অনলাইন ডেস্ক
এ পরিস্থিতিতে আগামী ছয় মাস আইটি কোম্পানিগুলোর টিকে থাকাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি ২০২৩ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে বছরে যে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আছে, তা পূরণ নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
যদিও লক্ষ্য পূরণে সরকার এরই মধ্যে নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কতটুকু সফল হবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)’র তথ্যমতে, ২০১৫ সালে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রফতানি আয় ছিল ৪৪৪ মিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার। মূলত এই বছর থেকেই আইটি খাতকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৭ সালে তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে আয় আসে ৮০০ মিলিয়ন ডলার; ২০১৮ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ১ বিলিয়ন এবং ২০১৯ সালে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার আয় আসে।
বেসিসের তথ্য মতে, দেশ থেকে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ২৮ লাখ (২ দশমিক ৮ মিলিয়ন) ডলারের সফটওয়্যার রফতানি হয়। ২০০৩ সালে দেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সফটওয়্যার রফতানি শুরু হয়। পরে ধারবাহিকভাবে প্রতিবছরই সফটওয়্যার রফতানিতে আয় বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছিল, রফতানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে আইটি খাত। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সেই ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে।
এদিকে করোনাকালীন ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার ১৯টি প্যাকেজে ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, যা দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এ পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বেসিস।
অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। অনেকে বাসায় বসে অফিস করছেন। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে ও বিশ্ববাজারে সফটওয়্যার ও আইটিখাতের কাজ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। রফতানি চাহিদা কমে গেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। করোনা
পরিস্থিতিতে ব্যবসার মন্দা কমপক্ষে আরও ৬ মাস থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এতে স্থানীয় আইটিখাতে কমপক্ষে ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ( স্থানীয় বাজারে ৫০০ মিলিয়ন ও রফতানিতে ৮০০ মিলিয়ন) ক্ষতি হতে পারে, যা টাকার অংকে ১১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এই ক্ষতি বিবেচনায় বেসিস সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছে।
অন্যান্য ব্যবসা বন্ধ থাকাই তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে বেসিস সভাপতি বলেন, ‘খাতটি অন্যান্য ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আইটি খাত প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকে। এ কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু না হওয়া পর্যন্ত এই খাত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবে না। এই সময়টা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পর খাতটিতে নতুন সুযোগ আসবে। নতুন নতুন সফটওয়্যারের প্রয়োজন পড়বে, কাজের ক্ষেত্র বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া দীর্ঘসময় এই অবস্থা চলতে থাকলে খাতটিতে জনবল ধরে রাখা সম্ভব হবে না। আইটি কর্মীরা অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হবে; যা খাতটির জন্য বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। সেইসঙ্গে অর্থায়নের সমস্যা তো সব সময় আছেই।’
বেসিসের সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ৮০ শতাংশ কাজ বন্ধ আছে। এখনও আমরা স্বাভাবিক কাজে ফিরতে পারিনি। এভাবে যদি আগামী ছয় মাস যদি টিকে থাকা যায়, তাহলে অবস্থার উত্তরণ ঘটবে। তাই এই সময়টা পার করতে হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ বছরে যে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা, সেটার চেয়ে হয়তো বেশি হবে। কারণ অনেক নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে, টেলিমেডিসিন সফটওয়্যারের চাহিদা তৈরি হচ্ছে; আগে যেগুলোর বাজারই ছিল না। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ফলে আগামী ছয় মাস কোম্পানিগুলোকে টিকে থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, বেতন দিয়ে কর্মী ধরে রাখাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ , ‘টিকে থাকতে অনেককেই এখন খরচ কমাতে হবে। অফিস ভাড়াও এখন বার্ডেন হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সক্ষমতা তুলে ধরতে হবে।
তিনি বলেন, চীন থেকে অনেক আইটি কোম্পানি স্থানান্তরিত হচ্ছে। জাপান এরই মধ্যে তাদের কোম্পানিগুলোর ফ্যাক্টরি চীন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। সেসব কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হলে অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে জাপান সরকার। এখন এই কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে। এখানে বিনিয়োগ করলে, বাংলাদেশে ফ্যাক্টরি হলে, অনেক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এক্ষেত্রে সরকারসহ সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।’ fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা