সুফিয়া কামাল ছিলেন প্রগতির ধারক ও বাহক। তাঁর মধ্যে ছিল সামাজিক দায়বদ্ধতা। তাকে নিয়ে স্মারক বক্তৃতার আয়োজন হয়। ব্যক্তিগত ও জাতীয়ভাবে গবেষণা হয়। এসব যথেষ্ট নয়। আরো গবেষণা হওয়া দরকার।
বুধবার (২০ নভেম্বর) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি সুফিয়া কামালের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে স্মরণসভায় একথা বলেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার শুরুতে কবি সুফিয়া কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কমিটির সংগীত বিষয়ক সম্পাদক সুরাইয়া পারভীন।
সভার শুরুতে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ বলেন, আজকের যেকোন সংকটে সুফিয়া কামালকে অনুভব করি প্রতি মুহূর্তে। বয়সের ভারে তিনি কখনো ভারাক্রান্ত হননি। চিন্তা ও চেতনায় ছিলেন তরুণমনস্ক। আজ আমরা যে নারী মুক্তির কথা বলি তিনি এই নারী মুক্তি মানে মানবমুক্তি মনে করতেন।
আরও পড়ুন: সৈয়দ নূরুল আলমের ‘আমার জীবন ও উন্নয়নের ৪৪ বছর’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
তিনি বলেন, ১৯৯৩ সনে ভিয়েনা সম্মেলনে যে নারী অধিকারকে মানবাধিকার বলা হলো এটি সুফিয়া কামাল বলেছিলেন ১৯৯১ সালে। অর্থাৎ সময়ের তুলনায় তিনি ছিলেন অনেক উন্নত ও আধুনিক চিন্তার অধিকারী। বর্তমানে দেশে নারী নির্যাতনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে, নির্যাতনের ধরণ ও পরিবর্তিত হয়েছে। অতীতেও এসব ঘটনা তাকে আন্দোলিত করত। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বর্তমানে যে নারীমুক্তি আন্দোলন করে যাচ্ছে সেই আন্দোলন চালিয়ে নিতে তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।
সভায় কবি সুফিয়া কামালের জীবন দর্শন বিষয়ে মূল আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট এর ভাষা শিক্ষা বিভাগের গবেষক তনুশ্রী মল্লিক বলেন, মহিলা পরিষদের অন্যতম সংগঠক সুফিয়া কামাল ছিলেন মানবমুক্তি পথিকৃৎ। তাঁর ব্যক্তিত্ব কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ফসল নয়। প্রকৃতি ছিল তার শিক্ষার মোক্ষম উপকরন। তাঁর জীবনধারা, চিন্তায় ও কর্মে বেগম রোকেয়ার আদর্শ পরিলক্ষিত হয়। মানবতা, নৈতিকতা, নান্দনিকতা এবং স্বদেশপ্রেম ছিল তাঁর গুণাবলী। কেবল দেশের নারী নিপীড়ন নয় বিশ্বে নারীর প্রতি নিপীড়নের ঘটনায়ও তিনি ছিলেন সচেতন। এই চিন্তা তাকে গন্ডিবদ্দ করেনি। বর্তমান সময়ে সমাজের অসংগতি দূর করতে তরুণ সমাজের মাঝে সুফিয়া কামালের জীবনাদর্শকে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
কবিকন্যা এবং বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল কবির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, তাঁর মৃত্যুর পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মননা জানিয়ে দাফন করা হয়। এই সম্মান তিনি নিজ কর্ম দ্বারা অর্জন করেছিলেন। আজকের বাংলাদেশের বিনির্মাণে তাঁর ছিল প্রত্যক্ষ অবদান। ১৯৫২-১৯৭১ এর প্রতিটি আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে তাঁর ছিল প্রত্যক্ষ ভূমিকা। তিনি ‘জননী সাহসিকা’- কারণ মানুষের জন্য যা প্রাপ্য সেটির দাবি আদায়ে তিনি কখনো কুন্ঠিত হতেন না।
সংগঠনের নির্বাহী কর্মকর্তা রুনু দাশ বলেন, তিনি কেবল মহিলা পরিষদ নয় আরো সংগঠন যেমন: কচিকাঁচার মেলা ও ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রতিটি তেই তিনি নিরলসভাবে পরিশ্রম করে গেছেন।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কানিজ ফাতেমা টগর বলেন সুফিয়া কামালের কর্ম পরিধি ছিল বিস্তৃত। তার কাজগুলো তরুণ প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতে পারলে তারা উপকৃত হবে।
সংগঠনের এডভোকেসি ও লবি ডিরেক্টর জনা গোস্বামী বলেন তিনি অসাম্প্রদায়িক ও নারী পুরুষের সমতা ভিত্তিক সমাজ ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য কাজ করে গেছেন । নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সমাজের বিবেক জাগ্রত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
উক্ত স্মরণসভার অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য এবং কর্মকর্তাসহ উপস্থিত ছিলেন ৫০ জন।
স্মরণসভার অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।
ফেসবুক পেজ :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা