সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার: প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরামের সংগঠক ডা: প্রনবেন্দু দেবরায় ও ডা: মনীষা চক্রবর্তী সোমবার (১৩ এপ্রিল) সংবাদপত্রে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি কোভিড- ১৯. বাংলাদেশেও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে।
করোনা সংক্রমণের এই দুর্যোগে দেশের স্বাস্থ্যখাতের স্বল্প বাজেট বরাদ্দসহ হাজারো অপ্রতুলতা সত্ত্বেও সারাদেশের জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে জনগণের জীবনের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাহসী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য সমস্ত চিকিৎসক-নার্স-টেকনোলজিস্টসহ স্বাস্থ্যখাতের সকল কর্মীদের প্রতি তারা অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একইসাথে স্বাস্থ্যখাতে স্বল্প বরাদ্দ, প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক আয়োজনের অপ্রতুলতা বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তারা প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরামের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে কোভিড -১৯ কে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে দুর্যোগ মোকাবেলা তহবিল হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশেষ বরাদ্দ ঘোষণা করা, প্রত্যেক জেলা হাসপাতালে ন্যূনতম ২৫টি ভেন্টিলেটর মেশিন ও ICU সাপোর্টসহ ৫০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা, প্রত্যেক জেলায় ন্যূনতম ১০০০ শয্যাবিশিষ্ট ‘করোনা হাসপাতাল’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে স্টেডিয়াম, হোটেল, মিলনায়তন ইত্যাদিকে সংস্কার করে সেখানে ঐ জেলার সমস্ত করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা বা সন্দেহভাজন রুগীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টাইন করা, প্রত্যেক জেলায় করোনা রোগের পরীক্ষা করার উপযোগী ও প্রতিদিন ন্যূনতম ৫০০ পরীক্ষা করার ক্ষমতা সংবলিত ল্যাবরেটরি প্রস্তুত করা, প্রত্যেক ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের যুক্ত করে ‘করোনা স্ক্রিনিং টীম’ গঠন করা যারা পাড়া-মহল্লায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা রোগের লক্ষণযুক্ত রোগী খুঁজে বের করবে, পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করবে ও গুজব প্রতিরোধে এবং সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে, স্বাস্থ্যখাতের সকল পর্যায়ে কর্মরত সকল চিকিৎসক-নার্স-টেকনোলজিস্টসহ সকল স্তরের কর্মচারীদের জন্য সরকারি খরচে ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা আবরণী (পিপিই) সরবরাহ করা ও সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের সরকারি খরচে আবাসন, খাদ্য ও পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত সকলের ঝুঁকি বীমা ও ভাতা দিতে হবে। কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার সমস্ত দায়ভার রাষ্ট্র বহন করবে ও এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে গিয়ে স্বাস্থ্যখাতের কারো মৃত্যু হলে কমপক্ষে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী এপর্যন্ত করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় মেটাতে বিভিন্ন খাতে প্রায় ৭৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। তবে এই দুর্যোগ মোকাবেলার প্রথম ধাপে প্রধান ভূমিকা যে খাতের, সেই স্বাস্থ্যখাতে তিনি কোন সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দের ঘোষণা দেননি। এযেন আগুনের উৎসে পানি না দিয়ে আশেপাশে পানি ছিটানোর মত। নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে সাম্প্রতিক সময়ে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে নিয়মের তোয়াক্কা না করে ৬ জন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ডাক্তারদের তিরস্কার করে বিদেশ থেকে ডাক্তার আনার হুমকি দেয়ার তীব্র নিন্দা জানান। তারা আরও বলেন, করোনা ভাইরাস এর মহামারী মোকাবেলায় চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যখাতের সকল কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে লড়াই করছেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এমতাবস্থায় বিশ্বের সমস্ত দেশের সরকার স্বাস্থ্যখাতের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছে। সেখানে আমাদের দেশে সরকার প্রধানের এমন নেতিবাচক মন্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা বলেন, বিপুল জনঘনত্ব, অসচেতনতার কারণে করোনা ভাইরাস এর এই দুর্যোগ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগহীনতা ও সমন্বয়হীনতাই দায়ী, স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়ী করে এই ব্যর্থতা আড়াল করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। তারা করোনা মহামারি প্রতিরোধের এ লড়াইএ জনগণকে সতর্ক, সচেতন ও মানবিক হওয়ার আহবান জানান এবং স্বাস্থ্যখাতের কর্মীদের সহযোগিতা করার আহবান জানান।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা