অনলাইন ডেস্ক
বুধবার (১ মার্চ) সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। ইনিংসের ৫ম ওভারে বল হাতে আক্রমণে আসেন ক্রিস ওকস। প্রথম তিন বল ডট দেয়ার পর চতুর্থ বলে তাকে ছক্কা হাঁকান লিটন দাস। তবে এরপরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন। বাঁচতে পারেননি রিভিউ নিয়েও। এরপর তামিম ইকবাল ফেরেন ১০ম ওভারে মার্ক উডের বলে বোল্ড হয়ে। আউট হওয়ার আগে চারটি চারে তামিম করেন ২৩ রান।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে মুশফিক-শান্তর ব্যাটে বেশ খানিকটা এগিয়ে ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু হুট করেই স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হওয়ার ঘটনা এদিন আবারও ঘটান মুশফিক। আদিল রশিদকে প্রিয় শটে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মার্ক উডের তালুবন্দি হন ৩৪ বলে ১৭ রান করা এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। মুশফিকের মতো এদিন ইনিংস বড় করতে পারেননি বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসানও। মঈন আলির বলে হাঁটু গেড়ে শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ১২ বলে ৮ রান করা সাকিব।
এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে দলের হাল ধরার প্রয়াস পান শান্ত। এর মাঝেই শান্ত তুলে নেন তার প্রথম ওয়ানডে অর্ধশতক। তবে ৩৬তম ওভারে এসে আর মনসংযোগ ধরে রাখতে পারেননি শান্ত। দলীয় ১৫৯ রানের মাথায় শর্ট অব লেংথের বলে শান্ত আউট হলে ভাঙে ৫৩ রানের জুটি। ৮২ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলে আউট হন শান্ত।
এরপরের ওভারে মার্ক উডের করা লেগ স্ট্যাম্পের বলে গ্লাইড করতে ব্যাট চালান মাহমুদউল্লাহ। বল হালকা সুইং করে বেরিয়ে জমা পড়ে কিপার জস বাটলারের গ্লাভসে। আউটের জন্য আবেদন করে ইংলিশ ক্রিকেটাররা। সফট সিগন্যাল নটআউট দিয়ে থার্ড আম্পায়ারের কাছে পাঠান মাঠের আম্পায়ার। রিপ্লেতে দেখা যায় মাহমুদউল্লাহর ব্যাট সামান্য ছুঁয়েছে বল। ৩ চারে ৪৮ বলে ৩১ রান করে সাজঘরে ফেরেন অভিজ্ঞ এ ব্যাটার ।
দলীয় ১৭৫ রানের মাথায় উইল জ্যাকসের বল মিড অনের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে আদিল রশিদের হাতে তালুবন্দি হন ১২ বলে ৯ রান করা আফিফ হোসেন। এদিন ইনিংস বড় করতে পারেননি মেহেদি মিরাজও। জফরা আর্চারের বল খেলতে গিয়ে জস বাটলারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন তিনিও।
শেষ দিকে তাসকিন-তাইজুলের ব্যাটে ২০০ রান পার করে বাংলাদেশ। ৪৮তম ওভারে ২০৯ রান তুলে অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেন শান্ত। ইংলিশদের হয়ে দুইটি করে উইকেট নেন মার্ক উড, আদিল রশিদ, মঈন আলী ও জফরা আর্চার।
স্কোরবোর্ডে খুব বেশি পুঁজি না থাকলে বল হাতে যেমন শুরু প্রত্যাশা করা হয়, টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবালকে তেমনটি সূচনাই এনে দিয়েছেন স্পিনাররা। প্রথম ওভারেই সাকিব আল হাসানের উইকেটপ্রাপ্তির পর জোড়া আঘাতে অপর ওপেনার ফিল সল্ট ও চারে নামা জেমস ভিন্সকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। এরপর বিপজ্জনক জস বাটলারকে সাজঘরে পাঠিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান তাসকিন।
প্রথম ওভারেই জেসন রয়কে তামিম ইকবালের ক্যাচে পরিণত করে ইংলিশ শিবিরে প্রথম ধাক্কাটি দেন সাকিব আল হাসান। এরপর, ফিল সল্টকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা চালান ডাভিড মালান। কিন্তু, এবার সল্টকে বোকা বানান তাইজুল। অর্থোডক্স এ স্পিনারের লেগস্ট্যাম্পে পিচ করা বলটিকে জায়গা বানিয়ে অফ সাইডে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন সল্ট। কিন্তু বলের টার্ন কম হওয়ায় ক্র্যাম্প হয়ে যায় ব্যাট। ব্যাট ও পায়ের ফাঁক গলে ১২ রান করা সল্টের স্ট্যাম্প ভেঙে দেয় তাইজুলের ওই ডেলিভারি।
এরপর আবার জেমস ভিন্সকে ফ্লাইট ও বুদ্ধিদীপ্ত এক ডেলিভারিতে বোকা বানান তাইজুল। জেমস ভিন্সকে ডাউন দ্য উইকেটে এগিয়ে আসতে দেখেই ফ্লাইটে পরাস্ত করেন এ বাঁহাতি। স্ট্যাম্পিং করতে কোনো ভুল করেননি উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকুর রহিম।
বেশি সময় উইকেটে টিকতে পারেননি ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। তাকে আউট করেন দারুণ বোলিংয়ের পুরস্কারও পেয়ে যান তাসকিন। ব্যাক অব লেংথের ডেলিভারিতে তাসকিন পেয়েছেন বাড়তি বাউন্স। পেছনের পায়ে ভর দিয়ে বলকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ঠেলে দিতে গিয়ছিলেন বাটলার। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল শান্তর হাতে। বোলিং পরিবর্তন ও স্লিপে ফিল্ডার নিয়ে আসার সিদ্ধান্তে তামিম দেখালেন অধিনায়কত্বের মুন্সিয়ানা।
জস বাটলারের মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেট পতনের সাথেই ম্যাচে ফিরেছিল বাংলাদেশ। ৬৫ রানের মধ্যে ৪ ইংলিশ ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে ২১০ রানের লক্ষ্যকেও বেশ বড় করে তোলে টাইগাররা।
উইল জ্যাকসকে সাথে নিয়ে ডাভিড মালানের জুটিতে ম্যাচের লাগাম যখন আবারও নিতে যাচ্ছিল থ্রি লায়নসরা, ঠিক তখনই আঘাত হানলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। উইল জ্যাকসকে আউট করে আবারও ম্যাচকে পেন্ডুলামের মতো অনিশ্চয়তায় দোলালেন এ অলরাউন্ডার।
তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে ইংলিশদের নিরাপদ রাখেন ডাভিড মালান। ৬ষ্ঠ উইকেটে মঈন আলিকে সাথে নিয়ে ৩৮ আর ৭ম উইকেটে ক্রিস ওকসের সাথে আরও ২০ রানের জুটি গড়ে দলের রানের চাকা সচল রাখেন এ ব্যাটার। ক্যারিয়ারের ৪র্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেন মালান। ৮ম উইকেট আদিল রাশিদকে সাথে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ৫১ রানের জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন এ বাঁ-হাতি ব্যাটার। ১৪৫ বলে ৮টি চার আর ৬টি ছক্কার সাহায্যে ১১৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন মালান। আর আদিল রাশিদের ব্যাট থেকে আসে ২৯ বলে অপরাজিত ১৭ রান।
৩ উইকেটের জয়ে সিরিজে ১-০’তে এগিয়ে গেলো ইল্যান্ড। ৩ মার্চ শুক্রবার ৩ ম্যাচ সিরিজের ২য় একদিনের খেলায় মিরপুরে মুখোমুখি হবে দুই দল।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা