অনলাইন ডেস্ক
বৃহস্পতিবার (৬ মে) যেকোনো সময় তাকে চার্টার্ড বিমানে করে সিঙ্গাপুর হয়ে লন্ডন নেওয়া হবে। সঙ্গে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদল এবং পরিবারের সদস্যরাও থাকবেন।
খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়ার অ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনো কোনো কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
অন্যদিকে লন্ডনে নিতে হলে খালেদা জিয়াকে প্রায় ১০ ঘণ্টা আকাশপথে ভ্রমণ করতে হবে। অবশ্য তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে নেওয়া হবে। এর পরও এই দীর্ঘ ভ্রমণের ধকল তিনি সইতে পারবেন কি না, চিকিৎসকদের মধ্যে সেই প্রশ্নও আছে। কারণ তাঁকে অক্সিজেন নিতে হচ্ছে।
এদিকে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে, বিশেষত লন্ডনে নেওয়ার প্রশ্নে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সম্মতি পাওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে উঠছে। কারণ সেখানে খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রয়েছেন। অনেকের মতে, এ কারণেই লন্ডনের বিষয়ে সরকারের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ রয়েছে। কারণ খালেদা জিয়া সেখানে গিয়ে রাজনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হবেন কি-না, তা নিয়ে অনেকের মাঝে নানা সংশয়-সন্দেহ রয়েছে। সে কারণে বিএনপির চেষ্টা সত্ত্বেও চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি আটকে আছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার রাজি হলে আধাঘণ্টার মধ্যেই সব ব্যবস্থা করা যায়।
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য ম্যাডামকে বিদেশে নেওয়া দরকার। কিন্তু এ জন্য আদালতের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন নেই। নির্বাহী আদেশবলে তিনি যেমন বাইরে আছেন, তেমনি সরকার চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এটি আদালতকে বলে দিলেই হয়’।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আদালতের অনুমতি লাগবে। তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার তাঁকে (খালেদা জিয়া) মুক্তি দিয়েছে। তবে এখন বিদেশ নিতে হলে তাঁকে আদালতে আসতে হবে বলে আমার মনে হচ্ছে’।
তিনি আরো বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা কতটুকু প্রয়োজন। বাংলাদেশেই তাঁর চিকিৎসা সম্ভব কি না, বাংলাদেশে কি ব্যবস্থা আছে, সব কিছু দেখেই সরকার বিবেচনা করবে’। তিনি আরো বলেন, সরকার যদি প্রয়োজন মনে করে, আর আইন অনুযায়ী প্রয়োজন হয় যে আদালতে যেতে হবে, তবে আদালতে আসতে হবে। যেখানে প্রয়োজন সেখানেই সরকার আসবে। সরকারই ঠিক করবে প্রয়োজন আছে কি-না। কারণ এটা সরকারি আদেশ। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারই করণীয় নির্ধারণ করবে’।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো বলা হলেও বাস্তবে তাঁর শরীরে করোনা-পরবর্তী জটিলতা দেখা দিয়েছে। তাঁর ফুসফুসে পানি জমছে এবং এরই মধ্যে সেখান থেকে তিন ব্যাগ ফ্লুইড বের করা হয়েছে। তাঁর ডায়াবেটিস ও অক্সিজেনের মাত্রাও ওঠানামা করছে। এ জন্যই তাঁকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা-পরবর্তী এই জটিলতা বাংলাদেশের অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। এগুলোকে ‘পোস্ট কভিড কমপ্লিকেশন’ বলা হয়। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে এই জটিলতা বেশি দেখা যাচ্ছে। ৭৬ বছর বয়স্ক খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তাঁর কিডনির সমস্যাও রয়েছে। একারণে তাঁর চিকিৎসকদের কেউ কেউ মনে করেন, করোনা-পরবর্তী পর্যায়ে যেকোনো সময় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। সূত্র মতে, এমন আশঙ্কা থেকেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার কথা উঠছে।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার সুপারিশ করে। এর পরপরই পরিবারের সদস্যরা একমত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করেন।
এর আগে গতকাল দিনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ম্যাডামের শরীর আজ (গতকাল) কিছুটা খারাপ হয়েছিল। তাঁর অক্সিজেন কিছুটা বেশি প্রয়োজন হয়েছে। তবে পরে ঠিক হয়ে গেছে’। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাঁকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো খবর নেই। এটি চিকিত্সক ও তাঁর পরিবারের বিষয়। আর সে রকম কোনো উদ্যোগ নিলে আমরা নিজেরাই গণমাধ্যমকে তা জানাব’।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, চেয়ারপারসনকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে পারলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতো। কারণ সিঙ্গাপুরের ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের মনোভাব কিছুটা নমনীয়। কিন্তু সেখানে এই মুহূর্তে বাংলাদেশিদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ রয়েছে। একই সঙ্গে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে ১৪ দিন। এটা খালেদা জিয়ার জন্য বেশ কঠিন হবে। ফলে বিএনপি এটিকে ভায়াবল মনে করছে না।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথমে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিলেও গত ২৮ এপ্রিল থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। ১০ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর চিকিৎসার বিষয়টি দেখছে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলতে থাকার মধ্যেই হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় গত ৩ মে তাঁকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা