বিচারহীনতা থাকলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হয়। তাই রাস্ট্রকেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘঠিত অপরাধ সমুহের দ্রুত সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।
শনিবার (২ নভেম্বর) ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা’ আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে আর্টিকেল নাইনটিন আয়োজিত গোলটেবিল বেঠকে বক্তারা একথা বলেন।
প্রতি বছর বিশ্বব্যাপি ইউনেস্কো ২ নভেম্বর কে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘঠিত অপরাধ বিচারহীনতা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।
আর্টিকেল নাইনটিন আয়োজিত গোলটেবিল বেঠকে সভাপতিত্ব করেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান।
সূচনা বক্তব্যে আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চাকারীদের উপর হামলা, মামলাসহ নির্যাতন বাড়ছে। দেশে আতংক ও নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। আর্টিকেল নাইটিন সকলের জন্য, নারী-পুরুষ, তৃতীয়লিঙ্গ, সমকামী, ছেলে-মেয়ের জন্য, এমন একটি সমাজ প্রত্যাশা করে, যেখানে সকলের মত প্রকাশের স্বাধিনতা নিশ্চিত থাকবে।
মুল প্রবন্ধ উপস্তাপনা করেন রিপোটার্স উইদাউট বর্ডাস (আর এসএফ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি সেলিম সামাদ। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৫ জন সাংবাদিকে হত্যা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৮মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো বিচার সম্পন্ন হওয়া ৮টি মামলার মধ্যে ৫টি মামলার বিচারের রায়কে প্রত্যাখান করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
মুল প্রবন্ধে সুপারিশ করা হয় যে, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য আলাদা আইন প্রনয়ন করা, সাংবাদিকদের জন্য রাষ্ট্রপক্ষে আলাদা আইনজিবী নিয়োগ করা, ডিজিটাল নিরাত্তা আইন ২০১৮ সহ হয়রানিমুলক আইন সমুহ প্রত্যাহার করা।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজিবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমির; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক, প্রফেসর শামীম রেজা; নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি, নাসিমুন আরা হক মিনু; ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী; একাত্তর জার্নালের উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা; বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক খায়রজ্জামান কামাল; কালের কন্ঠের মারিয়া সালাম; বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক সেলিনা শিউলি; নিহত সাংবাদিক মেহেরুন্নেছা রুনির ভাই ও রুনি হত্যা মামলার বাদী নওশের আলম রোমান প্রমুখ।
ব্যারিস্টার তানিয়া আমির তার বক্তব্যে বলেন, উদারপন্থি মানুষের উপর চরমপন্থীরা আক্রমন চালাচ্ছে। অথচ চরমপন্থীদের বিচার হচ্ছে না। অপরাধিরা সরকার ও রাস্ট্রযন্ত্রের ভেতরে ঢুকে গেছে কিনা তা আমাদের বের করতে হবে। তানিয়া আমির মনে করেণ, প্রগতিশীল আইনজীবি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা জন্য যারা কাজ করেণ তাদের স¤িœলিত একটি প্লাটফর্ম প্রয়োজন, যেখান থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্বে অপরাধের বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপলোপের জন্য একসঙ্গে কাজ করা হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, কর্পোরেট হাউজের প্রভাবের ক্ারণে মুক্ত সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করছে না।
নিহত সাংবাদিক মেহেরুন্নেছা রুনির ভাই ও রুনি হত্যা মামলার বাদী নওশের আলম রোমান বলেন, রুনি হত্যার আট বছর হয়েছে অথচ আদালতে ৬৮ বার সময় চেয়ে ও তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারেনি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। যা হতাশাজনক। সাগর ও রুনির সন্তান মেঘ আজ তের বছর বয়সি। এখন পর্যন্ত তাকে রাষ্ট্র জানাতে পারেনি কে তার পিতা-মাতার ঘাতক।
গোলটেবিল বেঠকে আন্তর্যাতিক পেক্ষাপট, বাংলাদেশে বিচারহীনতার অবস্তা ও আর্টিকেল নাইটিনের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। এতে সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিসহ প্রায় ৩০ জন পেশাজিবী অংশগ্রহণ করেন।
সভাপতি তার সমাপনি বক্তব্যে বলেন, সাংবাদিকদের সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকতে হয়। বিচারিক প্রক্রিয়া পুনর্গঠন প্রয়োজন। বিচারহীনতা রোধ করার জন্য বিচারিক প্রক্রিয়ায় জড়িত সবাইকে যুক্ত করতে হবে।
ইমপিউনিটি নিয়ে আর্টিকেল নাইনটিন এর কার্যক্রম উপস্তাপনা করেন আর্টিকেল নাইনটিনের কনসালটেন্ট ইফাত নাওরিন মালিক।
২০১৩ সালের ২ নভেম্বর মালিতে দু’জন ফরাসি সাংবাদিক হত্যার স্মরণে এই তারিখটিকে ইমপিউনিটি ডে হিসেবে ঘোষনা করে জাতিসংঘ। ইউনাইটেড নেশনস জেনারেল অ্যাসেমব্লি ২ নভেম্বর নভেম্বর ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তির আন্তর্জাতিক দিবস’ হিসাবে সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন এ / আরইএস / ৬৮৮ / ১৩৩ হিসাবে ঘোষণা করে এবং সদস্য দেশগুলিকে দায়মুক্তির বর্তমান সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা