অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, দেশের মূল্যস্ফীতি মে মাসের ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ থেকে কমে জুনে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে এসেছে, যা এখনো গেল এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে জুন মাসে মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি আগের মাস মের চেয়ে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে অবস্থান করছে। এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ, মিশর, পাকিস্তান, জাপান, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। অন্যদিকে ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপে এ হার কমেছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ছাড়া প্রায় সব দেশেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমছে। এমনকি বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি করে থাকে, সেসব দেশেও মূল্যস্ফীতি কমের দিকে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নেওয়ায় মুদ্রা সরবারাহ বেড়েছে, যা মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে, সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানির লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলা হয়েছে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৯৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। এতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও ডলার সংকটের কারণে এলসির পরিমাণ কমেছে ২৫ বিলিয়ন ডলার বা ২৭ শতাংশ। তবে, রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য বা অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসিতে সরকার সহায়তা করছে বলে দাবি করা হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে পেঁয়াজ, আলু, ধান, শাক-সবজি, গবাদি পশু, দুধ, মাছ, ডিম চাহিদা মতো উৎপাদন হচ্ছে; কিন্তু খুচরা বাজারে এসব পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৪ শতাংশের মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের মে মাসে এসে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ভুটানে গত বছর জুলাইয়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশের মূল্যস্ফীতি এ বছর মে মাসে আগের মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশে অবস্থান করছে।
নেপালে গত সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে এ বছর মে মাসে সাড়ে ৫ শতাংশে এসেছে।
মালদ্বীপে গত বছরের জুলাইয়ে ৬ শতাংশের মূল্যস্ফীতি এখন ৪ দশমিক ৭ শতাংশে নেমেছে। বিশেষ করে ব্যাপক আলোচনায় থাকা দেউলিয়া দেশ শ্রীলঙ্কায়ও মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। গত বছর আগস্টে সর্বোচ্চ ৮৫ দশমিক ৮ শতাংশে উঠে যাওয়া সূচকটি গেল জুনে ৪ দশমিক ১ শতাংশে এসেছে।
চীনে গত সেপ্টেম্বরে এ হার সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। মালয়েশিয়ায় গত নভেম্বরে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৪ শতাংশের মূল্যস্ফীতি এখন ৫ দশমিক ৯ শতাংশে। ইন্দোনেশিয়ায় সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে এখন ১ দশমিক ৭ শতাংশে এসেছে।
থাইল্যান্ডে গত সেপ্টেম্বরের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে এখন ৩ দশমিক ৪ শতাংশে নেমেছে। ফিলিপাইনে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ২ শতাংশ থেকে গত জুনে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে এসেছে মূল্যস্ফীতি।
এদিকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ। গত মে মাসে এ সূচক বেড়ে ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশে এসে জুনে সামান্য কমে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশে অবস্থান করছে।
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের ব্যয় মেটানোর জন্য ব্যাংকিং খাত, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অধিক ঋণ গ্রহণের সম্ভাবনা কিন্তু শুভ লক্ষণ নয়। এতে মুদ্রাস্ফীতি আরও লাগামহীন হয়ে পড়বে।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা