন্টিনা। ফুটবল জাদুকর, ভিনগ্রহের ফুটবল যাই বলা হোক না কেনো, বিশ্বকাপ শোভা পেলো ফুটবলের শ্রেষ্ঠ ফুটবলারের হাতে।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা