নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ব্যতীত প্রকৃত মানবাধিকার অর্জন সম্ভব নয়। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আইন, শিক্ষা ব্যবস্থায় এখনো অসংগতি আছে। বেইজিং ঘোষণা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা একসূত্রে গাথাঁ। প্রতিটি নারীর মানবাধিকার, নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার দিকে জোর দেয়।
বৃহস্পতিবার (০৫ডিসেম্বর) ইউএন উইমেন এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত নাগরিক সংলাপে একথা বলেন, পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মােসলেম। সিরডাপ মিলনায়তনে বেইজিং+২৫ পর্যালোচনা: নাগরিক সমাজের সম্পৃক্তি বিষয়ে জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ডা. ফওজিয়া মােসলেম বলেন, ১৯৯৫ সনে গৃহীত বেইজিং ঘোষণার সাথে অনেকেই যুক্ত ছিলেন। একবিংশ শতাব্দীতে বেইজিং কর্মপরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন করতে হলে আজকের তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করতে হবে। তরুণদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বেইজিং আন্দোলন অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন নারীর মানবাধিকার অর্জনের প্রতিফলন হলো বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে প্রত্যেকে এই কর্মপরিকল্পনার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকলপনা নারীর উন্নয়নে অবদান রেখেছে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের গতি ধীর। নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার দৃঢ় হতে হবে, পুরুষ সমাজকে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে।
ইউএন উইমেন এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শোকো ইশিকাওয়া বলেন, বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা কে এগিয়ে নিতে হলে তরুণ প্রজন্ম কে যুক্ত করতে হবে। এখনো অনেকে বেইজিং সম্পর্কে জানে না। বেইজিং+২৫ পর্যালোচনার আওতায় সম্প্রতি ব্যাংককে বিভিন্ন দেশের সরকারি, বেসরকারি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি ইন্টার মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় । এই কন্ফারেন্সে বিভিন্ন দেশের নারীদের অগ্রগতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে নারীর শিক্ষায়, আয়মূলক কাজে অংশগ্রহণ রেড়েছে।
তিনি বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে নারীর অবদানের জন্য বাংলাদেশ অর্থনীতিতে অনেক উন্নতি করেছে। তবে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি নারীর অগ্রযাত্রায় বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। নারীরা তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বাংলাদেশের সমাজে এখনো জেন্ডার বৈষম্যমূলক রীতিনীতি বিদ্যমান।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজ কর্মপরিকল্পনাকে ঠিক রেখে ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার ২৫ বছরের অর্জন ও চ্যালেঞ্জসমূহ মূল্যায়নের কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৮টি বিভাগীয় শহর – ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, খুলনা (যশোর),সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং ২টি জেলা শহর বিভাগীয় শহরে (কুড়িগ্রাম, বাগেরহাট) বিভাগীয় সংলাপ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। বেইজিং ঘোষণায় নারীর অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ যে ১২ টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে সেখানে কন্যাশিশুকে আলাদা ইস্যূ করে দেখানো হয়েছে। কেননা নারী ও কন্যা শিশুর জন্য গৃহীত কর্মপরিকল্পনা একত্রে সম্পাদন করা যায় না।
প্রথম আলো পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, গত ২৪ বছরে নারীর অগ্রগতি সামান্য। এখনো নারীর প্রতি সহিংসতা সর্বত্র। নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এখনো আছে।
দৈনিক সংবাদ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান বলেন আমাদের অগ্রগতি হয়েছে তবে তা যথেষ্ট নয়। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে অগ্রগতি এখনো শূন্য। নারী নির্যাতনের ঘটনার বিচারে প্রশাসন এখনো তৎপর নয়। পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতির কারণে অপরাধী পার পেয়ে যায়। নারীকে তার অধিকার লড়াই করেই নিতে হবে। এই লড়াইয়ে নারী পুরুষ সকলেই যুক্ত হবে।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, নারীর অগ্রগতি হয়েছে তবে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এখনো রয়েছে। যা নারী- পুরুষ উভয়ের মধ্যেই রয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীকে বিকৃত মানসিকতার বলা হয়। যা অপরাধীকে খুব হালকাভাবে সমাজে উপস্থাপন করে। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নারী একটি উৎস্য হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু নারীকে সোর্স অফ ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে দেখলে সেখানে অডিটিং ও মনিটরিং জোরদার করতে হবে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, নারীরা এখন অনেক চ্যালেঞ্জিং পেশায় যুক্ত হয়েছে। তাদের জন্য দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তবে নারীদের কাজের স্বীকৃতি এখনো দেয়া হয় না।
আরও পড়ুন : একদিকে বিজয়ের উল্লাস, অন্যদিকে প্রিয় দুই শিক্ষকের মৃত্যু আমাকে বিধ্বস্ত করে ফেলেছিল : ডা. মাগদুমা নার্গিস রত্না
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা