তাসকিনা ইয়াসমিন : রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, দেশে মোট করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৪ জন। গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১১ জন। মারা গেছেন ৫ জন। সারাদেশে কোয়ারেন্টিনে (ঘরবন্দী) আছেন ৩০,৭৬৮ জন। এই অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, চিকিৎসকরা তাদের পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পাচ্ছেননা। দেশের বিভিন্ন স্থানে রোগীদের অভিযোগ, তারা চিকিৎসা পাচ্ছেননা। আবার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বারবার নোটিশ দেয়া হচ্ছে যা, চিকিৎসকদের জন্য অসম্মানজনক হচ্ছে বলে তারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পরবর্তীতে স্বাস্থ্যসচিব এসবের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। এই অবস্থায় করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে চলে আমাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের মিউটেশন হচ্ছে। এটা কোনদিকে যাবে সেটা বলা যাচ্ছেনা। আমি মনে করি, চীনের উহান প্রদেশে যখন এই ভাইরাস প্রথম দেখা যায়, তখন লকডাউন করে দিল এবং তারা সাকসেসফুল হলো। সেখান থেকে প্রস্তুতিটা আমাদের সেই রকম ছিলনা। আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম কিন্তু প্রস্তুতিটা ছিলনা। এই যে, চিকিৎসকের জন্য পিপিই নিতে হলো বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। যদি সরকারের প্রস্তুতি থাকত যে পিপিই সাতদিনের মধ্যে ১০ লাখ বানানো যায় আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিয়ে। সেটা করা হয়নি। এ থেকেই বোঝা যায়, এই করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে যতটা প্রস্তুতি নেয়া যায় সেটার পরিকল্পনা ছিলনা। মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে অনেকগুলো প্রটোকল করা হয়েছে। কিভাবে পিপিই কিভাবে পরতে হবে। কিভাবে খুলতে হবে। কিভাবে ফার্স্ট লাইন অব ট্রিটমেন্ট কারা দিবে। এগুলো কেন আগে করা হয়নি। এখন পিপিই ব্যবহার করার জন্য ট্রেনিংয়ের দরকার আছে। তাহলে এই তিনমাস আমরা কেন ট্রেনিং দিলাম না?
ডা. রাসকিন বলেন, একটি সেন্টারে শুধু করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করা হবে। এটি কেন হবে? ডা. জাহিদুর রহমান লিখেছে বায়ো সেফটির লেভেল টু এবং ইকুভ্যালেন্ট ল্যাব হলেই চলবে। কিন্তু এরা বলছে লেভেল থ্রি লাগবে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী এটা টু হলেই চলবে। আইইডিসিআর এখন বলছে পিসিআর মেশিন দিয়ে আরো কয়েকটি যায়গায় টেস্ট হবে। ইতালিতে যে অবস্থা তা জানার পরে অন্তুত আরো ১৫ দিন আগেই এটা করা যেত। হু বার বার বলছে টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট। দক্ষিণ কােরিয়া প্রতিদিন ১০ হাজার টেস্ট করেছে। যতবেশি টেস্ট হবে তত বেশি নিয়ন্ত্রণ হবে। কিন্তু বাংলাদেশে এই টেস্টের বেশি দেখা যাচ্ছেনা। মাত্র ৯শ টেস্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, চীনের ঘটনার পরে আমরা তিন মাস সময়টায় ঘটনার ভয়াবহতা ধারণা করতে পারিনি। যার কারণে সত্যিকারের একশনগুলো হয়নি। একলা চলো নীতিটা না দিয়ে সমন্বয় করে কাজ শূরু করলে ভাল হতো। আইইডিসিআরের প্রাক্তন পরিচালক বিশেষ করে প্রফেসর মাহমুদুর রহমান, বে-নজীর আহমেদ, মুশতাক ভাই এই তিনজনকে নিয়ে একটা স্ট্রং কমিটি করা দরকার ছিল। তাহলে ভুলগুলো হতো না। সরকারি পর্যায়ে নিপসম, বাতজ্বর, আর ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে এবং বেসরকারি পর্যায়ে যে কয়জন ইপিডেমোলোজিস্ট আছি তাদেরকে নিয়ে কাজ করা দরকার। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত যারা ফ্রন্টলাইনে কাজ করবে চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা এই কয়টি বিভাগের কাউকে কোনভাবেই মনে কষ্ট দেয়া যাবেনা।
ডা. রাসকিন বলেন, গণস্বাস্থ্যের টেস্ট কীটটা যদি দ্রুত সময়ে আসে সেগুলো দিয়ে দ্রুত টেস্ট করতে হবে। যতবেশি সম্ভব টেস্ট করা যাবে ততই উপকার হবে। যেহেতু এটা একটা ডিজাস্টার, তাই সরকারি উচ্চ পর্যায়ের দক্ষ কোন ব্যক্তিকে এই বিষয়ে দায়িত্বটা দেয়া উচিত। একেবারে জাতীয় পর্যায় থেকে সবাইকে নিয়ে যুদ্ধ করার পরিবেশ গড়ে তোলা উচিত। একইসঙ্গে সরকার যে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা যেন ১৪ দিন একটানা হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে এবং সশস্ত্র বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে যেন আমরা এই যুদ্ধ জয় করতে পারি। এই ঘটনায় আমি গণমাধ্যম খুব ভাল ভূমিকা রাখছে এর জন্য ধন্যবাদ দেব। এই দুর্দিনে দেশের কোটিপতিরা এগিয়ে আসবে এই প্রত্যাশাও করি। যার যার নিজ এলাকায় কাদের সাহায্য দরকার তারা যেন তালিকা করে সহায়তায় এগিয়ে আসে।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা