পেশায় গৃহিনী ফারজানা ইয়াসমিন ঝুমু প্রচণ্ড শীত থেকে বাঁচতে উলের টুপি ব্যবহার করেন। ছবি : লাল সবুজের কথা।
তাসকিনা ইয়াসমিন
এখন দেশজুড়ে চলছে শীতের মৌসুম। কনকনে ঠাণ্ডায় পুরো শরীর একাধিক পোশাকে জড়িয়েও শীতকে কাবু করা যাচ্ছে না। এমন সময়ে অনেক মেয়েই শীত থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহার করছেন শীতকালীন টুপি। এ দিয়ে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পেলেও পাশাপাশি জুটছে বখাটের যৌন হয়রানি। প্রায়ই টুপি ব্যবহারকারি মেয়েদের চলতি পথে বখাটের যৌন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
শীত থেকে রক্ষা পেতে, যে টুপি গুরুত্বপূর্ণ তা পরার পরও কেন কটু কথা শুনতে হচ্ছে? কেনই বা চারপাশের মানুষের চাহনি সম্মানজনক নয়। এর পেছনে আসলে কারণ কি?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মেয়েরা শীত থেকে রক্ষা পেতে যা যা পরা দরকার সবই পরবে। এমনিতে মেয়েরা ফ্যাশনেবল জুতা পরে। এখন প্রয়োজনে তা বদলাবে। প্রয়োজনে ব্লেজার পরবে। যা যা পরলে সে ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাবে সেটাই পরবে। কারণ এখন তার সবচেয়ে বেশি দরকার শীত থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
এ প্রসঙ্গে গবেষক অনিন্দ্য বড়ুুয়া বলেন, এ ধরণের একটা ইস্যু নিয়ে মতামত জানানো আমার জন্য কঠিন হয়ে গেলো। আমার জেলায় মেয়েদের এসব টুপি পরতে দেখছি শৈবব থেকে। অসম্মান-সম্মান-কৌতুহলিদৃষ্টি কিছুই দেখিনি। আমার স্ত্রী পরেছেন, এখন মেয়ে পরে।
এক সিনিয়র সাংবাদিক নারী বলেন, আমার পরিচিতরা অনেকেই ক্যাপ ব্যবহার করে। এটা নিয়ে কাউকে তেমন কিছু বলতে শুনিনি। তবে, মেয়েরা শীতের মধ্যে টুপি পরবে এটাই তো স্বাভাবিক। ছেলেদের যেমন শীত লাগে। মেয়েদেরও লাগে। শীত নিবারণের জন্য মেয়েরা শীতের পোশাক পরবে এটাই তো স্বাভাবিক। এখন কুয়াশা পড়ছে। বাইরে ধুলা বালি আছে। মেয়েরা জার্নি করছে। কাজের জন্য বাইরে যাচ্ছে। আবার ঘরে ফিরছে। ছেলেমেয়ের পোশাকের ধরণ আলাদা হতে পারে কিন্তু টুপিটাতো প্রয়োজন। কানে বাতাস লাগে এটা তো সবার জন্য সমান।
সিনিয়র সাংবাদিক লাইলী বেগমের মতে, হিন্দিতে কাউকে ‘টুপি পরানো’ মানে কাউকে ধোঁকা দেওয়া বুঝায়। নিজে নিজে টুপি পরলে তার সাথে জরুরত বা ফ্যাশন করা মনে করা হয়। সে নারী হোক আর পুরুষ। বাংলাদেশে পুরুষসমাজ টুপিকে নিজেদের পোষাকের মর্যাদা দিয়ে রেখেছে। মেয়েরা পরলে তাদের মর্যাদা টলে ওঠে হয়তো! আজকাল আমাদের দেশে ঠাণ্ডার তীব্রতা বেড়েছে। মেয়েরাও টুপি পরতে শুরু করেছে প্রয়োজনে বা জরুরতে। ফ্যাশনেও যুক্ত হতে শুরু করেছে টুপি। ফ্যাশনের সাথে তো আরামের সম্পর্ক জড়িত। কিন্তু দীর্ঘকালের সমাজ ব্যবস্থার হয়তো টুপির অধিকার একমাত্র আর পুরুষের থাকছে না বলে রক্ষণশীল পুরুষতন্ত্রে ধাক্কা লাগছে। তাই কেউ কেউ ঠোঁট বাঁকিয়ে, চোখ কুঁচকে তাকাচ্ছে। তবে, আমি যেটা মনে করি, খুব বেশিদিন লাগবে না এটা সহনশীল হতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, মূলত দুই শ্রেণির মানুষ যৌন হয়রানি করে, এক বখাটে যারা শিক্ষিত নয়। আর দুই নাম্বারে যারা রয়েছে তার শিক্ষিত কিন্তু শুধু ডিগ্রীধারী শিক্ষিত শিক্ষার ন্যূনতম আলোটুকু তাদের মধ্যে নেই। আবার ইভটিজার হওয়ার (যৌন হয়রানি কর) পিছনে কিছু কারণ রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র সাংবাদিক নারী বলেন, যারা আসলে টিজ করে তারা আসলে মেয়েরা ঘর থেকে বাইরে গেছে এটা নিতে পারে না। তারা মেয়েদের অনেক কিছুই নিতে পারেনা। এটা তাদের না নিতে পারার মানসিকতা। তারা চিন্তা করে যে, মেয়েরা কেন সমান হবে!
অনিন্দ্য বড়ুয়া বলেন, মূলত আমাদের হাতে গুরুত্বপূরর্ণ কাজ না থাকাতে এ অবস্থা বলে মনে হয় আমার। যে সব কাজ আছে তা করি শুধুই জীবিকার জন্য; কোন মতে বেঁচে থাকার জন্য। ভালোবেসে না: দেশের উন্নতি হবে এভাবনা থেকে না। যতদিন আমরা সৃজনশীল কাজে, গবেষণার কাজে, শিল্পসৃষ্টিতে জড়িত না হব ততদিন কে কী পরলো, কার সাথে হাঁটলো, কী খেয়ে জাত নষ্ট করলো, তালাক দেয়া স্ত্রীর সাথে দেখা করলো কিনা এসব নিয়ে থাকবো। কিছু জাতি মানব কল্যানে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মনোনিবেশ করে, কিছু জাতি গবেষণার সুফলটা ভোগে মত্ত থাকে শুধু।
এ ব্যাপারে মুহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, যৌন হয়রানি যারা করে, এরমধ্যে কিছু হলো যে পরিবেশে বড় হয়েছে সে পরিবেশ ভালো ছিলোনা মানে নৈতিক শিক্ষার চর্চা ছিলোনা, বর্তমানে যে পরিবেশে থাকছে সে পরিবেশে নৈতিকতার চর্চা হয়না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব। যেমন কোনো কোনো মেয়েকে দেখা যায় রাত বারোটার পর অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জনের জন্য এক প্রকার উলঙ্গভাবে লাইভে আসে। টেলিভিশনে বেশিরভাগ উলঙ্গ টাইপের সিনেমা প্রচার করা হয়, আর স্রষ্টাপ্রদত্ত বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ থেকে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাবটি গিয়ে পড়ে কোনো এক ভালো মেয়ের উপর।
তিনি বলেন, তাছাড়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি এক্ষেত্রে অন্যতম দায়ী। কারণ বেশিরভাগ বখাটে রাজনৈতিক পরিচয়ে লালিত পালিত হয় যার ফলে এই ধরণের অপরাধের বিচার হয়না। এমনকি এর চেয়ে গুরুতর অপরাধ ধর্ষণেরও বিচার হয়না। যার বড় উদাহরণ ২০১৯ সাল সহস্রাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও মাত্র দুচারটি ছাড়া বিচার হয়নি। আর যেগুলোর বিচার হয়েছে তাও প্রক্রিয়াধীন। যার ফলে এ ধরনের অপরাধ বেড়েই চলছে কেননা যা ইচ্ছে তাই করলেও কোনো বিচার নেই, শাস্তি পাওয়ার ভয় নেই।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা