ফজলুল বারী : করোনায় এখন প্রতিদিন মিনিটে মিনিটে বদলাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার জীবন। রবিবার নতুন যে সরকারি আদেশ হয়েছে এতে করে এখন থেকে একসঙ্গে দু’জনের বেশি রাস্তা বা কোথাও জমায়েত হতে পারবেননা। আগে এই সংখ্যাটি ছিল দশজন। করোনা ভাইরাস মহামারী আকারে বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে জমায়েত নিয়ে এমন ঘন ঘন অবস্থান পাল্টাচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ের এই মহাদেশ। প্রথম দিকে আউটডোরে পাঁচশ, ইনডোরে একশ মানুষের জমায়েত অনুমোদন করলেও পরে এটি বদলে ফেলা হয়। ইনডোরে একশ’র কম জমায়েতের কথা বলতেই দেশটির সব মসজিদ-গির্জা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর বলা হয় বিয়েতে ৪ জন, শেষকৃত্যে ১০ জনের বেশি জমায়েত চলবেনা। রবিবার বলা হলো জমায়েত ২ জনের বেশি নয়। তবে একটি পরিবার যদি শপিংমল বা কোথাও একসঙ্গে বেরোয় সে ক্ষেত্রে এই দু’জনের নীতি কার্যকর হবেনা। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ায় সর্বত্র এখন সামাজিক দূরত্বের দেড় মিটার দূরত্ব কড়াকড়িভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্বের সরকারি নীতিমালা কড়াকড়ি আরোপ শুরু হলে এদেশের বার-রেষ্টুরেন্ট, নাইট ক্লাব-ক্যাসিনো-জিম সহ নানাকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। রেষ্টুরেন্টগুলোতে টেইকওয়ে সার্ভিস চালু থাকবে বলা হলেও অনেক রেষ্টুরেন্টে সেটিও চলেনি। দেড় মিটারের সামাজিক দূরত্ব সহ সরকারি প্রতিটি আদেশ কার্যকর করতে পুলিশ সক্রিয়। কোথাও কাউকে আইন অমান্য করতে পেলেও স্পট ফাইন করা হচ্ছে এক হাজার ডলার। অস্ট্রেলিয়ায় অবশ্য এসব কোন জরিমানা কোথাও অন দ্য স্পষ্ট আদায় করা হয়না। এসব জরিমানার চিঠি সংশ্লিষ্টদের বাড়ির ঠিকানায় যাবে। চিঠিতে উল্লেখিত তারিখের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হয়। নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে জরিমানা শোধ না বাড়লে প্রশাসনিক ব্যয় সহ বাড়বে জরিমানার পরিমান। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ার এসব জরিমানা কিস্তিতে শোধের ব্যবস্থাও আছে। রবিবার নতুন সরকারি আদেশে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সত্তুর বছর বা তদুর্ধ বয়সীদের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। ক্রনিক রোগ আছে এমন ৬০ বছর বয়সী ব্যক্তি, ৫০ বছর বয়সী আদিবাসী নাগরিকদেরও বলা হয়েছে বাড়িতে থাকুন। বয়স্কদের বাড়িতেও থাকতে হবে আইসোলেশনে। খাবারের জন্যে শপিংমলে যাবার মতো জরুরি প্রয়োজনে তারা ঘরের বাইরে আসতে পারবেন। এ সময় পুলিশের সামনে পড়লে তাদেরকেও যৌক্তিক কারন ব্যাখ্যা করতে হবে। উল্লেখ্য করোনা ভাইরাসের মহামারী পরিস্থিতির জন্যে অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেকে তাদের রোগীদের সঙ্গে নির্ধারতি এপোয়েন্টমেন্ট বাতিল করেছেন। জরুরি প্রয়োজনে তাদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চলে যেতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারনে বাড়িতে আটকা থাকায় বেকারত্ব সহ নানান মানসিক অবসাদগ্রস্তদের ডমেস্টিক ভায়োলেন্স সহ নানান মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে। এদেরকে বিশেষ মানসিক চিকিৎসা সহায়তা দিতে রবিবার বিশেষ স্বাস্থ্য সহায়তা প্যাকেজ ঘোষনা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। যারা এখন এসব সমস্যায় আছেন তারা বাড়িতে বসেই ফোনে, ভিডিও কল, ফেসটাইমেও ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ নিতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়ার পারিবারিক চিকিৎসক জিপিরাও এখন টেলিফোনে তাদের নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছেন। এর সবকিছুর মূল কথা স্টে হোম। বিশ্বজুড়ে এই বাড়িতে থাকার নীতি করোনা মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে বিশেষ কাজ দিচ্ছে। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৬৯ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১৬ জন। আক্রান্তদের ২৩ জনের অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। ২২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগ নিউসাউথ ওয়েলস রাজ্যবাসী। সিডনি এই রাজ্যের রাজধানী। এখন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসছেন তাদেরকে বাধ্যতামূলক কোয়ারিন্টানে ১৪ দিনের জন্যে হোটেলে থাকতে হচ্ছে। এই কোয়ারিন্টিন সময়ে নিরাপদ প্রমান হলে তারা বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন। রবিবার যারা দেশে ফিরেছেন তাদেরকে বিমান বন্দর থেকে পুলিশের তদারকিতে বাসে করে নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। রবিবার সরকারি একটি গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত উদ্বিগ্ন নাগরিকদের জন্যে বিশেষ স্বস্তিদায়ক হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি ছাত্র সহ যারাই এখানে ভাড়াবাড়িতে থাকেন তাদের জন্যেও স্বস্তিদায়ক। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ায় বাড়িভাড়া দিতে হয় সপ্তাহ ভিত্তিতে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাড়াটেরা রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের মাধ্যমে প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে বাড়িভাড়া দেন, অথবা ব্যাংক একাউন্ট থেকে ডাইরেক্ট ডেবিট করা হয়। প্রচলিত আইন অনুসারে কারো বাড়িভাড়া বকেয়া পড়লে বাড়িওয়ালা বা রিয়েল এস্টেট এজেন্ট পুলিশের সাহায্য নিয়ে সংশ্লিষ্ট ভাড়াটেকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে পারেন। করোনা পরিস্থিতিতে যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের সিংহভাগ বাড়িভাড়া নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তায়। রবিবার সরকার থেকে এমন ভাড়াটেদের বাড়িওয়ালা বা রিয়েল এস্টেট এজেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বকেয়া ভাড়ার জন্যে এখন যাতে কাউকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা না হয় সেই নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারনে সিডনির কারোয়ান বাজার বলে বাংলাদেশিদের কাছে পরিচিত সিডনি মার্কেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সস্তায় বাজার করার জন্যে পাইকারি এই কাঁচা বাজারটি প্রতি শনিবার বাজার করার জন্যে, জুতো-কাপড়চোপড় সহ নানাকিছু কেনাকাটার জন্যে রবিবার অনেক পরিবারের জন্যে সিডনি মার্কেট বিশেষ জনপ্রিয় ছিল। বাজার কর্তৃপক্ষ বলেছে আপাতত এক মাস সময়ের জন্যে তারা বাজারটি বন্ধ করেছে। এক মাস পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তি সিদ্ধান্ত নেবে। উল্লেখ্য সিডনি মার্কেটে প্রতি শনিবার দোকানিই থাকেন পাঁচশ’র বেশি। ক্রেতা-বিক্রেতার বিপুল সমাবেশের জন্যে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে এটি খোলা রাখাটাই সরকারি নীতিমালার পরিপন্থী। লকডাউন বলতে যা বোঝায় তা এখনও অস্ট্রেলিয়ায় ঘোষনা করা হয়নি। ট্রেন-বাস-শপিংমল সবই এখনও চালু-খোলা আছে। কিন্তু মানুষের চলাফেরা কমে গেছে। ট্রেন-বাসের বেশিরভাগই এখন প্রায় ফাঁকা। করোনা মহামারীর আতঙ্কের মধ্যে আড়াই কোটি মানুষের অস্ট্রেলিয়া মহাদেশটির এখন পর্যন্ত বড় অর্জনটি হলো এখন পর্যন্ত এর দুই লাখের বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ৯৮ শতাংশের বেশি ফলাফল এসেছে নেগেটিভ। কল্যান রাষ্ট্রটি এর নাগরিকদের জন্যে নানান অর্থনৈতিক স্টিমুলেজ প্যাকেজ ঘোষনা করায় পরিস্থিতি নিয়ে অনেকের উদ্বেগও কম।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা