বাংলাদেশে স্বাধীন গনমাধ্যমের ক্ষেত্রে অপরাধীদের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার সংস্কৃতিকে গণমাধ্যম অধিকারকর্মীরা জোরালোভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ স্বাধীন মত প্রকাশ সুরক্ষা নেটওয়ার্ক এর নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, মুক্ত চিন্তার ক্ষেত্র সংকুচিত করা এবং অপরাধীদের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার সংস্কৃতি আমাদের গভীরভাবে শঙ্কিত করেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ২১ বছর বয়সী আবরার ফাহাদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কারণে নির্মম হত্যাকান্ডে আমরা বিস্মিত।
গত ৭ অক্টোবর শুধুমাত্র ফেসবুকে একটি পোষ্ট দেবার কারণে বুয়েটেরই ছাত্ররা, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য, যে নিষ্ঠুরতায় তাকে অত্যাচার করে হত্যা করেছে যা, বর্ণনা করার ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছি।
আমরা বলতে চাই যে, এই ভয়ঙ্কর হত্যাকান্ডটি বাক স্বাধীনতা, গনমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকরের উপরে আক্রমন; এবং বাংলাদেশে কঠোর আইনের শাসনের আরেকটি স্পষ্ট উদাহরণ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ আবরারকে অত্যাচার করে মেরে ফেলার পেছনে সন্দেহভাজনদের (বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সদস্যদের) বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সম্প্রতি যে চুক্তি হয়েছে সে সম্পর্কে ফেসবুকে তার দেয়া সমালোচনামূলক পোষ্টে বিরক্তির প্রমাণ পায়।
আমরা হতভম্ভ হয়ে যাইযে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে তার ফেসবুক এ্যাকাউন্ট চেক করে এবং ৫ অক্টোবর বিকেল ৫:৩২ মিনিটে তার দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসকে আপত্তিকর বলে মনে করে।
আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই যে, অপরাধীদের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার যে সংস্কৃতি, তার কারণেই ফেসবুক ব্যবহারকারী, ব্লগার, লেখক এবং সাংবাদিকদের জঘন্যভাবে হত্যাকারী এইসব দুষ্কিৃতিকারীরা বিচার প্রক্রিয়া থেকে বেঁচে যায়।
আমাদের কাছে প্রমাণ আছে যে, অনলাইনে ভিন্নমত প্রকাশের জন্যে এবং বাংলাদেশের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ে সমালোচনা করার জন্যে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, লেখক, ব্লগার যাদের অধিকাংশই অরাজনৈতিক; তাদেরকে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত আইনে অভিযুক্ত করা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় যা পরবর্তিতে নতুনভাবে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ২০১৮ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে, কারণ এই আইন মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সেল্ফ সেন্সরশিপ প্ররোচিত করে।
আমরা আরও লক্ষ্য করেছি যে, যখনই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন কার্যকর হয়, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের দ্বারা অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীদের হয়রানি করা হয় এবং পরবর্তিতে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। সাইবার অপরাধ এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অধীনে মামলার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমরা বারবারই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রত্যাহার, এই আইনের অধীনে সকল মামলা প্রত্যাহার এবং নির্বিচারে আটকদের মুক্তি দাবী করে আসছি।
সাইবার অপরাধ আইনের অধীনে বাক স্বাধীনতা চর্চাকারীদের হয়রানিকে আমরা নিন্দা জানাই যা সাধারণ জনগন এবং মূলধারার সাংবাদিকতায় ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে।
আমরা বিশ্বাস করি যে, দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অভাবে বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী নেতৃবৃন্দ হলেন, আর্টিকেল ১৯ এর ফারুখ ফয়সাল, ভয়েস এর আহমেদ স্বপন মাহমুদ, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স এর সেলিম সামাদ, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে)’র খায়রুজ্জামান কামাল, পেন ইন্টারন্যাশনালের ডা. আইরিন জামান, সেন্টার ফর সোশ্যাল একটিভিজম এর সাঈদ আহমেদ, মিডিয়া রাইটস জার্নালিস্টস এর পুলক ঘটক, কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)’র মাইনুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) এর আহমেদ উল্লাহ।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা