পর্দায় অভিনয়শিল্পীরা কতই না রঙিন। বাস্তবে কিছুটা সাদাকালো তাঁদের জীবন। কেননা, অন্য দশজন সাধারণ কর্মজীবী মানুষের মতো নয় তাঁদের পেশাটি। এ মাসে ২০ দিন শুটিং করেছেন বটে, পরের মাসে কাজের ডাক কি আসবে—সেটা জানেন না অনেকেই। গুটি কয়েক শিল্পীকে বাদ দিলে বেশির ভাগ শিল্পীর ক্ষেত্রে রয়েছে এ অনিশ্চয়তা। পেশার নিশ্চয়তা না থাকলে সৃষ্টিশীল কাজ কী করে চালিয়ে নেওয়া যায়?
কাজ না থাকলে কাজ পাওয়া যাবে, এমন নিশ্চয়তা তাঁদের দেওয়া যাচ্ছে না এখনো। অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা কীভাবে হবে? কিংবা কীভাবে চলবে পরিবার—এ নিয়ে ভাবছে না কেউ। সরকারের পক্ষ থেকে এ পেশার কোনো স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি এখনো। ফলে শেষ বয়সে গিয়ে আবাসন, পেনশনের সুযোগ নেই। ব্যাংকঋণ নিয়ে কিছু করার সুযোগও নেই। সম্প্রতি কাজ কমে যাওয়া এ সমস্যাগুলো তীব্রভাবে ভাবাচ্ছে অভিনয়শিল্পীদের।
অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘সবাই যেন নিয়মিত কাজ পান, শুটিং চলাকালে বিড়ম্বনা এড়াতে পারেন, শিল্পীদের স্বাস্থ্য ও অন্য দিকগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। শেষ বয়সে তাঁদের জন্য অবসর ও উৎসব ভাতা চালু করার ব্যবস্থা নিয়েও কাজ করছি আমরা।’ এসব কাজে সরকারের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শিল্পীরা বেকার হয়ে যাচ্ছেন, কেননা নাটকের গল্পে চরিত্র কমে আসছে। অনেক অভিনয়শিল্পী মনে করেন, পারিবারিক ও সামাজিক চরিত্রগুলো কমে যাওয়ার মূল কারণ নাটকের বাজেট কমে যাওয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিনেতা বলেন, ‘কাজ করে মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছি না। যাই, কাজ করি, টাকা নিয়ে ফিরে আসি। শেষ কবে কাজ করে আনন্দ পেয়েছি, সেটা বলতে পারব না।’
সংকট থেকে বেরিয়ে আসা প্রসঙ্গে আহসান হাবিব বলেন, ‘কলকাতায় পে-চ্যানেল করার পর থেকে টিভির অনুষ্ঠানগুলোর মানের উন্নতি হয়েছে। আমাদেরও সেটা করতে হবে। যে ৩০০ টাকা দর্শক দিচ্ছেন, সেটার একটা অংশ চ্যানেলগুলো পেলে অনুষ্ঠানের মান ভালো হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অভিনয়শিল্পী ওয়াহিদা মল্লিক জলি বলেন, ‘শিল্পীরা যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না। যোগ্যতা থাকার পরও অনেকে দিনের পর দিন বসে থাকছেন। তাঁদের কাজের নির্ধারিত কোনো সময় নেই, পারিশ্রমিকের নির্দিষ্ট অঙ্ক নেই। আবাসন ব্যবস্থা বা পেনশনের মতো সুবিধা তো নেইই। শেষ বয়সে শিল্পী যখন কাজ করতে পারবেন না, তখন কীভাবে জীবন চালাবেন, সেটা নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। সরকার এই পেশাটিকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় আমরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারি না। নারী শিল্পীদের সঙ্গে পুরুষের সম্মানীর বৈষম্য রয়েছে।’
আহসান হাবিব বলেন, ‘সরকার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় আমাদের একটা কল্যাণ তহবিল করা দরকার। তাহলে সংকটকালে একটা নীতিমালার আওতায় আমরা শিল্পীদের সহযোগিতা করতে পারব। অনেক শিল্পী দরিদ্র না হয়েও সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা নিচ্ছেন। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে সহযোগিতাগুলো যেন শিল্পী সংঘের মাধ্যমে করা হয়। কারণ, আমরা জানি যে কার আর্থিক অবস্থা সাহায্য নেওয়ার মতো।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিল্পী জানিয়েছেন, এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিচালকেরা আর অভিনয়শিল্পী বাছাই করতে পারছেন না। এ কাজটি করে দিচ্ছে চ্যানেল। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা করে এজেন্সিগুলো।
অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহিদুজ্জামান সেলিম বলেছেন, ‘আমরা চাই অভিনয়শিল্পীদের কাজের সমবণ্টন হোক। ১০ বছর আগে টিভি নাটকের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ হতো, এখন সেটাও যদি হয়, তাহলেও মানসম্মত কাজ করা সম্ভব।’
NB:This post is copied from Prothomalo.com
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা