সৈয়দ রাশিদুল হাসান
সূর্যটা পশ্চিম আকাশে ঢেলে পড়েছে। বিকেল নামলো বুঝি। বালু আর ঈট দিয়ে বানানো বই মেলার নতুন রাস্তা গুলো মাড়িয়ে নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে পাঠকেরা ঢু দিচ্ছে বইয়ের দোকানে।
এবারের মেলার বিন্যাস এমনই যে সোহরাওয়ার্দী প্রান্তের বিস্তীর্ণ মেলাকে পাঠক-লেখক-প্রকাশক বান্ধব বলাই যায়। আর তাতেই প্রকাশকের স্বস্তি। স্বস্তি পাঠকেরও। ছড়িয়ে থাকা স্টলগুলোতে পাঠক ঘুরেছেন নিজ ইচ্ছেই ।
বাহারী ষ্টল আর বিভিন্ন নকশায় চোখ ধাদিয়ে যায় দর্শণার্থীর ও পাঠকের।তবে আজকের এই বিশাল মেলার আয়োজনের শুরুটা কেমন ছিলো তা নিয়ে বলবো।
বই মেলার গোড়া পত্তন কিভাবে হলো। আর সে কথা বলতে গেলে যে নামটি সবার আগে চলে আসে ,তিনি হলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। বাংলাদেশী শরণার্থীদের লেখা কলকতা থেকে আনা ৩২ টি বই দিয়ে ১৯৭২ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গনে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর অপার মানুষিক শক্তি নিয়ে যে বইমেলার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।তা আজ বাংগালীর প্রিয় উৎসব।
পরবর্তীতে এ বইগুলি প্রকাশিত হয়েছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ থেকে যার বর্তমান নাম ‘মুক্তধারা প্রকাশনী’।১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বইমেলা চলে এভাবেই।
১৯৭৬ সালে বইমেলার প্রতি উৎসাহিত হন অন্য প্রকাশকরাও। আস্তে আস্তে বইমেলার পরিধি বাড়তে থাকে।ধীরে ধীরে গোটা ব্যাপারটি চিত্তরঞ্জন সাহার সেই উদ্যোগের গণ্ডি ছাড়িয়ে এক সামাজিক অনুভবে পরিণত হয়। এখন বলা হয়বাংগালীর প্রাণের মেলা।
প্রকাশকদের উদ্যোগের সাথে রাষ্ট্র এখন যুক্ত এই মেলায়। আয়োজক সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৫২-এ ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে যার আয়োজন, চিত্তরঞ্জন সাহার এমন আত্মশক্তিই আলোকিত করে জাতীকে,ধাবিত হয় উদার-অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পথে।তিনি যে ফুলকি জেলেছিলেন তা আজ দাবানল।
মেলার মাঠে দেখা হলো সাহ্যিতিক মির্জা সাখাওয়াত হোসেনের সাথে,জানতে চাইলাম চিত্তরঞ্জন সাহা কে নিয়ে। তিনি বলেন”দেখুন,আমাদের স্নায়ুতে বেশ গাঢ প্রভাব আছে অকৃতজ্ঞতা হবার,তাই আমরা যথার্থ সম্মান দিতে পারি না আমাদের গুণী জনদের। ” তার কথার রেশ ধরে কথা হলো কবি কাকন কাজির সাথে।
তিনি বলেন ,”বই মেলা আসলে দেশ বিদেশ থেকে আমরা ছুটে আসি অনেকে।এটা আমাদের মননের আকর্ষন।কিন্তু কজন আমরা চিত্তরঞ্জন সাহার গভীর বই প্রেম মননের ভেতরে জন্ম দিতে পারি।আমাদের শব্দ অক্ষর প্রেম তৈরি করতে হবে। চাকচিক্য আয়োজন নয়। বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গনে বটতলায় ৩২ টি বই দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিলো ,সেই শক্তি প্রবেশ করাতে হবে প্রকাশক ও পাঠকের মধ্যে।”
এদিকে মংগলবার(০৩ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যা নামতেই সোহরাওয়ার্দী প্রান্তে শীত নামে। তবু বইয়ের উত্তাপে উষ্ণতা ডুবে থাকে বইমেলা। এদিন নতুন বই এসেছে ৮১টি। এর মধ্যে হাসনাত আবদুল হাই’র উপন্যাস ‘সাতজন’ প্রকাশিত হয়েছে আগামী প্রকাশনী থেকে। কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘একই সূত্রে গাঁথা’। বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে হারুন অর রশীদের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব: কী ও কেন?’। সুমন্ত আসলামের উপন্যাস ‘যদি কখনো’ প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। অনন্যা থেকে প্রকাশিত হয়েছে মুনতাসীর মামুনের ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন: জেল থেকে জেলে ১৯৫০ থেকে ১৯৫৫’।
মূল মঞ্চে এদিনের আলোচনায় অধ্যাপক হারুন অর রশীদের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব: কী ও কেন?’ বইটি বিষয় হিসেবে ছিল। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্ত্তী। সভাপতিত্ব করেন কবি কামাল চৌধুরী। আলোচক ছিলেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মোজাম্মেল বাবু ও এম অহিদুজ্জামান।বক্তারা বলেন, মেহনতী মানুষের মুক্তির জন্যই ছিল বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব। মুজিববাদই বাংলার মতবাদ। সেই মতবাদই পুর্নজন্ম করেছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বৈষম্য দূর করার মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব এগিয়ে নিচ্ছেন শেখ হাসিনা।
সিরিয়াস পাঠকের অনেকেই বই কিনেছেন বেশ।লক্ষীর দেখাও পেয়েছেন প্রকাশক। বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষকে উপলক্ষ করে এবারের মেলায় শুধু প্রকাশিত বই নয়, নানাভাবেই উদযাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের তেমনই এক উদ্যোগ ‘বঙ্গবন্ধু পাঠ’।
সোহরাওয়ার্দী প্রান্তে ‘বঙ্গবন্ধু পাঠ’ চত্বরে পাঠকের জন্য সাজানো রয়েছে বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনখানি বই-‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজ নামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়া চীন’। পাঠক চাইলেই এখানে বসেই বইগুলো পড়তে পারেন। বঙ্গবন্ধুর দেয়া উক্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে মেলা প্রাংগন।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা