পর্ব-১
সড়কে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে অনেকদিন ধরে। একেকটি সড়ক যেন একেকটি মৃত্যুফাঁদ। ঘর থেকে বেরিয়ে নিরাপদে ঘরে ফেরার চিন্তাও যেন অচিন্তনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রকম সময়ে মানুষের ভরসার জায়গা ছিল রেলপথ। আর যাই হোক এখানে সড়কের মতো হুট করে প্রাণ হারানোর ভয় ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
কিন্তু সেই ভরসার জায়গাটিও বোধ হয় ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা-দুর্ঘটনা সম্ভবত সেটাই জানান দিচ্ছে। বর্তমানে রেলপথে দুর্ঘটনার প্রবণতা এতটাই বেড়েছে যে এতে অনেকেরই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে।
প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে যত মানুষ প্রাণ হারায়, বিশ্বের খুব কম দেশেই এমনটা হয়। এ ছাড়া আমাদের হাতে কোনো তৃতীয় অপশনও নেই। সড়ক-মহাসড়ক-নৌপথ সর্বত্রই ফাঁদ পেতে আছে মৃত্যু।
এই ধারায় সাম্প্রতিক সময়ে রেলেও যেন দুর্ঘটনার হিড়িক পড়েছে। দেশের কয়েকটি দৈনিকের প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে এদেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার ভয়াবহ চিত্র।
শুধু আগস্ট মাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে দেশে পনেরোটি ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনে সাতটি এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনে আটটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। আর বিগত সাড়ে পাঁচ বছরে ১ হাজার ৮টিরও বেশি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৩০ জন।
বেসরকারি হিসাবে গত ৮ বছরে রেলের ছোট-বড় দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৪০০। এতে প্রাণ হারায় প্রায় আড়াইশ যাত্রী।
২৩ জুন রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে প্রাণ হারায় পাঁচজন। আহত হয় শতাধিক যাত্রী। এ ছাড়া ছোটখাটো লাইনচ্যুতির ঘটনা তো আছেই।
সর্বশেষ ১৪ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রংপুর এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন ও ৭টি বগি লাইনচ্যুত হলে তাতে আগুন ধরে আহত হয় ২৫ জন। এর দুদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে ১৬ জন প্রাণ হারায়। আহত হয় শতাধিক যাত্রী।
বাহন হিসেবে আমাদের দেশে রেলের যাত্রা শুরু হয় উনবিংশ শতাব্দীতে। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কুষ্টিয়ার জগতী এবং চুয়াডাঙ্গার দর্শনার মধ্যে প্রায় সোয়া ৫৩ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইনের মাধ্যমে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরও কিছুদিন পরে আরও প্রায় ১৫ কিলোমিটার মিটারগেজ লাইন স্থাপন করা হয়।
বেঙ্গল আসাম রেলওয়ে কোম্পানি ছিল এর তত্ত্বাবধায়ক। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই ব্রিটিশ রেলওয়ে কোম্পানি বড় মাত্রায় রেলরুটের সম্প্রসারণ ঘটায়। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা এবং লাকসাম ও চাঁদপুর রেলরুটের আওতায় আসে।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর রেল ব্যবস্থাপনারও আমূল পরিবর্তন ঘটে। ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে’ নাম পরিবর্তন করে পুনঃনির্ধারণ করা হয় ‘পূর্ব-পাকিস্তান (তদানীন্তন) ইস্টার্ন রেলওয়ে’।
বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের রেলপথের দৈর্ঘ্য ২,৮৫৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে রেলের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের ৬৬০ কিলোমিটার ব্রডগেজ (ডাবল) ট্র্যাকের, বাকিটুকু পূর্বাঞ্চলীয় জোনের মিটার গেজ (সিঙ্গেল) লাইনের।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত অর্ধশতাব্দীতে বাংলাদেশ রেলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংযোজন হচ্ছে ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতুর উদ্বোধন। যমুনা নদীর ওপর নির্মিত এ সেতু রেলের পূর্বাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটায়। পূর্ব ও পশ্চিমে সরাসরি স্থাপিত হয় রেল যোগাযোগ। (শেষ পর্ব ১১ ডিসেম্বর)।
Like & Share our Facebook Page: Facebook
লেখক: সিনিয়র সাব এডিটর, লাল সবুজের কথা Email: barman@lalsobuzerkotha.com
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা