তাসকিনা ইয়াসমিন : করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষকে জোর করে ঘরে রাখা হচ্ছে তখন বাংলাদেশে এটা নিয়ে পুরো বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। সরকারিভাবে স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারি অফিস ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল থেকে বন্ধ থাকবে। কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি অফিস আদালত বন্ধ না হওয়ায় চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
রাজধানীর আজিমপুর, নিউমার্কেট, লালবাগ, হাজারীবাগ, কামরাঙিরচর এই এলাকাগুলোয় দেখা যায়, মানুষ আগের মতোই দিব্যি চলাফেরা করছে। কেউ কেউ বাইরে বেড়াতেও যাচ্ছে। এই এলাকাগুলোতে শিশুরা স্কুল ছুটি থাকায় বাড়িতে অবস্থান করলেও পরিবারের অন্য সদস্যরা দিব্যি বাইরে যাচ্ছে এবং ফিরে এসে সকলের সঙ্গে একসঙ্গে থাকছে।
রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা আফরোজা খানম বলেন, আমি একটি সুপারশপে চাকরি করি। সেখানে মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও বুধবার থেকে কাজ করতে হবে। আমাদের এটা বন্ধ দেয়নি আমাকে যেতেই হবে।
আজিমপুরের বাসিন্দা নাহরিনা আহমেদ একটি বেসরকারি হাসপাতালে নন- ক্লিনিক্যাল সেকশনে চাকরি করেন। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতাল সরকার বন্ধ দেয়নি। আমাদেরকে অফিস থেকে বলা হয়েছে, আমাদের নিরাপত্তা পোশাক দেবে। আর গাড়িতে করে নিয়ে যাবে আর গাড়িতে করে দিয়ে যাবে। তবে এখনও কিছূ দেয়নি। আমরা তো চাকরি করি। অফিস যেভাবে বলবে সেভাবেই করতে হবে।
নাহরিনার বাড়িতে বয়স্ক অসুস্থ বাবা এবং ছোট দুই শিশু আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাকরি যখন করি তখন অফিস তো যাওয়ায় লাগবে। ভাইরাস যদি ধরে তো কিছূ করার নাই।
রাজধানীর শেখ সাহেব বাজার এলাকায় থাকেন মো. জসিম উদ্দিন। তিনি কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, সরকার ছুটি দিলে তো হবে না। আমাদের পেট চালাতে হবে। তাই আমরা ব্যবসা করাই লাগবে। ঘরে বন্দী থাকা সম্ভব না।
এদিকে রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, দেশে করোনাভাইরাসে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারজনে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৬ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ জনে। তিনি এসময় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কিছূ নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
সিনিয়র সাংবাদিক আফসান চৌধুরী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেভাবে লকডাউন (সব কিছু বন্ধ )করে দিচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশ সরকার সেটি করছেনা। এতে করে বিপদ বাড়ছে। একইসঙ্গে সরকার ঢাকায় বসবাসকারি বস্তিবাসীর দিকে কোন নজর দিচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্তিতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। তিনি বলেন, অবিলম্বে সরকারকে সবকিছু বন্ধ করে দিতে হবে। বস্তিবাসীদেরসহ ঢাকাবাসীর টেস্ট করার প্রতি জোর দিতে হবে। এটি না করতে পারলে আমরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে যাব। এটা হলে পরিণতি কি হবে আমি ভাবতে চাই না।
এদিকে, সরকার ২৬ মার্চ থেকে সরকারি অফিস, টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। এই ছুটি পাবার পরই জনগণকে বাস-ট্রেনে ভিড় করে ঢাকা ছেড়ে বাড়ি যেতে দেখা গেছে। এই অবস্থায় সরকারি ২৬ মার্চ থেকে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে। ট্রেন চলাচল ২৫মার্চ সন্ধ্যা থেকে বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। আর ৪টি দেশ ছাড়া বাকি দেশগুলো থেকে প্লেন আসা বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, জনগণকে ঘরবন্ধী রাখতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের বাংলাদেশে সংক্রমণ, বিস্তৃতির সম্ভাব্যতা ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলো ও উপকূলীয় এলাকায় ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী নিয়োজিত থাকবে।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাসটি। এখন পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৮ এবং মারা গেছেন ১৬ হাজার ৫১৪ জন। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক লাখ দুই হাজার ৬৯ জন।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা