সপ্তাহব্যাপী রেলওয়ে সেবা সপ্তাহের আজ (১১ ডিসেম্বর) শেষ দিন। এ উপলক্ষে গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ১ম পর্ব প্রকাশিত হয়েছিল আজ ২য় এবং শেষ পর্ব।
পর্ব-২
লক্ষণীয়, রেলপথ স্থাপনের পর প্রায় ২০০ বছর পেরিয়ে এসেছি আমরা। এর মধ্যে মানবসভ্যতা দু দুটো বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনায় গড়িয়ে গেছে অনেক জল। কিন্তু ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকরা রেলের যে অবকাঠামো রেখে গিয়েছিল তা থেকে খুব একটা উন্নত অবস্থানে আমরা রেলকে নিয়ে যেতে পারিনি।
১ম পর্ব: ভরসার শেষ জায়গা রেলপথও কি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠল?
এর নেপথ্যে প্রযুক্তিজ্ঞান স্বল্পতা যেমন দায়ী তেমনই দায়ী কায়েমি স্বার্থবাদী বেসরকারি পরিবহন সেক্টরের কিছু চক্র যারা সবসময় রেলে উন্নত অবকাঠামো সম্প্রসারণে অন্তরালে থেকে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ রেলের রেলরুটে খুঁজে দেখলে হয়তো এখনও ব্রিটিশদের স্থাপিত স্লিপার কোথাও না কোথাও পাওয়া যাবে।
দেখা যাবে কোথাও হয়তো পাথর সরে গেছে কিংবা পাথরই নেই। আবার কোথাও রেলপাতে যেমন ক্ষয় ধরেছে তেমনই ক্ষয় ধরেছে এর কাঠের স্লিপারেও। সোজা কথা রেলের চাকায় মরচে পড়েছে এ যেন আর চলছে না। কিন্তু তা তো হতে দেওয়া যাবে না। রেল না চললে এ দেশও চলবে না।
কারণ এখনও এদেশে রেলই সাধারণের বাহনভরসা। যে করেই হোক রেলকে সচল করতে হবে, রেলের চাকার মরচে ঘঁষেমেজে তাকে চকচকে করে তুলতে হবে।
হাল আমলে রেলে অনেক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এরপরেও নিরাপদ জনবাহন হিসেবে কেন রেল তার ভাবমূর্তি হারাতে বসেছে তা অনেক দুর্ভাবনার জন্ম দেয়।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের এক গবেষণা অনুযায়ী, মুখোমুখি সংঘর্ষ, ট্রেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, লেভেল ক্রসিং, সিগন্যালিং ক্রটি ও লাইনচ্যুতিসহ বিভিন্ন কারণে রেলপথে দুর্ঘটনা ঘটছে।
বাংলাদেশেও গণমাধ্যম ঝুঁকিতে আছে: টিআইবি
এ ছাড়াও রেলওয়ের সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, লোকবল ঘাটতি, নিয়মিত তদারকি ও মেরামতের অভাব, রেলপথে মানসম্মত পর্যাপ্ত পাথরের স্বল্পতা ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে ডাব্লিউবিবি।
বিভিন্ন দেশে রেল দুর্ঘটনা রোধে নানা প্রযুক্তির প্রয়োগ দেখলেও আমাদের দেশে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া আমরা এখনও দেখিনি। আমাদের পাশর্ব্বর্তী দেশ ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে।
সেখানে কোনো রেললাইনে দুটি ট্রেন মুখোমুখি চলে এলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। এত দুর্ঘটনার পরও আমাদের দেশে কেন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে না তা আমার বোধগম্য নয়।
ঘনঘন দুর্ঘটনায় এক সময়ের নিরাপদ বাহন এখন অনিরাপদ। ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে আমরা কি আশু কোনো ব্যবস্থা নিতে পেরেছি? কোনো পরিবর্তন কি আমরা আনতে পেরেছি।
কোনো দুর্ঘটনা হলে সঙ্গে সঙ্গে দুয়েকটি তদন্ত কমিটি ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ কি আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি? তাই বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে রেলকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর সময় হয়েছে এটা বলা যায়।
রেলে ভ্রমণ বর্তমানে একটি আতঙ্কের নাম হলেও বাহন হিসেবে একে ত্যাগ করারও কোনো উপায় নেই। সার্বিক দিক বিবেচনায় সাধারণ মানুষ নিরাপদ ভ্রমণের জন্য এখনও রেলওয়ের ওপরই বহুলাংশে নির্ভরশীল।
আমাদের সবার দাবি নিরাপদ রেলপথ, নিরাপদ ট্রেন ভ্রমণ, নিরাপদ জীবন। আমরা পরিবার নিয়ে একসঙ্গে ট্রেনে ভ্রমণ করতে চাই। ট্রেনকে পরিণত করতে চাই ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপদ অনুষঙ্গে।
Like & Share our Facebook Page: Facebook
লেখক: সিনিয়র সাব এডিটর, লাল সবুজের কথা Email: barman@lalsobuzerkotha.com
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা