অনলাইন ডেস্ক
গত শনিবার সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ ঢাকার কাছে সোনারগাঁওয়ের একটি অবকাশকেন্দ্রে ঘেরাও হবার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
কিন্তু এ নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সংসদে বক্তব্য দেয়ার পর হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের বিবাদ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
“প্রধানমন্ত্রী ধর্ম ব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন” – আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেছেন সোমবার।
তবে হেফাজতের একজন নেতা বলছেন, সরকার তাদের শীর্ষ নেতৃত্বকে হেয়-প্রতিপন্ন করে সংগঠনটিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে গত দু’সপ্তাহের ঘটনায় সরকারের সাথে হেফাজতে ইসলামের বিবাদ যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে – তাতে কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু যে হেফাজতে ইসলামের সাথে আওয়ামী লীগের একটা প্রচ্ছন্ন সমঝোতা আছে বলে এতদিন বলা হতো – সেখানে এ সমস্যার মূল কোথায়?
আরেকটা প্রশ্ন: সমস্যাটা কি পুরো সংগঠনটির সাথেই, নাকি এর বর্তমান নেতৃত্বের সাথে?
বিবাদের শুরু হয়েছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলামের নেয়া কর্মসূচীকে ঘিরে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব জন্ম শতবর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মি. মোদী ঢাকা এসেছিলেন।
একে কেন্দ্র করে হেফাজতের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ব্যাপক সহিংস রূপ ধারণ করে, এবং সেই সহিংসতায় কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু হয়।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই ইসলামপন্থী দলটির অন্যতম শীর্ষ নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে এক অস্বস্তিকর অভিযোগ ওঠে।
পুলিশ বলছে, সোনারগাঁও এলাকায় একটি রিসোর্টে শনিবার বিকেলে মামুনুল হককে ঘেরাও করে রাখে স্থানীয় কিছু লোক এবং ক্ষমতাসীন দল-সম্পৃক্ত ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, মামুনুল হক একজন নারীকে নিয়ে রিসোর্টে ঘুরতে গিয়েছেন। অন্যদিকে মামুনুল হক বলেন, মহিলাটি তার দ্বিতীয় স্ত্রী। কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর হেফাজতে ইসলামের সমর্থক এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা পাল্টা হামলা চালিয়ে সেখান থেকে মি.হককে নিয়ে যায়।
এরপর থেকেই হেফাজতে ইসলামের আদর্শ এবং তার নেতৃত্ব নিয়ে সরাসরি যে ধরনের বক্তব্য ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে আসছে – তাতে সরকারের কঠোর অবস্থান পরিষ্কার।
তবে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির বলেছেন, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বকে হেয়-প্রতিপন্ন করে সংগঠনটিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলছেন, “সরকার তার দলীয় গুণ্ডাদের হেফাজতের নেতাদের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। হেফাজত এবং ইসলামের পক্ষে যারা কথা বলে – তাদেরকে স্তব্ধ করার জন্য সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।”
তার মতে, “মামুনুল হক যেহেতু সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাই ওনাকে হেনস্তা করে জাতির সামনে মূল্যহীন করার জন্য, হেফাজতকে বস্তাবন্দী করার জন্য এটা তাদের ষড়যন্ত্র বলে আমি মনে করি।”
নাছির উদ্দিন মুনির বলছেন, “আরো বেশিদিন ক্ষমতায় থাকার সরকারের যে স্বপ্ন, মোদীকে এনে তা পাকাপোক্ত করার যে অশুভ উদ্দেশ্য, এর বিরুদ্ধে যেহেতু হেফাজত অবস্থান নিয়েছে সেজন্য হেফাজতে উপরে সরকার চড়াও হয়েছে।”
কিন্তু হেফাজত এর আগে ‘আরো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে’ বলে সবাইকে মনে করিয়ে দেন মি. মুনির।
সরকারের এই চাপের কাছে সংগঠনটি নতি স্বীকার করবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গত কয়েক বছর ধরেই দেখা গেছে পাঠ্য পুস্তকে পরিবর্তন, ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়া সহ হেফাজতে ইসলামের নানাধরনের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার।
সংগঠনটির প্রয়াত আমীর আহমদ শফীর সাথে একই মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি, কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেয়া এবং এরপর প্রধানমন্ত্রীকে ইসলামপন্থী বেশ কটি দলের পক্ষ থেকে ‘কওমি জননী’ বলে উপাধি দেয়া, সব মিলিয়ে মনে করা হচ্ছিল যে ইসলামপন্থী সংগঠনগুলির মধ্যে হেফাজতে ইসলামের সাথেই সরকারের সবচাইতে বেশি সমঝোতার সম্পর্ক।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা