অনলাইন ডেস্ক
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘মহামান্য হাইকোর্ট যে আস্থা নিয়ে, ইভ্যালি বিষয়ক আপনার উপর পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন আপনি স্পষ্টতই সেই আস্থা ও বিশ্বাসের স্থানকে অবমূল্যায়ন করে আপনার ওপর নির্দেশিত চৌহদ্দী ছাড়িয়ে এখতিয়ার বহির্ভূত অসত্য, মনগড়া, ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করে চলেছেন। আপনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের একজন সাবেক বিচারপতি হিসেবে আপনার উপর জনমানুষের প্রত্যাশাও ব্যাপক বলে মনে করা হয়। আপনার এই ধরনের অসত্য, মনগড়া, ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করেছে এবং সারা দেশব্যাপী আপনার বিরুদ্ধে দেশের আপামর জনতা আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে এবং করছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ‘আইনি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমি আমার মোয়াক্কেলদের মাধ্যমে নির্দেশিত হয়ে আপনাকে অনুরোধ করছি যে আপনি ইভ্যালি, ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে যে অসত্য, ভিত্তিহীন, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন আগামী ৭ দিনের ভেতর নিঃশর্তভাবে প্রকাশ্যে লিখিতভাবে প্রত্যাহার করে নেবেন। এসব মন্তব্যের জন্য একইভাবে প্রকাশ্যে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইনে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয়ভাবেই যথোপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আদালত কর্তৃক গঠিত ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক গত ২৬ অক্টোবর বলেছিলেন, বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল হাজার কোটি টাকা দুবাইয়ে পাচার করেছেন। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁর স্ত্রী তথা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও শ্যালিকা সাবরিনা নাসরিন।
সেদিন তিনি জানান, টাকার সুনির্দিষ্ট পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা যায়নি। ইভ্যালির বর্তমান অবস্থা, দায়দেনা, সম্পদের পরিমাণ নিরীক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে ১৫ দিনের মধ্যে তা নিরীক্ষকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
ইভ্যালির বর্তমান অবস্থা, দায়দেনা, সম্পদের পরিমাণ, পরিচালনার প্রক্রিয়া, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে গত ১৮ অক্টোবর আদালত ইভ্যালির ব্যবস্থাপনার জন্য এই কমিটি গঠন করে। ইভ্যালির টাকা উদ্ধারে কাজ করবে এই কমিটি। ধানমণ্ডিতে ইভ্যালির কার্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। এতে বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, অন্য সদস্য স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ ও কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রথম বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে। আমাদের তদন্তকাজে সফল হতে এগুলো কাজে আসবে।’ তিনি বলেছিলেন, ‘এখানে দুটি সিন্দুক ও কয়েকটি আলমারির সন্ধান পেয়েছি। তালাবদ্ধ এই সিন্ধুকগুলোতে অনেক মূল্যবান সম্পদ রয়েছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।’
ইভ্যালির বিপুল সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছিলেন, ‘এখানে জনগণ হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে। প্রতারিত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের আইনি দায়িত্ব। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে।’
বিচারপতি মানিক বলেছিলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, ইভ্যালির প্রত্যেক কর্মীর কাছে একটি করে ল্যাপটপ ছিল; তারা এসব ল্যাপটপ নিয়ে চলে গেছে। সেগুলো উদ্ধার করা হবে। কারণ এগুলো ইভ্যালির সম্পদ। এর বাইরে অনেক সম্পদ আছে; সেসব সম্পদ উদ্ধার করব। চেকের একটি লিস্ট পেয়েছি। এগুলো যাদের কাছে আছে, তাদের ডাকব। যদি না আসে, প্রয়োজনে যেভাবে আসে, সেভাবে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুনে ইভ্যালির ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে উঠে আসে ইভ্যালির চলতি সম্পদের পরিমাণ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির দেনার পরিমাণ ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার মামলায় বর্তমানে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন কারাগারে রয়েছেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সব নথি তলব করেন হাইকোর্ট। ১১ অক্টোবরের মধ্যে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রারকে আদালতে সব নথি দাখিল করতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ে নথি দাখিল করলে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না তা জানতে চান আদালত। এজন্য একটি নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিবাদীদের নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। ইভ্যালির একজন গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন আদালত।
পণ্য কেনার পাঁচ মাস পরেও সেটি হাতে না পাওয়ায় এক গ্রাহক ইভ্যালি অবসায়ন চেয়ে একটি আবেদন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, ই-ক্যাব, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশন ও ইভ্যালিসহ ১১ জনকে বিবাদী করা হয় সেই আবেদনে।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা