আগামী ২৫-২৬ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে আজারবাইজানের বাকুতে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন তথা ন্যাম-এর ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২৪ অক্টোবর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে পৌঁছাবেন।
এবারের ন্যাম সম্মেলনে ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত বান্দুং সম্মেলনের নীতি সমূহের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে যার ভিত্তিতেই পরবর্তীতে ন্যাম প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই সম্মেলনে বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় ন্যামের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মিলিত প্রচেষ্টার বিষয়টির উপর আলোকপাত করা হচ্ছে।
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সমসাময়িক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বহুপাক্ষিকতাবাদকে গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে। সদ্য অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৭৪ তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সভাতেও বহুপাক্ষিকতাবাদের কার্যকারিতাকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল। বহুপাক্ষিক ফোরাম সমূহকে সক্রিয়করণের মাধ্যমেই বিদ্যমান সমস্যাসমূহ সমাধান করা সম্ভব। বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষের বহুপাক্ষিক ফোরাম ন্যাম। জাতিসমূহের দ্বিতীয় বৃহৎ এই সমাবেশ বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশ ন্যামে সর্বদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে ‘NAM Caucus in the Peacebuilding Commission’-এর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছে।
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের নীতিগত দিক বিবেচনায় ন্যামের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ন্যামের গুরুত্ব, সকল বিরোধ নিরসন এবং উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনায় ন্যামকে শক্তিশালীকরণের মত বিষয়সমূহের উপর আলোকপাত করবেন। এছাড়া, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসডিজি বাস্তবায়নে South-South Cooperation -এর ভূমিকার বিষয়টিও তুলে ধরবেন। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ সমূহ মোকাবেলা ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ন্যাম রাষ্ট্রসমূহের এক যোগে কাজ করার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করবেন।
এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সাথে ন্যামভুক্ত অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হতে পারে।
২৫-২৬ অক্টোবর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণের সম্মেলনের পূর্বে ২৩-২৪ অক্টোবর ন্যামভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের মন্ত্রীপর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া, ২১-২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ন্যামের Senior Official Meeting- এ জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছে।
ন্যামের ১৮-তম সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শান্তির প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা এবং পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে আমাদের অঙ্গীকার, ফিলিস্তিনি জনগণ সহ বিশ্বব্যাপী শোষিত মানুষের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ন্যামের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের একযোগে কাজ করার বিষয়সমূহ তুলে সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ন্যামে সক্রিয় হয় এবং নীতিগত দিক হতে ন্যামের ধারনাটিকে সমর্থন করে এসেছে। এই সম্মেলনে বাংলাদেশ ন্যামকে অধিকতর কার্যকর করার বিষয়টি পুনরায় তুলে ধরবে যা ন্যামে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকাকে সুদৃঢ় করবে ও ন্যাম রাষ্ট্রসমূহের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে নিজের সমস্যা সমাধান ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে
বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে ন্যাম-এর সদস্য পদ লাভ করে। সে বছরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত ন্যাম-এর ৪র্থ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। ন্যাম সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু দ্বীপ্ত কণ্ঠে বিশ্বব্যপী নির্যাতিত ও শোষিত মানুষের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছিলেন। তিনি শোষিত মানুষের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যক্ত করে একটি শান্তিপূর্ণ ও শোষণমুক্ত পৃথিবী নির্মাণে ন্যামের সদস্য রাষ্ট্র সমূহকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এরই ধারাবাহিকতায়, প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যুতে ন্যাম-এর সদস্য দেশগুলোর সাথে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমতা, ন্যায় বিচার ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে চলছে। বাংলাদেশ ন্যাম-এর সকল উচ্চ পর্যায়ের সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের পাশাপাশি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে আসছে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা