মৌলভিবাজার জেলার ঝিমাই পুঞ্জি’র আদিবাসী খাসিয়া (খাসি)-দের ভূমির অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকগণ।
খাসিয়াদের ভূমি সমস্যা নিস্পত্তির জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ গ্রহণ এবং এ বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ, উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তারা।
বুধবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসকল দাবি জানান।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কাপেং ফাউন্ডেশন, ইন্ডেজেনাস পিপলস ডেভলপমেন্ট সার্ভিসেস (আইপিডিএস), কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন, বাপা, বেলা, আরডিসি, ব্লাস্ট, নিজেরা করি ও এএলআরডি যৌথভাবে এটির আয়োজন করে।
নিজেরা করি-র সমন্বয়কারী খুশী কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক দশটি সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত অবস্থান পত্র পাঠ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
অবস্থানপত্রে উল্লেখ করা হয়, চা বাগান সম্প্রসারণ করার নামে ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষ (কেদারপুর টি কোম্পানী লি.) নানা রকম অপচেষ্টার মাধ্যমে ঝিমাই পুঞ্জির আদিবাসী খাসিদের জায়গাজমি দখলের পাঁয়তারা করছে। এমনকি পুঞ্জিবাসী ৭২টি আদিবাসী খাসি পরিবারকে তারা এক প্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় রেখেছে। এসব পরিবারের লোকজন তাদের চলাফেরার প্রধান রাস্তাটি ব্যবহারে চাবাগান কর্তৃপক্ষের বাধার সম্মুখীন হয়ে যাচ্ছেন, তাদের উৎপাদিত পান বিক্রি, চিকিৎসা ও প্রসুতিসেবা এমনকি ধর্মচর্চা কাজও এর ফলে ব্যহত হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঝিমাই পুঞ্জির নির্মাণাধীন একটি গির্জার কাজে ব্যবহারের জন্য টাইলসসহ মালপত্র নিয়ে যাওয়ার পথে চা বাগানের শ্রমিকদের হামলায় তিনজন খাসি ব্রুসলি পাশা (৩৬), জেসমি পাশা (২২) ও রিকুইলমে সুরং আহত হন। আহতদের মধ্যে দুইজনকে মৌলভিবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অবস্থানপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, ঝিমাই পুঞ্জির খাসিদের অজ্ঞাতসারে সরকার গত ২০১২ সালের ১৫ আগস্ট কেদারপুর টি কোম্পানী লিমিটেড-এর পক্ষে লায়লা কবিরের অনুকূলে ঝিমাই চা বাগানের জন্য ৬৬১.৫৫ একর ভূমির লীজ নবায়ন করে।
লীজ দলিলে খাসিদের ভূমিতে বসতবাড়ি, সমাধিস্থল, স্কুল, গীর্জা ঘর ও জীবিকা নির্বাহের জন্য পানজুমের গাছপালার কথা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছে। অবস্থানপত্রে উক্ত লিজ দলিল অবিলম্বে বাতিলসহ খাসিদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাত দফা দাবি উল্লেখ করা হয়।
অনুষ্ঠানে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও ব্লাস্টের প্রধান আইন উপদেষ্টা বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক বলেন, শুধু ঝিমাই পুঞ্জির খাসিরা নন, সারাদেশের বিশেষ করে সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতে আদিবাসী নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।
তিনি ঝিমাই পুঞ্জির খাসিদের সমস্যা সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ঝিমাই পুঞ্জির খাসিদের উচ্ছেদের অপচেষ্টা প্রতিহত করা সবার নাগরিক দায়িত্ব উল্লেখ করে ঐক্যন্যাপের সভাপতি ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য ঐতিহ্যগতভাবে ভোগদখলীয় জমিতে আদিবাসীদের অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতির আহ্বান জানান।
ঝিমাই পুঞ্জির সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ আদিবাসী খাসিদের ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে উল্লেখ করে গবেষণা ও উন্নয়ন কানেক্টিভ-এর সভাপতি ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, কেদারপুর টি কোম্পানীসহ যারা চা বাগান বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘণ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। জরুরিভাবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে তিনি এক্ষেত্রে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান করেন।
খাসিদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে উল্লেখ করে এএলআরডি-র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণ জমি বন্দোবস্ত পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি জমি দখলে রেখেছেন এরপরও তারা খাসিদের ভোগদখলীয় জমি দখলের চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন: সৈয়দ নূরুল আলমের ‘আমার জীবন ও উন্নয়নের ৪৪ বছর’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
নির্লজ্জভাবে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি কর্মকর্তারা আদিবাসী খাসিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-র সহ-সভাপতি ডা. আব্দুল মতিন বলেন, সরকারের উচিত আদিবাসীদের সুরক্ষা করা তাহলে প্রাকৃতিক বন রক্ষা পাবে।
ন্যায়বিচার ও ন্যায্যতা কমিশন সিলেট ডায়োসিসানের সদস্য ফাদার জোসেফ গোমেজ ওএমআই বলেন, ২০১২ সালে সরকার কেদারপুর টি কোম্পানীর সাথে যে লিজ নবায়নের চুক্তি করেছে তাতে জমির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। খাসিপুঞ্জির অস্তিত্ব গোপন করে যেভাবে এটি করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঝিমাই পুঞ্জির মন্ত্রী (হেডম্যান) রানা সুরং, কুইলবং সুরং, হেলেনা তালাং প্রমুখ। তারা চা-বাগানের হস্তক্ষেপের তাদের মৌলিক অধিকার ও জীবন-জীবিকা ব্যহত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে খুশী কবির রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে খাসিদের নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ফেসবুক পেজ :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা