ফজলুল বারী : বৃহস্পতিবার ছিল ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার শেষ দিন। সারা বাংলাদেশের দৃষ্টি এখন রাজধানী ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের দিকে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বহুদিন পর ঢাকা ভিন্ন চেহারা নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের লোকজন প্রান খুলে মাঠে নেমে এবার নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়েছেন। যে হিংসার ঘটনাগুলো ঘটেছে তা বিশাল ঢাকার তুলনায় খুব সামান্য। এগুলো না হলে ভালো ছিল। ঘটনা ঘটায় যে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে তাও নয়। তিন যুগ ধরে আমি দেশের রাজনীতির রিপোর্টার। সবার সব চেহারা কমবেশি চিনি-জানি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হারতে চায় না। এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি জিততে মরিয়া। বাংলাদেশের এই দুটি দল বা কোন দলই রামকৃষ্ণ মিশন বা কোন সেবা সংস্থা না। আজ বিএনপি আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যা কিছু বলছে ক্ষমতায় থাকলে একই কাজগুলো বিএনপিও করতো।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে কিছু কথা বলছিলেন বিএনপির নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এই প্রজন্মের যে সব ছেলেমেয়ে বিএনপি জমানার সিইসি আজিজ সম্পর্কে জানেনা তারা মনে করতে পারে বিএনপির এই নেতা বোধহয় জাস্ট বেহেস্ত থেকে নেমে এসেছেন! বিএনপির তৈরি একজন সিইসি আজিজ ছিলেন যিনি তখন দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধংস করেন। আর বাংলাদেশে ভোট কারচুপির রাজনীতির প্রবক্তা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া। স্কুলের বাচ্চাদের দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করিয়ে শতভাগ ভোটে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন জিয়া। বাংলাদেশের রাজনীতি আজ পর্যন্ত সে অবস্থার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। জিয়া বা বিএনপি সে সব নির্লজ্জ্বভাবে করলেও এখনকার লোকজন একটু রাখঢাক রেখে বলে অথবা করে আর কী।
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে প্রধান দুই দল কোটিপতি দেখে মেয়র প্রার্থী দিয়েছে। প্রথম দিন থেকে এই দুই দলের চার প্রার্থী প্রকাশ্যে নির্বাচনী আচরনবিধি মানেননি। নির্বাচন কমিশন এসব দেখেও না দেখার ভান করেছে। শুধু আওয়ামী লীগের সিনিয়র দুই এমপি নেতা তোফায়েল আহমদ , আমির হোসেন আমু যাতে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারেন এ নিয়ে হুংকার দিয়ে ভাব করতে চেয়েছেন তারা খুব শক্তিশালী। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা যে নির্বাচনী আচরন বিধিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েই গেছে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন ছিল চোখ থাকিতে অন্ধ! সরকারি দলের প্রার্থীদের টাকার সমস্যা ছিলোনা-থাকেনা, কিন্তু এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিরও এত টাকা! সবাই চমকে গিয়ে এই নির্বাচনে দেখেছে!
আওয়ামী লীগ-বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যা সিটি মেয়রদের ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু অবাক ঢাকার মানুষজন এসব প্রতিশ্রুতিতেও মজেছেন। বাংলাদেশে সিটি মেয়রদের সরকারের সমর্থনে কাজ করতে হয়। বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে পাশ করা নিয়ে যেমন অনিশ্চয়তা মনের মধ্যে, তেমনি মনের মধ্যে আরেকটি স্বপ্ন, তাহলো খালেদা জিয়ার মুক্তি। সিটি নির্বাচনে তারা জিতলে খালেদা জিয়ার মুক্তি কী হবে? বাইরে এ নিয়ে মেকি শক্তভাব দেখালেও ভিতরে ভিতরে তাদের ভয় ভয় আশা! যদি হয়, যদি হয়! বিএনপির নেতাকর্মীরা এই নির্বাচনে বিপুলভাবে রাস্তায় বেরিয়েছেন। প্রথম দিন থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে আত্মবিশ্বাসী কঠিন প্রচার কার্যক্রম চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থীও।
প্রশাসন-মিডিয়া সবার সহযোগিতা তারা পেয়েছেন। ঢাকার হিসাবি মানুষজন এই দুই মেয়র প্রার্থীকে আন্তরিকভাবে গ্রহন করার কারন এদের নিয়ে বিতর্ক নেই, অথবা বিতর্ক কম। এই দুই প্রার্থীর পক্ষে ঢাকার হিসাবি মানুষ কারা? যারা মেয়ের আনিসকে ভালো বেসেছিলেন। আতিক-তাপসের মাঝে এরা দেখেছেন মেয়র আনিসের ছায়া। মেয়র আনিস প্রমান করেছিলেন চাইলে অনেক কিছু করা যায়। এদের বিপরীতে তরুন তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তারা প্রমান করেছেন তাদের সমকক্ষ অথবা বিকল্প প্রার্থী বিএনপিতে ছিলোনা।
শুরু থেকে বিএনপির প্রার্থীদের নিয়ে মিডিয়া সহ সব মহলের একটাই প্রশ্ন, এরা নির্বাচনে কতোক্ষন থাকবেন। কারনে নির্বাচনের দিন দুপুরে নির্বাচন বর্জনের বিস্তর নজির তারা রেখেছেন। এরজন্যে বারবার করে তাদের বলতে হয়েছে থাকবো থাকবো থাকবো। কিন্তু এরপরও কী তারা এ নিয়ে আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন? কারন বারবার দেখা গেছে তারা কৌশলে মার খেয়েছেন অথবা হেরে গেছেন। রাজনীতি একটি কৌশলের খেলা। গত কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ এমন কিছু চাল চালে তাতে রেগেমেয়ে মাঠ ছেড়ে যায় বিএনপি। এবার এরমাঝে তেমন একটি কৌশল কী শুরু করেছে আওয়ামী লীগ?
ইশরাক হোসেনের সঙ্গে গোপীবাগে প্রতিপক্ষের সমস্যা হয়েছে। ইশরাক লাথি মারছেন, এমন ভিডিও ফুটেজ এখন আওয়ামী লীগের হাতে! ইশরাকের লোকের হাতে অস্ত্র-গুলি ছোঁড়ার ভিডিও ফুটেজ আওয়ামী লীগের হাতে! চালে এই চালে বিএনপি এরমাঝে পিছিয়ে। গত দু’দিন ধরে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহ নেতারা বলা শুরু করেছেন বিএনপি সারা দেশ থেকে সশস্র ক্যাডার ঢাকায় জমাচ্ছে! ওবায়দুল কাদেররা ক্ষমতায় আছেন, এমন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার সুযোগ সরকারের আছে। সরকারি দলের নেতাদের এই হুংকারের ফল প্রকাশ শুরু হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের দৌড়ের ওপর রাখতে শুরু করেছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ এরমাঝে তাদের নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্র পাহারায় রাখতে বলেছে। যে কথা আগে বলেছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশও থাকবে। বিএনপির সামনে অগ্নিপরীক্ষা। এ অবস্থায় তারা যদি ভয় পেয়ে রিজভি স্টাইল ব্রিফিং এর ভিতর ঢুকে যায় তাদের পরাজয় অনিবার্য। সাহস যারা দেখায় মানুষ তাদের পক্ষে থাকে। ভীরুদের পক্ষে কেউ থাকেনা। ভীরুদের বিপ্লব চলে নিরাপদ সোশ্যাল মিডিয়ায়।
পাদটিকাঃ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতি নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকরা যে সব তৎপরতা চালান তা বিদেশে অবিশ্বাস্য। ভারতেও এটি সম্ভব নয়। ব্রিটেনের নির্বাচন নিয়ে সেখানকার বাংলাদেশি হাইকমিশনার এমন কিছু করতে গেলে সোজা তাকে ব্রিটেন থেকে বহিষ্কার করা হবে। অবিশাস্য হচ্ছে বাংলাদেশের বিরোধীদল এবং কিছু মিডিয়া এসবের প্রকাশ্য সমর্থক। মনের মধ্যে গোলামীর স্বভাব। এই প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন বিদেশি কূটনীতিকরা তাদের কোড অব কন্ডাক্ট না মানলে তাদের বহিষ্কার করা হবে। এমন একটি নজির দরকার বাংলাদেশের। কারন স্বাধীন বাংলাদেশ এখন কারও সাহায্যে চলেনা।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা