আরো ক্ষমতা চাইছেন ডিসিরা। এমনকি সংবিধান লঙ্ঘনকারী প্রস্তাবও করেছেন। ডিসি সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করা কার্যপত্রে ৩৩৩টি প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্তত ১৫টি প্রস্তাব আছে, যেগুলো অন্য দপ্তরের এখতিয়ার। এবার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছ থেকে হাজারখানেক প্রস্তাব আসে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে তিন শর বেশি প্রস্তাব আলোচনার জন্য বাছাই করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আগামীকাল রবিবার শুরু হতে যাওয়া ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে সব জেলার ডিসিরা এখন ঢাকায়। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তাঁদের অভ্যন্তরীণ ব্রিফিং দেওয়া হবে। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিভিন্ন জেলার ডিসিদের পক্ষ থেকে দেওয়া নানা প্রস্তাব একপলকে দেখে নেয়া যাক-
১. ইউপি চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোনো কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেরি হলে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দিতে চান ডিসিরা।
২. জেলায় এসপির বাইরে আলাদা পুলিশ ফোর্স, উপজেলার প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন অফিসারকে (পিআইও) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) অধীনে আনার প্রস্তাব করেছেন তাঁরা।
৩. জেলা-উপজেলায় আয়কর আদায়, ফৌজদারি অপরাধ বিচারের ক্ষমতা, কোটি টাকার থোক বরাদ্দ, এনজিও কার্যক্রম তদারকি, ডিপিপি প্রণয়ন, মোবাইল কোর্টের অধীনে নতুন নতুন আইন অন্তর্ভুক্তকরণ, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে ডিসিদের সভাপতি, উপজেলা শিক্ষা কমিটিতে ইউএনওদের সভাপতি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
৪. প্রশাসন ক্যাডারদের জন্য নতুন ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিও তুলেছেন ডিসিরা।
৫. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আয়করের আওতা বাড়ানোর জন্য জেলা পর্যায়ে ডিসি এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে সভাপতি করে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন মাদারীপুরের ডিসি।
৬. ডিসিদের নিরাপত্তায় এক প্লাটুন সশস্ত্র পুলিশ ফোর্স দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন কুমিল্লা, কক্সবাজার, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গার ডিসিরা।
৭. উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) উপজেলা প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন অফিসারের (পিআইও) বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) লেখার ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন গোপালগঞ্জের ডিসি।
৮. জেলায় এনজিওর মাধ্যমে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় সেগুলোরও নিয়ন্ত্রণ চান ডিসিরা। নারায়ণগঞ্জ ও গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক তাঁদের প্রস্তাবে বলেছেন, জেলা পর্যায়ে এনজিও কার্যক্রমের সার্বিক সমন্বয় না থাকায় কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন হয় না।
৯. কক্সবাজারের ডিসি তাঁর প্রস্তাবে দেশব্যাপী জেলা বাজেট প্রণয়নে ডিসিদের ক্ষমতা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে যুক্তি দেখিয়েছেন, কেন্দ্রীয়ভাবে বাজেট প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করায় ডিসিরা ঠিকভাবে অবহিত থাকেন না। প্রস্তাবে তিনি বলেছেন, এলজিইডি, গণপূর্ত, স্থানীয় সরকারসহ সব দপ্তরে গৃহীত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, জেলার চাহিদা অনুযায়ী কম বরাদ্দ ও ব্যয় সম্পর্কে ডিসিরা অবহিত থাকেন না। ফলে জনসাধারণের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সার্বিক চিত্র স্পষ্টভাবে তুলে ধরা যায় না।
১০. উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রণয়নের ক্ষমতা ডিসিদের দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন চাঁদপুরের ডিসি।
১১. জেলার ভৌগোলিক সীমার মধ্যে গৃহীত এক কোটি টাকার ওপরের প্রকল্প হলে ডিসিদের অনুমতি নেওয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন গোপালগঞ্জের ডিসি।
১২. প্রতিবছর অন্তত এক কোটি টাকা স্বাধীনভাবে খরচ করতে থোক বরাদ্দ চেয়েছেন ডিসিরা।
১৩. সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর অধীনে ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মতো বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য ‘জনপ্রশাসন ব্যাংক’ নামে একটি আলাদা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন নোয়াখালীর ডিসি।
১৪. সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ‘বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন নরসিংদীর ডিসি।
১৫. বরাবরের মতো এবারও ফৌজদারি অপরাধ আমলে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিচারিক ক্ষমতা চেয়েছেন ডিসিরা। এই প্রস্তাবকে সংবিধানবিরোধী বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর সংবিধান অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা হয়ে গেছে। এখন মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ অনুযায়ী যে আদালত নির্বাহী বিভাগ পরিচালনা করছেন সেটিও হাইকোর্ট বাতিল করে দিয়েছেন। এখন সেটি আপিল বিভাগে আইনি চ্যালেঞ্জে উচ্চ আদালতে আছে। এমন পরিস্থিতিতে ফৌজদারি অপরাধ আমলে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ও সংবিধান গবেষক আরিফ খান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ফৌজদারি অপরাধ আমলের ক্ষমতা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের হাতে দেওয়া হলে সেটা সংবিধানের লঙ্ঘন হবে।
১৬. চট্টগ্রামের ডিসি ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনি জটিলতা থাকলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব করেছেন। এবারের সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে জেলা পরিষদ নিয়ে রাখা একমাত্র প্রস্তাবটি হচ্ছে পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সচিবকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা অর্পণ করা। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ডিসির এই প্রস্তাবেও মূলত আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার পরিধি বাড়ানোকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।
১৭. মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত জেলা কমিটি পুনর্বিন্যাস করে সংসদ সদস্যকে উপদেষ্টা ও ডিসিদের সভাপতি করার প্রস্তাব দিয়েছেন ঝালকাঠির ডিসি। উপজেলা শিক্ষা কমিটি পুনর্গঠন করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা ও ইউএনওকে সভাপতি করার প্রস্তাবও করেছেন ঝালকাঠির ডিসি। পাঁচ দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন শেষ হবে আগামী বৃহস্পতিবার।
NB:This post is copied from kalerkantho
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা