বরিশাল প্রতিনিধি : করোনা ঝুঁকিতে যখন বাংলাদেশ ঠিক সেইসময়ে বরিশাল জেলায় প্রস্তুতির ঘাটতিতে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ। বুধবার (১৮ মার্চ) আয়ােজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ সংক্রান্ত নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন বাসদ নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা ভাইরাসে সংক্রমণে সারা পৃথিবীতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত ‘গ্লোবাল হেলথ ইমার্জেন্সি‘ চলছে। এ পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক লক্ষ আশি হাজারের বেশি। এ রোগে মৃতের সংখ্যাও সাত হাজার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে এসেও এই ভাইরাস পৌঁছেছে এবং এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ জন। এই মহামারী রোগের নেই তেমন কোন চিকিসা, আছে শুধু প্রতিরোধ। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে বাংলাদেশের মতো ঘণবসতিপূর্ণ দেশে এ রোগের ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। সে তুলনায় এ রোগ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ অত্যন্ত কম। বরিশাল বিভাগীয় শহর হলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি সারাবিশে^র মানুষের উদ্বিগ্নতার কারণ এই প্রাণঘাতী ভাইরাস নিয়ে বরিশালের প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দিক থেকে দৃশ্যমান উদ্যোগ এখনো চোখে পড়ার মতো নয়।
প্রতিরোধের জন্য নেই দৃশ্যমান কোন কর্মসূচি উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা আর পরিচ্ছন্নতা হচ্ছে প্রধান নিয়ামক। কিন্তু বরিশালে এ বিষয়ে কোন ধরণের উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কোন ধরনের প্রচারপত্র বিলি, মাইকিং, কাউন্সিলিং চোখে পড়ছে না। বিভিন্ন নেতাদের ছবি আর নাম সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুনে নগরী ছেয়ে আছে, কিন্তু করোনা রোগ প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে বরিশাল প্রশাসন বা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোন জনসচেতনতামূলক ব্যানার-ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে না। এলাকায় এলাকায় জনসচেতনতা তৈরিতেও জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
হাসপাতালের দৈন্যদশা উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ এই দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহ” এবং অন্যতম প্রাচীন মেডিকেল কলেজ হলেও দু:খজনক সত্য হলো এই মেডিকেল কলেজের অবস্থা খুবই করুণ। গত ডিসেম্বর মাস থেকে শেবাচিমের আই সি ইউটি টি বিকল হয়ে আছে। করোনা ভাইরাসের রোগীকে চিকি’সা দেয়ার জন্য কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের সাপোর্ট দেয়ার জন্য ভেন্টিলেটর মেশিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিসেম্বরে ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট থাকায় তরুণ চিকি’সক ডাক্তার নয়ন এর করুণ মৃত্যুর কথা আমরা সবাই জানি। এই বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আইসিইউ এর ভেন্টিলেটর চালু করা হয়নি।
হাসপাতালে কর্মরত চিকি’সক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়নি। অর্থা’ যারা স্বাস্থ্যসেবা দিবেন তারা আছেন সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে। ডাক্তার-নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে করোনা রোগে আক্রান্ত বা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাযুক্ত রোগিদের চিকি’সাসেবা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।
সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে করোনা রোগী সনাক্তকরণের প্রক্রিয়াটি দীর্ঘসূত্রী ও অত্যন্ত দূরুহ। এবং এই প্রক্রিয়াটি আমাদের কাছে প্রায় অসম্ভব মনে হয়েছে। কোন রোগী করোনা আক্রান্ত মনে হলে জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ওঊউঈজ এর হটলাইনে ফোন করে রোগ সম্পর্কে জানালে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য লোক এসে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় গিয়ে করোনা রোগ সনাক্তের পরীক্ষা করবেন। তারপর রোগী বা সংশিষ্টকে পরবর্তীতে তার রিপোর্ট সম্পর্কে অবহিত করা হবে। করোনা রোগের লক্ষণ নিয়ে কেউ সণাক্তকরণ করতে চাইলে সেই রোগ সনাক্ত হতে হতে যে সময় লাগবে তাতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত কঠিন।
বিদেশ ফেরতদের প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগিরা বিদেশ ফেরত বা তাদের সংস্পর্শে আসা মানুষদের মধ্যে। কাজেই বিদেশ ফেরত মানুষদের তথ্য সংগ্রহ ও তাদেরকে স্বেচ্ছা কোয়ারেনটাইন বা প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা, কাউন্সিলিং ও মনিটরিং করার জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগের কোন বিকল্প নাই। অথচ বরিশাল বিভাগে বিভিন্ন জেলায় উপজেলায় বিদেশ থেকে শত শত মানুষ ফিরে এসেছে। কিন্তু তাদের তথ্য সংগ্রহ করা বা তাদের আলাদা থাকা বা উপসর্গ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে প্রশাসন বা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ প্রায় শূন্য।
জনগণকে সচেতন করার কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে তারা বলেন, এই সচেতন করার অংশ হিসেবে আমরা বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত করবো। বিশেষ করে ঘণবসতিপূর্ন এলাকা যেমন, রসুলপুর, কেডিসি, পলাশপুর, বিসিক এলাকাগুলোসহ বরিশালে এলাকায় এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করে ঘরে ঘরে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
প্রচারপত্র, স্টিকার, ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে আমাদের করণীয় বিষয়ে অবহিত করবো। এছাড়াও প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমরা স্বেচ্ছাসেবক টিম তৈরি করছি যারা অন্যদের সচেতন করা, এলাকায় বিদেশ ফেরত কেউ আসলে তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা, কেউ অসুস্থ হলে তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজনে চিকি’সকের পরামর্শ নেয়া এধরনের কাজগুলো করবে।
বরিশালের লঞ্চঘাট, বিমানবন্দর, বাস টার্মিনালে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য থার্মাল স্ক্যানার ও মেডিকেল টিমের ব্যবস্থা, হাত মুখ ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি ও সাবানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সিটি কর্পোরেশন, সিভিল সার্জন অফিসে স্মারকলিপি প্রদান করবো।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ ও চিকি’সার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ, নষ্ট আইসিইউ সচল করা, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধাসহ কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা এবং রোগীদের ও সেবাদানকারী ব্যাক্তিদের কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা করার জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সিভিল সার্জনের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করবো।
করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সহজে এবং দ্রুত সময়ে নিশ্চিত করার জন্য শেবাচিম হাসপাতালসহ অন্তত বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের জন্য জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ওঊউঈজ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবো।
কেউ করােনাভাইরাস সম্পর্কে পরামর্শ করতে চাইলে তার নম্বর দেন। নাম্বারগুলো ০১৫৭২-৩১৪০৮৫, ০১৭১১-২২৭৫১৯, ০১৭৬১-৭০৯৯৫৯, ০১৭২৮-৯৭০৫০৫, ০১৭৯৪-৬৫২৭৩৪ ।
সংবাদ সম্মেলন থেকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা