সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সেবা এখন ঘরে বসে মুঠোফোন ও ল্যান্ডফোনেই পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি রাস্তায় কোনো বিপদে বা দুর্ঘটনায় পড়লে একটি নম্বরে ফোন করলেই দ্রুত সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য বলছে, ৫৪টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ‘হেল্পলাইন’ চালু করেছে।
কোনো নির্দিষ্ট একটি সংস্থার হেল্পলাইনে (নম্বর) কেউ ফোন করলেই অপর প্রান্ত থেকে কী ধরনের সহায়তা তিনি চান, প্রথমে তা জানতে চাওয়া হয়। সমস্যা শোনার পর প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা দেওয়া হয়। বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা জানান, ৯৯৯ নম্বরে (জাতীয় জরুরি সেবা) সবচেয়ে বেশি ফোন আসে।
৭০% পুলিশি সেবা চায়
৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স-সংক্রান্ত সেবা পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এই সেবা চালু হয়। জাতীয় জরুরি সেবার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার তবারক উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এই নম্বরে প্রতিদিন গড়ে ১৮ হাজার ফোন (কল) আসে। যত ফোন আসে, তার প্রায় ৭০ শতাংশই আসে পুলিশি সহায়তার জন্য। ২২ থেকে ২৫ শতাংশ ফোন ফায়ার সার্ভিসের জন্য এবং ৫ শতাংশের মতো ফোন আসে অ্যাম্বুলেন্স সেবা পেতে। তিনি বলেন, জাতীয় জরুরি সেবায় আসা মোট ফোনকলের ২০ শতাংশই প্রয়োজনের জন্য ফোন করেন। বাকি ৮০ শতাংশ ফোনে সুনির্দিষ্ট কোনো সমস্যার কথা কেউ বলেন না। অনেকে এমনিতেই ফোন করেন।
৯৯৯ নম্বরে কেউ ফোন করলে সমস্যার ধরন, নাম-পরিচয় ও ঠিকানা জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেমন কেউ পুলিশের সেবার জন্য ফোন করলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সঙ্গে ফোনেই ওই ব্যক্তিকে কথা বলিয়ে (ফোন কনফারেন্স) সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়।
জাতীয় জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ জানায়, ৯৯৯ নম্বরে একসঙ্গে প্রায় দেড় শ ফোন রিসিভ করার সুযোগ আছে। সেবা আরও সহজ করতে এ বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহায়তা চেয়ে বিটিআরসির কাছে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি অনুমোদন হলে কেউ ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় জরুরি সেবার নিয়ন্ত্রণকক্ষের ‘মনিটরে’ ওই ব্যক্তির তথ্য (মোবাইলে নিবন্ধনের সময় যেসব তথ্য দেওয়া হয়) ভেসে উঠবে। একই সঙ্গে তিনি কোন জায়গায় আছেন, তাও জানা যাবে। এই সেবা আরও দ্রুত দিতে পুলিশের টহল গাড়িগুলোও প্রযুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এর ফলে কেউ ফোন করলে কাছাকাছি থাকা পুলিশের টহল গাড়িতে সমস্যাটি জানিয়ে সহজে সহায়তা দেওয়া যাবে।
নারী নির্যাতন রোধে ‘১০৯’
নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পাচার প্রতিরোধে একটি ‘সেল’ চালু করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ‘১০৯’ নম্বরে ফোন করে সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এই হেল্পলাইনের প্রোগ্রাম অফিসার রাইসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের এই নম্বরে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার ফোন আসে। যিনি ফোন করছেন, তাঁর পরিচয় ও সমস্যা জেনে স্থানীয় প্রশাসনসহ যেভাবে প্রয়োজন সেভাবে সহায়তা করা হয়।
দুর্যোগের তথ্য জানতে ‘১০৯০’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইনে ফোন করলে দুর্যোগ-সংক্রান্ত তথ্য জানা যায়। বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা বলেন, মূলত দুর্যোগের সময়ে এই নম্বরে বেশি ফোন আসে।
‘৩৩৩’
সরকারের এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের অধীনে তথ্য ও সেবা দেওয়ার জন্য এই হেল্পলাইন চালু হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। এই নম্বরে ফোন করে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট কোথায়, কীভাবে করতে হয় সে-সংক্রান্ত তথ্যসহ বিভিন্ন সেবা পাওয়া যায়। কোনো সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরও মিলবে এই নম্বরে ফোন করে। আবার সামাজিক সমস্যার কথা জানালে তা সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়।
আরও যত হটলাইন
দুর্নীতি প্রতিরোধে হেল্পলাইন (১০৬) চালু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। কোথাও দুর্নীতি ও অনিয়ম হলে পরিচয় গোপন রেখেও জানানো যাবে এই নম্বরে।
এ ছাড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ১৬১০৮, ঢাকা ওয়াসার ১৬১৬২, নির্বাচন কমিশনের ১০৫, আইন মন্ত্রণালয়ের লিগ্যাল এইডের ১৬৪৩০, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১০৯৮, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬১০৪ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিষয়ে ১৬৫৫৫ হেল্পলাইন রয়েছে।
তবে ৫৪টি হেল্পলাইনের মধ্যে গতকাল শনিবার দুপুরে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বিআরটিএ, শ্রম অধিদপ্তর এবং তিতাস গ্যাসের নামে নেওয়া হেল্পলাইন বন্ধ পাওয়া যায়। বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা জানান, ৫৪টি হেল্পলাইন থাকলেও মূলত চার থেকে পাঁচটির ব্যবহার বেশি হয়।
সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও হেল্পলাইন চালু করেছে। কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক এখন হেল্পলাইনের পাশাপাশি অ্যাপসভিত্তিক সেবাও দিচ্ছে। আর মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ কয়েক বছর ধরেই গ্রাহকদের জন্য হেল্পলাইন সেবা দিয়ে আসছে।
গণপিটুনি, নারী নির্যাতনসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন অপরাধের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির মাধ্যমে ফোন ও বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে অনেক সমস্যার সমাধান পাওয়া যাচ্ছে। এই সুযোগটা মানুষকে নিতে হবে।
NB:This post is copied from prothomalo
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা