মো. আলী আশরাফ খান
আয়োডিনের ঘাটতিজনিত সমস্যা:
————————————————
আয়োডিন আমাদের শরীরে থাইরক্সিন নামক হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হলো আয়োডিন। মানুষের শরীরে যে রাসায়নিক পরিবর্তন হয়ে থাকে তার সবগুলো পরিবর্তনে সাহায্য করে এই আয়োডিন। সেই সঙ্গে আমাদের গ্রহণ করা খাবার সমূহ শোষণ, হজম ও পেট পরিষ্কার করা পর্যন্ত সব কিছুতেই আয়োডিনের দরকার।
যখন আমাদের শরীরে আয়োডিনের ঘাটতি দেখা দেয় তখন প্রয়োজনীয় থাইরোয়েড হরমোন থাইরক্সিন উৎপন্ন হয় না ত্রবং আমরা বিভিন্ন আয়োডিনের অভাব জনিত স্বাস্থ্যসমস্যায় ভুগি, যেগুলোকে আয়োডিনের ঘাটতিজনিত সমস্যা বা ইংরেজিতে আয়োডিন ডেফিসিয়েন্সি ডিজঅর্ডার (আইডিডি) বলা হয়ে থাকে।
থাইরয়েড নামটা আমরা অনেকেই জানি। শরীরের বৃদ্ধি ও বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে এই থাইরয়েড গ্ল্যান্ড। থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য যে খনিজ উপাদানটি অত্যাবশ্যকীয় তা হচ্ছে আয়োডিন। আয়োডিনের ঘাটতি হলেই থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে কোলেস্ট্ররেলের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।আয়োডিনের ঘাটতির ফলে শরীরে ক্লান্তি বা অবসাদ ভাব থাকতে পারে, বিষণ্ণতা, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা যায়। এছাড়াও আয়োডিনের ঘাটতির ফলে গর্ভধারণের সময়ে এবং শিশুর জন্মকালীন বিকলাঙ্গসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই এ আয়োডিন আমাদের শরীরে কতটা থাকা উচিত? এগুলো আমরা কোথা থেকে পাব? এর উৎস কী? সেসব সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার।
প্রতিদিন কতটা আয়োডিন দরকার?
————————————————–
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, একজন সুস্থ মানুষের খাবারে প্রতিদিন ১৫০ মাইক্রোগ্রাম এবং গর্ভবতী মায়েদের খাদ্যে ২০০- ৩০০ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন থাকা উচিত।
কিন্তু একেকটি খাবারে আয়োডিনের মাত্রা একেক রকম। তাই কোন খাবার কতটুকু খেলে পরিমাণ মতো আয়োডিন পাওয়া যাবে তা বলা কঠিন। তবে সাদা মাছে যতটা আয়োডিন থাকে, তৈলাক্ত মাছে ততটা থাকে না। ঠাণ্ডা দুধে বেশি আয়োডিন থাকে।
আয়োডিনের উৎস (আহারোপযোগী)
—————————————————-
-প্রাণিজ উৎস যেমন-সামুদ্রিক মাছ (তাজা/শুটকি)
– প্রাকৃতিক উৎস যেমন-সামুদ্রিক আগাছা
– আয়োডিন মিশ্রিত খাবার লবণ
– এছাড়াও যেসব এলাকায় মাটিতে আয়োডিন আছে সেসব এলাকায় শাক-সবজিতেও পাওয়া যায়।
আয়োডিনের কাজ
————————–
– থাইরক্সিন নামক হরমোন তৈরীর জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
– শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
– মানব দেহে যে কোন রাসায়নিক পরিবর্তনে জন্য সাহায্য করে।
– গ্রহণকৃত খাবার হজমশক্তি, আত্মীকরন, শোষণ, সংগ্রহণ ও মল নিঃসরণে সহয়তা করে।
– শরীরে তাপমাত্রা রক্ষা করে।
– শরীরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পুষ্টি উপাদান পৌছায়।
– শরীরের জোড়া অংশ নড়াচড়ার জন্য সাহায্য করে।
– শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের করে দেয়।
আয়োডিনের অভাবে কি হয়?
—————————————
শরীরে আয়োডিনের ঘাটতি দেখা দিলে প্রয়োজনীয় থাইরোয়েড হরমোন উৎপন্ন হয় না। তখন তাকে হাইপোথাইরয়ডিজম বলা হয়। এর ফলে আলসেমির ভাব, ঠাণ্ডা সহ্য করতে অক্ষমতা, অনিদ্রা, চামড়া শুষ্ক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। আয়োডিনের অভাব হলে, হাইপো থাইরয়েডিজম, অটো ইমিউন ডিজিজ, গলগণ্ড ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গলগণ্ড
———–
বাংলাদেশের অনেক মানুষের এ রোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মহিলাদের এ রোগ বেশি দেখা দেয়। গলগণ্ড রোগকে স্থানীয় ভাষায় ঘ্যাগ রোগ বলা হয়। শরীরে আয়োডিনের অভাব হলে এ রোগ হয়ে থাকে। আমাদের দেহে যে পরিমাণ আয়োডিনের প্রয়োজন তা খুবই সামান্য, কিন্তু তাও উপযুক্ত খাবার না খাওয়ার কারণে পূরণ হচ্ছে না। আমরা অনেকেই জানি না কোন খাবারে কি পুষ্টিগুণ রয়েছে। আয়োডিনের প্রধান উৎস হলো সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী। আয়োডিনের অভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য আয়োডিন যুক্ত লবণ ও সামুদ্রিক মাছ খাওয়া দরকার।
আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে আয়োডিন। আবার আমাদের দেহের পুষ্টি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরবরাহ করার কাজ করে থাকে আয়োডিন। শরীরের জোড়া অংশগুলো নাড়া চাড়া করার জন্যও আয়োডিন খুবই প্রয়োজনীয়। সেই সঙ্গে শরীর থেকে সব রকম বর্জ্য পদার্থ বাইরে বের করে দিতেও সাহায্য করে আয়োডিন। তাই আয়োডিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনী একটি উপাদান।
আয়োডিন যে খাবার থেকে পাওয়া যায়?
——————————————————-
আয়োডিন পাবার জন্য সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। সামুদ্রিক মাছ টাটকা ও শুটকি খেতে পারেন। এছাড়াও আয়োডিনের প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে সামুদ্রিক আগাছা। আমরা সবাই জানি, লবণের মধ্যে আয়োডিন রয়েছে। তাই লবণ মিশ্রিত খাবার খেতে পারেন। এছারাও অনেক জায়গার মাটিতে আয়োডিন থাকে। সেখানে যেসব সবজি উৎপাদন করা হয় সেগুলোতেও আয়োডিন থাকে।
আরও পড়ুন: নুনের সাতকাহন – পর্ব ১৭
# লেখক, মহাব্যবস্থাপক (অবসরপ্রাপ্ত), বিসিক।
ফেসবুক : চলবে …